ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতারা। তারা বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। প্রতি নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। আইন না থাকায় এবারও একই ধরনের ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বাচন সবার জন্য উৎসব হলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে এটা আতঙ্কের। নির্বাচন এলেই তাদের মধ্যে আতঙ্কের মাত্রা বাড়ছে থাকে। এটা অবসান হওয়া দরকার। আইনের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ‘নির্বাচনকালে সম্ভাব্য সম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ আইনের সংস্কার’ নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এ দাবি জানান। সূচনা বক্তব্যে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহারিয়ার কবির বলেন, ২০০৮ সাল বাদে বিগত সব নির্বাচনগুলোতে কমবেশি সাম্প্রদায়িক সংহিসতার ঘটনা ঘটেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর টানা তিন বছর তা অব্যাহত ছিল। এ বিষয়ে গঠিত কমিশন ওই সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো ১০ হাজার নির্যাতনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করলেও আজ পর্যন্ত তার কোন বিচার হয়নি। একমাত্র পূর্ণিমার ঘটনা ছাড়া। তিনি বলেন, আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে এখনও নির্যাতন অব্যাহত থাকলেও সংখ্যালঘুদের অনেকে ভয়ে মামলা করতে চায় না। আবার অনেকের ভয়ে মামলা প্রত্যাহার পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের ওপর জমায়াত শিবিরের হুমকি ছিল প্রতিনিয়ত। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নির্বাচন উৎসব নয়। আতঙ্কের বিষয়। এ বিষয়ে এখন আইনের প্রয়োজন। যারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, অত্যাচার করবে তাদের বিচারের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করতে হবে। বিশ্বের ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশে, সংখ্যলঘু সুরক্ষা আইন থাকলে এখানে এই আইন নেই। এটা থাকলে সংখ্যালঘুদের ওপর কেউ নির্যাতন করে সাহস পেত না। এছাড়া তিনি সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় একটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের দাবি করেন। বলেন, এই সরকার দেশে অনেক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখনও অনেক কিছু করার আছে। নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন না হলে আগামী নির্বাচনে তাদের ওপর আঘাত আসবেই। তারা কোনদিন বিচার পাবে না। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, দেশে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করা হলেও ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা সমাজ রাষ্ট্রে অনুপস্থিত। বর্তমানে বিরোধী দলের এ বিষয়ে কোন চর্চাই নেই। এমনকি সরকারী দলের নেতাকর্মীরাও এ বিষয়ে কোন চর্চা করেন না। দিন দিন সমাজে মাফিয়া চক্রের উত্থান বাড়ছে। অথচ দৃষ্টিভঙ্গির একটু পরিবর্তন হলে এ ধরনের ঘটনা দেশে ঘটতো না। যখনই দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে তখন এ বিষয়ে মামলা হলেও ঘটনা ঘটার আগে প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সরকার যদি আগ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিত তাহলে আজকে অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এর বিরুদ্ধে কথা বলতে হতো না। জাতীয় মানবাধিকর কমিশনের চেয়ারমান, কাজী রিয়াজুল হক বলেন, একটি রাষ্ট্রে পত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয়। স্বাধীন সার্বভৌম এই দেশে সব ধর্মের মানুষের অধিকার আছে তার অধিকার নিয়ে কথা বলার। দেশে আগে রাষ্ট্রীয় মদদে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হলেও এখন হচ্ছে ব্যক্তিগত স্বার্থে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কারো ওপর অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, মৌলবাদীরা একজোট হয়ে পরিকল্পিত উপায়ে তারা ঠিকই ঘটনা ঘটাতে সক্ষমত হয়েছে। কিন্তু ঘটনা প্রতিরোধে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্ততায় শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি আছে। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে এখন থেকে সংখ্যালঘুদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটি দেশে বাধা ধরা নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার দরকার। নির্বাচন আসবে সংখ্যালঘুররা নির্যাতিত হবে। এ থেকে রক্ষা মিলবে না। এটা হতে পারে না।
×