ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আইনমন্ত্রী বলেছেন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা

কারা আদালতেই খালেদার সব মামলা স্থানান্তরের আবেদন করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কারা আদালতেই খালেদার সব মামলা স্থানান্তরের আবেদন করা হবে

বিকাশ দত্ত ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার পর এবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলাও পর্যায়ক্রমে পুরাতন কারাগারের অস্থায়ী আদালতে স্থানান্তরের আবেদন করা হবে। জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মামলা চলমান রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ আদালত স্থানান্তরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে বলে জানা গেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে সমস্ত মামলা আছে তা পর্যায়ক্রমে পুরাতন কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন করা হবে। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ যদি আদালত স্থানান্তরের জন্য আবেদন করে, তা হলে অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেব। খালেদা জিয়ার মামলাটির পাশাপাশি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটিও একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে শীঘ্রই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা দুটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবে। বিএনপির দুই শীর্ষনেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আসামি হওয়াতে সঙ্গত কারণেই এখন সবার নজর রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও কারাগারের অস্থায়ী আদালতের দিকে। দুর্নীতি, হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় খালেদা জিয়া-তারেক রহমানসহ অন্যদের দুটি আদালতে বিচার চলছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালত স্থানান্তরের জন্য আবেদন করলে নিশ্চয় গুরুত্ব বুঝে ব্যবস্থা নেব। ওখানে (কারাগারে) আদালত স্থানান্তর করেছি নিরাপত্তা ও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিষয় বিবেচনা করেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদক ও সাধারণ মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর জন্য দুদক বা রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। অন্যদিকে চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে সমস্ত মামলা আছে তা পর্যায়ক্রমে পুরাতন কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন করা হবে। তিনি আরও বলেন, ইনশা আল্লাহ শীঘ্রই জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতির মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবে। একুশে আগস্ট মামলার রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেছেন, গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার নিষ্পত্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। আশা করছি অচিরেই মামলার রায় ও আদেশের তারিখ ধার্য্য করতে আমরা সক্ষম হব। এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়ার পর তিনি এখন কারাগারে আটক আছেন। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অর্থদ-ও দেয়া হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী (পলাতক) এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান (পলাতক)। অর্থপাচারের মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদ- ও ২০ কোটি জরিমানা বহাল রাখে হাইকোর্ট। এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা রায় হলেও অন্য চারটি মামলা চলছে। যার মধ্যে রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। এর বাইরে আরও ঢাকাসহ বিভিন্ন আদালতে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও নাশকতার ১০টিসহ মোট ১১ মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার হাজির হওয়ার জন্য আগামী ৭ অক্টোবর দিন ধার্য করেছে আদালত। রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে এ দিন ধার্য করেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগে নড়াইলে মানহানির মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেননি চেম্বার আদালত। চেম্বার জজ আদালত আগামী ১ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছে। নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডব্লিউ) ইস্যু করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক মাহমুদুল কবীরের আদালত এ আদেশ দেন। সেই সঙ্গে বিচারক আগামী ১১ অক্টোবর মামলাটিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ও চার্জগঠন শুনানির তারিখ ধার্য করেন। জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে বুধ ও বৃহস্পতিবার। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামানের আদালতে এই বিচার চলছে। অন্যদিকে নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের বিচার চলছে। আজ বুধবারও রাষ্ট্রপক্ষের আইনী পয়েন্টের ওপর যুক্তিতর্কের দিন ধার্য রয়েছে। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারের নিষ্পত্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। আমাদের প্রত্যাশা অচিরেই মামলার রায় ও আদেশের তারিখ ধার্য করতে আমরা সক্ষম হব। অন্যদিকে চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে সমস্ত মামলা আছে তা পর্যায়ক্রমে পুরাতন কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন করা হবে। তিনি বলেন জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘ ৯ মাস শুনানি বন্ধ ছিল। প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মামলার দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্যেই প্রায় ৯ মাস ধরে শুনানি বন্ধ রয়েছে। “এই অবস্থায় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের এই স্থানে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন নিয়মিতভাবেই মামলার শুনানি হবে। আশা করছি শীঘ্রই মামলাটির বিচারিক কাজ শেষ হবে।
×