ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু সড়ক

বন্ধ হয়নি তিন চাকার গাড়ির দাপট

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বন্ধ হয়নি তিন চাকার গাড়ির দাপট

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১১ সেপ্টেম্বর ॥ সরকারের কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে তিন চাকার বাহনের (থ্রি-হুইলার) দাপট বন্ধ হয়নি। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশের টোকেন নিয়েও মহাসড়কে চলছে সিএনজি চালিত তিন চাকার অটোরিক্সা। আগে চালকদের হাতে পুলিশের টোকেন থাকতো আর এখন অটোতেই লাগানো থাকে একটি স্টিকার। ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন টোকেন লাগানো থাকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইল, বঙ্গবন্ধু সেতু, ভূঞাপুর, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল শহর থেকে এলেঙ্গা, কালিহাতী, ভূঞাপুর, করটিয়া, তারটিয়া, বাসাইল, জামুর্কী-পাকুল্যা, মির্জাপুর থেকে গোড়াই শিল্পাঞ্চল, দেওহাটা, হাটুভাঙ্গা ইত্যাদি এলাকায় দিন-রাত সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত ভ্যান, ভটভটি, নসিমন-করিমন তথা তিন চাকার বাহন (থ্রি-হুইলার) চলাচল করছে। কখনও কখনও ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতায় থ্রি-হুইলারের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অধিকাংশ সময়ই চলাচল থাকছে অবাধ। বিশেষ করে ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এবং রাত ৮টার পর থেকে বিনা বাধায় থ্রি-হুইলার বা কম গতির বাহন যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইল বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) হিসাব মতে জেলায় নিবন্ধিত সিএনজি চালিত অটোরিক্সা রয়েছে প্রায় চার হাজার। অথচ সংশ্লিষ্টদের মতে এ সংখ্যা ন্যূনতম ২৫ হাজার। টাঙ্গাইল পৌরসভার তালিকানুযায়ী দুই শিফটে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা রয়েছে মোট তিন হাজার। অথচ ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা দেখা যায় যত্রতত্র, এর সংখ্যা ন্যূনতম ১০ হাজার বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাও মাঝে মাঝে মহাসড়কে উঠে পড়ছে। বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালকরা জানান, মহাসড়কের পাশ দিয়ে ও বাইপাস দিয়ে পৃথক কোন সড়ক নেই। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে না পারলে তাদের পরিবারের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে উঠতে হয়। মাঝে মাঝে পুলিশ অটোরিক্সা আটকালে ‘টাকা দিয়ে’ রফা করতে হয়। কখনও অটোরিক্সা থানায় নিলে ফিরিয়ে আনতে ন্যূনতম ৮ হাজার টাকা লাগে, তাই সড়কেই পুলিশের সঙ্গে রফা করা ভাল বলে মনে করেন তারা। তাছাড়া সড়কে চলাচলের জন্য সমিতির মাধ্যমে পুলিশের মাসিক চাঁদা তো দিতেই হয়। টোকেনে চলাচলরত নম্বর বিহীন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা মহাসড়ক থেকে আটক হলে ছাড়িয়ে আনতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পুলিশকে দিতে হয়। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালকদের গ্যাস নিতে পাম্পে যাওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। পাম্পে যাওয়ার সময়ও অনেক সময় পুলিশ বাহন আটক করে এবং টাকা ছাড়া তা ছাড়ানো যায়না। মহাসড়কে চলাচলকারী চালকরা আরও জানান, পৌরসভা এমনিতেই লাল ও নীল রঙের দুই শিফটে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালানোর নিয়ন বেঁধে দিয়েছে। তার ওপর যদি মহাসড়ক টুকটাক ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে তাহলে সারাদিনে ১০০ টাকাও পারিশ্রমিক জুটবে না। দু-পয়সা বেশি রোজগার করতে বাধ্য হয়ে তারা মহাসড়কে উঠেন। টাঙ্গাইল জেলা অটোরিক্সা-আটোটেম্পো সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধে সরকারের সঙ্গে আমরাও সহমত পোষণ করি। সেজন্য আমাদের শ্রমিকদের ডেকে মহাসড়কে না উঠার নির্দেশনা দিয়েছি। তিন চাকার বাহনগুলোর মহাসড়ক ব্যবহার বন্ধ করার পাশাপাশি পৃথক সড়ক নির্মাণের দাবি জানান তিনি। টাঙ্গাইল ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম ও হাইওয়ে পুলিশের এলেঙ্গা ফাঁড়ির এসআই রেজাউল একই সুরে জানান, মহাসড়কে কোন প্রকার থ্রি-হুইলার বা তিন চাকার ধীরগতির বাহন চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। ‘ভাত খেলে ভাত পড়ে’- এর মতো ২-১টা থ্রি-হুইলার সড়কে গিয়ে থাকতে পারে। তবে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ দিন-রাত মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে। মহাসড়কে নির্বিঘœ যান চলাচল অব্যাহত রাখতে তারা বদ্ধপরিকর।
×