ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিদের সামনে ২০১৪ এশিয়া কাপের আতঙ্কও ঘুরছে!

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মাশরাফিদের সামনে ২০১৪ এশিয়া কাপের আতঙ্কও ঘুরছে!

মিথুন আশরাফ ॥ ইনজুরি, ইনজুরি এবং ইনজুরি! তাতে করে ২০১২ সালের এশিয়া কাপে রানার্সআপ হওয়া বাংলাদেশ দল পরের আসরেই (২০১৪ এশিয়া কাপে) খাদে পড়ে গেছে। এবারও ক্রিকেটারদের ইনজুরি ছড়াছড়ি লেগে গেছে। তাতে করে বাংলাদেশ দলের আশপাশে যেন ঘুরছে ২০১৪ এশিয়া কাপের আতঙ্ক! এশিয়া কাপে ২০১২ সালের আগে কখনই শক্তিশালী দল হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১২ সালের আগে বেশিরভাগ আসরেই গ্রুপপর্বে দম ফুরিয়েছে। দুইবার দ্বিতীয়পর্বে খেলেছে। তাও গ্রুপপর্ব থাকাতে। সেখানে একটি দুর্বল দল থাকাতে। একটি ম্যাচ জিতেই তাতে দ্বিতীয়পর্বে খেলা গেছে। কিন্তু ২০১২ সালের এশিয়া কাপ থেকেই বাংলাদেশ দল যেন নিজেদের মেলে ধরেছে। প্রথমবারের মতো ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। রানার্সআপ হয়েছে। এরপর ২০১৪ সালেও বেহাল দশা হয়েছে। একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি। তা হয়েছে ইনজুরির জন্যই। তামিম ইকবাল ইনজুরিতে খেলতে পারেননি। মাশরাফি বিন মর্তুজাও খেলতে পারেননি। মুশফিকুর রহীম ইনজুরি থাকলেও খেলেছেন। এমন বেহাল অবস্থাই হয়েছিল তখন। তাতে করে দেশের মাটিতে হওয়া এশিয়া কাপে টানা চার ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। এমনকি প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ খেলতে নামা আফগানিস্তানের কাছেও হারতে হয়েছে। এবার ১৪তম এশিয়া কাপ হবে। বাংলাদেশ খেলবে নিজেদের ১৩তম এশিয়া কাপ। ১৯৮৪ সালে প্রথম এশিয়া কাপ ছাড়া সবকটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। টানা ৬ এশিয়া কাপে গ্রুপপর্বের গ-িই অতিক্রম করতে পারেনি। লীগপর্বে যে খেলা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ দলও ততটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। ২০০৪ সালে এসে যখন গ্রুপপর্বে খেলা হয়, তখন দ্বিতীয়পর্বে খেলার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ২০০৪ ও ২০০৮ সালের এশিয়া কাপে দ্বিতীয়পর্বে খেলে। এই দুইবারই গ্রুপপর্ব পেরিয়ে সুপারফোর হয়। বাংলাদেশও তাতে খেলে। তা সম্ভব হয়, তিন দলের একটি গ্রুপে বাংলাদেশের চেয়েও দুর্বল দল পড়াতে। ২০১০ সালে আবার প্রথমপর্ব খেলেই শেষ হয় বাংলাদেশের এশিয়া কাপ। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে অন্য বাংলাদেশকে দেখার মিলে। এবার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের কাছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ফাইনালে হেরে রানার্সআপ হয়। এরপর ২০১৪ সালে গিয়ে আবার দুর্দশা হয়। এবার ইনজুরির ছড়াছড়িতে বাংলাদেশের কাহিল অবস্থা হয়। ২০১৬ সালে গিয়ে আবার বাংলাদেশ দল রানার্সআপ হয়। এবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতের কাছে হারে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো টি২০ ফরমেটে হয় এশিয়া কাপ। দুই বছর পর ঘুরে এসেছে এশিয়া কাপ। এবার হবে ওয়ানডে ফরমেটে। এবার বাংলাদেশ দলের আশা আছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। কিন্তু তা কী সম্ভব? উল্টো না আবার ২০১৪ সাল ফিরে আসে? সেই সময় ইনজুরিতে তামিম, মাশরাফি খেলতে পারেননি। মুশফিক খেললেও ছন্দ হারিয়েছিলেন। এবার ইনজুরিতে আছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিব ও শান্তর যে আঙ্গুলে চোট, তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত খেলা হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তামিমকে নিয়ে আছে সংশয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৫ সেপ্টেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতেই তামিমকে না পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আঙ্গুলে চিড় ধরেছে। সেই চিড় কী আর এত দ্রুত সেরে যাবে? যে অবস্থা বোঝা যাচ্ছে, তাতে করে ২০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতেও তামিমের খেলা নিয়ে আছে সংশয়। যদিও তামিমের আশা শুরু থেকেই খেলতে পারবেন। কিন্তু ভিসা জটিলতায় দুবাই পৌঁছাতে দেরি হওয়াতে অনুশীলন করতেও পারছেন না। অনুশীলন না করলে নিজের অবস্থাও বোঝা কঠিন! আর তামিম না খেললে, সাকিব ও শান্তও যদি পুরোপুরি চোটমুক্ত না থাকেন তাহলে বিপদেই পড়বে বাংলাদেশ। সেই বিপদ না আবার ঘাড়ে চেপে বসে। ২০১৪ সালকেই না আবার ফিরিয়ে আনে? সেই সম্ভাবনাই যে বাংলাদেশ দলের আশপাশে ঘুরছে! বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাইতো চ্যাম্পিয়ন হতেই নামবেন, সেই আশা ব্যক্ত করতে পারেননি। তিনি বাস্তবে থেকে বলেছেন, ‘সম্ভাবনা কতটুকু এভাবে আসলে বলা যায় না। দলগুলো যদি দেখেন, তাহলে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই। হয়তো ভারত অনেক ভাল দল। পাকিস্তান তাদের ঘরের মাঠে খেলবে। কিছুটা বাড়তি সুবিধা তারা পাবে। তাদের দলে রিস্টস্পিনার বেশি আছে। তবুও আমার কাছে মনে হয় আমাদের সামর্থ্য আছে তাদের হারানোর। আমরা শুরুটা কেমন করি আর পরের রাউন্ডে যেতে পারি কিনা, সেটা দেখতে হবে। এখানে বিভিন্ন ক্যালকুলেশন আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আমার কাছে মনে হয় আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই।’ সঙ্গে মাশরাফি যোগ করেন, ‘আগে যে টুর্নামেন্ট খেলেছি সেগুলোও কঠিন ছিল। এবারও অবশ্যই কঠিন থাকবে, সিচুয়েশন অবশ্যই কঠিন হবে। আর সেখানে (আরব আমিরাতে) আমরা দল হিসেবে খেলিনি, এটাও একটা পয়েন্ট। অনেক জায়গা আমরায় সফল হয়েছি যেখানে আমাদের সামর্থ্যে অনেক প্রশ্ন ছিল। এমন অনেক ভাল খারাপের মধ্য দিয়েও আমরা সফল হয়েছি। এগুলো আসলে আমার কাছে খুব বড় ইস্যু মনে হয় না। ইস্যু হচ্ছে, আমরা শুরুটা কেমন করছি, আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কেমন খেলছি। আমার কাছে মনে হয় আসন্ন ১৫ তারিখটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা অনেকে টুর্নামেন্ট জেতার কথা বলছেন। আমি আবার এই টাইপ না, আমি এই ধরনের কথা বলতে চাই না। আমি মনে করি আমাদের সামর্থ্য আছে। বাকি দলগুলোর সঙ্গে যদি তুলনা করেন, কন্ডিশন, উইকেট ও কিছু টুকটাক ব্যাপার থাকে, রিস্টস্পিনাররা কেমন ফর্মে আছে, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের থেকে বেটার টিম আছে এই টুর্নামেন্টে। তবে বাকি দলের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। সেই পার্থক্যটা আমরা ভাল ক্রিকেট খেলে পূরণ করতে পারি, আমার কাছে সবকিছুই সম্ভব মনে হয়।’
×