ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউজিসি কর্মশালায় উপাচার্যদের বিভিন্ন সুপারিশ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা হতে যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে হতে যাচ্ছে অভিন্ন নীতিমালা। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই নিয়মে হবে নিয়োগ ও পদোন্নতি। নীতিমালা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বুধবার রাজধানীতে আয়োজিক এক কর্মশালায় একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক নিয়ম কার্যকর থাকায় নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে উল্লেখ করে যোগ্য শিক্ষক নির্বাচনে লিখিত পরীক্ষা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন উপাচার্যরা। একই সঙ্গে শিক্ষকদের যোগ্যতা ভিত্তিক পদমর্যাদা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছেন, দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। উপাচার্যদের সুপারিশের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এজন্য সবার মতামত নেয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণীত হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই নিয়মে নিয়োগ ও পদোন্নতি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষা দিতে হবে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি/পদোন্নয়ন নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় উপাচার্যরা তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশেষ অতিথি ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ইউজিসির সদস্য ড. মোঃ আখতার হোসেন। কর্মশালায় ছিলেন ৪০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্ট্রি লেভেলে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। নতুবা এটি নিয়ে নতুন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি অভিন্ন নীতিমালায় শিক্ষকদের প্রকাশনার বিষয়টি অস্পষ্ট রয়েছে, সেটি সংশোধন করতে হবে। ভাল মানের শিক্ষকদের গবেষণা ও তার পাঠদানের ওপর ইনসেন্টিভ দেয়ার আহ্বান জানান। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, বিজ্ঞান ও মানবিক সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে জিপিএ- ৩ দশমিক ৫ চাওয়া হয়েছে। এটি সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে তিনি যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর দাবি জানান। শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন বিষয়ে কোন তারতম্য রাখা যাবে না। যোগ্যতা ভিত্তিতে তাদের গ্রেড বা পদমর্যাদা প্রদান করতে হবে। আমরা বেতন-ভাতা বাড়ানো দাবি করছি না, আমাদের সম্মানের স্থানটি নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ২০২০ সাল থেকে অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ-পদোন্নতি কার্যকর করার আহ্বান জানান তিনি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, অভিন্ন নীতিমালায় বাস্তবায়ন করতে হলে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নির্বাচন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে প্রার্থীকে ক্লাস নেয়ার দক্ষতার বিষয়েও পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। যে সব শিক্ষকরা পাঠ্যপুস্তক লিখেন ও গবেষণা কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রধিকার দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সোবাহান বলেন, অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালা বাস্তবায়ন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে জিপিএ-৯ করা প্রয়োজন। তবেই ভাল শিক্ষক পাওয়া যাবে। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি-এইচএসসি সার্টিফিকেট মূল্যায়ন না করে অনার্স-মাস্টার্স সাটিফিকেট মূল্যায়ন করা দরকার। তিনি আরও বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরে অধ্যাপক হয়ে গেছেন, অনেকে আবার একটি প্রকাশনা দিয়ে বার বার পদোন্নতি পেয়েছেন এমন ঘটনাও রয়েছে। তাই শিক্ষকদের কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত অভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোনায়েম বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মাস্টার্স সমমান পাঁচ বছরের কোর্স সম্পূর্ণ করার কথা বলা হলেও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৫ থেকে ৬ বছর মেয়াদে মাস্টার্স কোর্স করা হয়। তাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি সংশোধন করা প্রয়োজন। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা মাস্টার্স সমমান করা হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকতায় না এসে বিদেশে চলে যাবে। এ কারণে সেটি অনার্স পাস করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ইংলিশ মিডিয়াম থেকে ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল করা শিক্ষার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কি হবে তা অভিন্ন নীতিমালায় উল্লেখ করা প্রয়োজন। তবে অনুষ্ঠানে উপাচার্যদের কেউ কেউ আবার অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার সমালোচনাও করেছেন। তারা বলেন, এটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত চিন্তার স্থানটি হারিয়ে যাবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে। জেলা পর্যায়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভাল মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে জটিলতা সৃষ্টি হবে। অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার কারণে উচ্চশিক্ষাকে একটি স্থানে আবদ্ধ হয়ে পরবে। যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি অভিন্ন পদ্ধতিতে করা সম্ভব হয়নি, সেখানে অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ বাস্তবায়নে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে তারা মন্তব্য করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি/ পদোন্নয়ন নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। আলোচনার মাধ্যমে সবার মতামত যাচাই ও তুলনা করা সম্ভব হয়েছে। উপাচার্যগণ অভিজ্ঞতার আলোকে মতামত দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে এ বিষয়ে গঠিত কমিটি নীতিমালা চূড়ান্ত করবে। এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং যোগ্য প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
×