ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিটিআই পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জিটিআই পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বাকৃবি সংবাদদাতা ॥ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (জিটিআই) পরিচালক অধ্যাপক এ.কে.এম. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, সহকর্মীদের সাথে খারাপ ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্নসাৎ, কর্মচারীদের টাকা আত্নসাৎ, নিয়োগে স্বজপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধ্যাপক এ.কে.এম. রফিকুল ইসলামর ২০১৬ সালের ২৫ মে পরিচালকের দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমতে শুরু করে। বিভিন্ন উপায়ে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের উপায় খুজতে শুরু করেন। কোর্স ডাইরেক্টর নামে আলাদা পদ সৃষ্টি করে প্রতিটি প্রশিক্ষণ থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নেন তিনি। এছাড়াও অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া, অন্য শিক্ষককের অনুপস্থিতিতে সবগুলো ক্লাস নিজেই নিয়ে সম্মানীর টাকা উঠিয়ে নেন তিনি। পছন্দের শিক্ষক এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কোর্স কো-অর্ডিনেটর বানিয়ে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জিটিআই পরিচালক অধ্যাপক এ.কে.এম. রফিকুল ইসলাম বলেন, আগের পরিচালকদের সময়ও কোর্স ডাইরেক্টর পদটি ছিল এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে কোর্স কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব দেওয়া হতো এবং সহকর্মীদের সিদ্ধান্ত নিয়েই ওসব করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে জিটিআইয়ে দুইবার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমার সময় কোর্স ডাইরেক্টর নামে আলাদা টাকা নেওয়ার কোন বিধান ছিলন না। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে কোর্স কো-অর্ডিনেটর বানানোর কোন নিয়ম নেই। এদিকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়ে কিছু কর্মচারী ও স্থানীয় লোকজনে জটলা দেখা যায়। পড়ে খবর নিয়ে জানা যায় ওই পরিচালক বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বয়ড়া গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম শাহীনকে হুমকী দেওয়ার জন্য কয়েকজন সন্ত্রাসীকে পাঠিয়ে ছিলেন। শফিকুল অভিযোগ করে বলেন, আমার ছোট ভাইকে চাকুরীর দেবেন এই প্রলোভন দেখিয়ে পরিচালক আমার কাছ থেকে দুই দফায় পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ওই পদে তার এক আত্নীয়কে চাকুরী দিয়েছেন। এখন টাকা ফেরত চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করছেন। নানা ভাবে হুমকি দেওয়ার চেষ্টাও করছেন। পরিচালকের কাছে ওই টাকা দেওয়ার সাক্ষী তার কাছে আছে বলে জানায় শাহীন । এ অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক এ.কে.এম. রফিকুল ইসলাম বলেন, শফিকুল একটি চাকরির জন্য আমার অফিসে ধরনা দিত। চাকরির না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনো টাকা-পয়সা নেইনি। শফিক আমাকে বলেছে সে চাকরির জন্য ছাত্রলীগকে টাকা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল বলেন, প্রশাসনিক কোনো কাজে ছাত্রলীগ যুক্ত নয়। চাকরি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জিটিআইয়ের পরিচালকেরই দেখার কথা। তাঁর সময়ে জিটিআইয়ে মোট ৬২ টি ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে যার মধ্যে বেশি সংখ্যক কোর্সের কো-অর্ডিনেটরের হিসেবে ছিলেন পরিচালক নিজেই বা তার পছন্দের কোন শিক্ষক। কর্মচারীদের অভিযোগ, চাকরির সময়সূচির বাইরে এমনকি ছুটির দিনেও কাজ করতে হয় আমারে। অতিরিক্ত কাজ করায় আগের পরিচালকেরা একটা সম্মানী দিতেন যা প্রশিক্ষণের বরাদ্দের মধ্যেই অর্ন্তভূক্ত ছিল। এখন অনেক সময় দেন না, দিলেও সেটাকে সম্মানী বলা যায় না। এ ছাড়া সম্প্রতি জিটিআইয়ের ডরমিটরিতে থেকে আটটি বয়স্ক গাছ কর্তন, ৪০টি নি¤œমানের খাট ক্রয় এবং ব্যক্তিগত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পরিচালক বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সত্য নয়। কেউ হয়ত ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। পরিচালক অধ্যাপক এ.কে.এম. রফিকুল ইসলাম একসময় ছাত্রদল ও বিএনপি’র রাজনীতি সাথে যুক্ত থাকলেও ক্ষমতার পরিবর্তনে খোলস পাল্টে যোগ দিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামে। রাজনীতিক প্রভাব খাটিয়ে দুইজন আতœীয়সহ মোট ৫ জনকে মাস্টারোলে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম জিটিআইয়ের একজন শিক্ষক নির্ধারিত থাকলেও পরবর্তীতে রাজনীতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি আরও তিনজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। শিক্ষক নিয়োগসহ কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগের বিষয়টি দেখেন। আমি প্রয়োজন অনুযায়ী তালিকা পাঠিয়েছে পরবর্তীতে প্রশাসন এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। পরিচালকের স্বেচ্ছাচারীতা, টাকা আত্মসাতের ও অনিয়মের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর বলেন, জনবল নিয়োগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের জন্য। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে পুঁজি করে কারো কোনো অনিয়ম বা অর্থ লেনদেনের কোনো করার সুযোগ নেই। যদি এ ধরণের কোনো কিছু হয়ে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে।
×