ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীন টির আড়ালে আসছে নতুন মাদক

প্রকাশিত: ০৮:১০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গ্রীন টির আড়ালে আসছে নতুন মাদক

গাফফার খান চৌধুরী ॥ হালের আতঙ্ক নতুন মাদক নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস বা এনপিএসের আরও একটি চালান জব্দ করা হয়েছে। এবার ১৬শ’ কেজি এনপিএস জব্দ হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অভিযানে। এই নিয়ে এনপিএসের চারটি চালান জব্দ করা হলো। বাংলাদেশে নতুন এই মাদকটি ব্যবহার করার কোন তথ্য মেলেনি। তবে বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে এই মাদকটি বিদেশে পাচার হওয়ার তথ্য মিলেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কতটি চালান বিদেশে গেছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য মেলেনি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফর ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী অন্তত সাতটি চালান বাংলাদেশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছে। এতদিন মাদকগুলো দেশে জনপ্রিয় গ্রীন টির প্যাকেটে করে আসত। ফলে সহজেই চালানগুলো পার পেয়ে গেছে। দেশে মাদকটির প্রবেশ ঠেকাতে আমদানি করা গ্রীন টির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন সর্বনাশা এই মাদক সেবনে সেবনকারী আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে থাকে। মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি সদর দফতরে সংস্থাটির উপমহাপরিদর্শক শাহ আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ব্যবসায়ীরা কৌশলে দেশে নতুন মাদক এনপিএস আনছে। মাদকটি দেখতে হালে দেশে খুবই জনপ্রিয় গ্রীন টির মতো। বিদেশ থেকে গ্রীন টি আমদানি হচ্ছে হরহামেশাই। গ্রীন টি আমদানি যেহেতু বৈধ, তাই গ্রীন টির প্যাকেটে করে গ্রেফতার এড়িয়ে মাদক মাফিয়ারা নিরাপদে মাদকটি দেশে আনছে। সম্প্রতি বিদেশ থেকে আমদানি করা গ্রীন টির উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, যে ঠিকানায় গ্রীন টি হিসেবে এনপিএসগুলো আমদানি করা হয়েছে, সেসব ঠিকানার যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। মাদকগুলো পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আসায় কে পাঠিয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য মেলেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ভাষ্য, ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে জিয়াদ মোহাম্মাদ ইউসুফ নামে এক ব্যক্তি ঢাকায় এনপিএসের একটি চালান পাঠায়। সেটি পাঠানো হয় এদেশের নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজের নামে। ইথিওপিয়া থেকে কয়েকটি দেশ ঘুরে চালানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গবেষণা ও নিরোধ শাখার মতে, ইয়াবার চেয়েও ভয়ঙ্কর এনপিএস। এটিকে বাংলায় খাত বলা হয়ে থাকে। ঢাকায় এই মাদক সেবনকারীদের সম্পর্কে কোন তথ্য মেলেনি। তবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশে এই মাদকের ব্যবহার তুলনামূলক বেশি। এক ধরনের গাছ থেকে এনপিএস তৈরি হয়। নতুন এই মাদক চায়ের পাতার গুঁড়ার মতো। পানির সঙ্গে মিশিয়ে তরল করে সেবন করা হয়। সেবনের পর মানবদেহে এক ধরনের সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। বহু পুরনো মাদক আফিম ও ভাংয়ের নেশার ধরনের সঙ্গে মিল আছে মাদকটির। দীর্ঘদিন সেবন করলে সেবনকারীর মধ্যে চরমভাবে একাকীত্ব ভর করে। মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। আসক্ত ব্যক্তি মানসিক বৈকল্যে ভুগতে থাকেন। সামাজিকভাবে নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করে থাকেন। কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। বেঁচে থাকা অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। এক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের তথ্য মতে, এনপিএস তৈরির উপাদানগুলো বৈধ হলেও এর ভয়াবহতার কারণে অনেক দেশ স্থায়ীভাবে এনপিএস নিয়ন্ত্রণ করছে।
×