ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপর সেমিতে মালদ্বীপের মুখোমুখি নেপাল

সেমিফাইনালে ভারত-পাকিস্তান মহারণ আজ

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সেমিফাইনালে ভারত-পাকিস্তান মহারণ আজ

রুমেল খান ॥ এক দলের র‌্যাঙ্কিং ৯৬। তারা আবার সাতবারের চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া ফাইনাল খেলেছে ১০ বার। এক কথায় দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল তারাই। আরেক দলের র‌্যাঙ্কিং ২০১। তারা কস্মিনকালেও চ্যাম্পিয়ন হওয়া দূরে থাক, এ পর্যন্ত ফাইনালেও ওঠেনি! বলাই যায়, র‌্যাঙ্কিংয়ের নিরিখে তারাই হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বলতম দল। তবে এই সবল আর দুর্বল দলদুটি যখন মুখোমুখি হয় তখন পেছনে পড়ে যায় সব পরিসংখ্যান। সবকিছু ছাপিয়ে তখন একটি বিষয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে। আর তা হলো ভারত-পাকিস্তান হাইভোল্টেজ ম্যাচ। এই মহারণে ঘটতে পারে যে কোন কিছুই। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি.... যে কোন খেলাতেই এবং পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হলে সেই খেলার আবেদন এবং গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুণে। সাফ ফুটবলও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ দলের সাফ জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে গ্রুপপর্বেই। দর্শকরা স্বভাবতই হয়েছে আশাহত। অনেকেই হয়তো মনস্থির করে ফেলেছেন আর খেলা দেখতে আসবেন না বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। কিন্তু যখনই তারা শুনবেন আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সাফ সুজুকি কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মরণপণ লড়াইয়ে মাঠে নামবে ভারত-পাকিস্তান, তখন তারা কি আর ঘরে বসে থাকতে পারবেন? ধারণা করা হচ্ছে র‌্যাঙ্কিংয়ের তারতম্য থাকলেও দু’দলের মধ্যে লড়াই হবে সমানতালে। কারণ ভারত এবার সাফে পাঠিয়েছে যুব বা অনুর্ধ-২৩ দল। আর পাকিস্তান দলে আছে ড্যানিশ লীগে খেলা চার কোয়ালিটি ফুটবলার। তাছাড়া দৈহিক উচ্চতা এবং শারীরিক সক্ষমতায় তারা অনেকটাই এগিয়ে ভারতীয় দলের চেয়ে। তাছাড়া সহজ গ্রুপে পড়ায় ভারত বলতে গেলে কোন বাধা না পেয়েই সহজেই নিশ্চিত করেছে শেষ চারে নাম লেখানোটা। গ্রুপপর্বে তারা ২-০ গোলে শ্রীলঙ্কা এবং একই ব্যবধানে হারায় মালদ্বীপকে। সেই সঙ্গে হয়ে যায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও। পক্ষান্তরে পাকিস্তানকে সেমিতে আসতে হয়েছে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। গ্রুপপর্বে তারা অনেক ঘাম ঝরিয়ে নেপালকে হারায় ২-১ গোলে। দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশের কাছে ০-১ গোলে হেরে যায় অনেক ভাল খেলেও। তৃতীয় ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অবশেষে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে কনফার্ম করতে হয় সেমিতে খেলা। পরিসংখ্যান এবং শ্রেষ্ঠত্বে পাকিস্তানের চেয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। এ পর্যন্ত দু’দলের মধ্যে লড়াই হয়েছে ২৩ বার। ১৪ বারই জিতেছে ভারত। মাত্র ৩ বার জিতেছে পাকিস্তান। বাকি ৬ ম্যাচ ড্র হয়। গোলসংখ্যায়ও এগিয়ে ভারত (৩৪-১৭)। দু’দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয় ২০১৩ সাফে, কাঠমান্ডুতে। গ্রুপপর্বের ম্যাচে সেবার ১-০ গোলে জিতেছিল ভারতই। এদিকে একই ভেন্যুতে ভারত-পাকিকস্তানের আগে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম সেমিফাইনাল খেলা। বিকেল ৪টায় যাতে একবারের চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ মুখোমুখি হবে নেপালের। নেপাল কখনও সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। এমনকি ফাইনালেও ওঠেনি। তবে এবার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ার হাতছানি দিচ্ছে তাদের। র‌্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য নেপালের (১৬১) চেয়ে ১১ ধাপ এগিয়ে মালদ্বীপ (১৫০)। ১৫ বারের মোকাবেলায় ৭ বারই জিতেছে মালদ্বীপ। ৪ বার জিতেছে নেপাল। বাকি ৪ ম্যাচ ড্র হয়। গোলসংখ্যায় দু’দলের ব্যবধান উনিশ-বিশ, মানে মালদ্বীপ করেছে ২০ আর নেপাল করেছে ১৯ গোল! দু’দল সাফে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০১১ সালে। দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সেবারের আসরে গ্রুপপর্বে দু’দলের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। চলমান সাফে গ্রুপপর্বের ম্যাচে নেপাল প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ২-১ গোলে হেরে হোঁচট খেলেও পরের ম্যাচে ভুটানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশকে নাটকীয়ভাবে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নই হয়ে যায়। অথচ নেপালের সঙ্গে ড্র করলেই বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতো। সেক্ষেত্রে বাদ পড়তো নেপাল! পক্ষান্তরে মালদ্বীপ এবার সেমিতে ওঠেছে নিতান্তই ভাগ্যক্রমে! গ্রুপপর্বে তারা গোলশূন্য ড্র করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। পরের ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় ০-২ গোলে। ফলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের গোল, গোল তফাত, পয়েন্ট, হেড টু হেড... সবকিছুই সমান হয়ে যায়! তখন টুর্নামেন্টের ‘হাস্যকর’ বাইলজ অনুযায়ী তারা টসে জিতে সেমিতে খেলা নিশ্চিত করে। এখন দেখার বিষয় আজকের সেমিতে জিতে ফাইনালে নাম লেখায় কোন্ দুটি দল।
×