ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কথোপকথন ॥ কারও ওপর আমার ক্ষোভ নেই ॥ অঞ্জু ঘোষ

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কথোপকথন ॥ কারও ওপর আমার ক্ষোভ নেই ॥ অঞ্জু ঘোষ

চিত্রনায়িকা অঞ্জু ঘোষ। আসল নাম অঞ্জলি ঘোষ। বাংলাদেশের মানুষের মনে তার নাম জোস্না নামে আঁকা। তার অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোস্না’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। চলচ্চিত্রটি এতই জনপ্রিয় হয় যে, জোস্না নামে বেশিরভাগ লোক তাকে সম্বোধন করে। শোনা যায়, বাংলাদেশে কোন চলচ্চিত্র এখন পর্যন্ত এই চলচ্চিত্রের আয়ের রেকর্ড ভাঙ্গতে পারেনি। স্বাধীনতার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন অঞ্জু। পরে ১৯৮২ সালে এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় যাত্রা শুরু। কোন এক সময়ে হঠাৎই তিনি চলে যান কলকাতায়। ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন শ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে এসেছেন আশির দশকের এই অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি গুণী এই শিল্পীকে সংবর্ধনা দেয়। অভিনয় এবং নিজ দেশ থেকে কেন এই দূরে থাকা, এসব নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে এলেন অনুভূতি কেমন? অঞ্জু ঘোষ : অনেক ভাল লাগছে। আপনারা আমাকে মনে রেখেছেন আমি খুশি হয়েছি। আমার মায়ের আসার কথা ছিল কিন্তু তিনি চলে গেলেন চিরতরে আমাকে ছেড়ে। আপনারা হয়ত মনে করবেন আমার মায়ের জন্য কান্না করছি। কিন্তু না আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে আপনাদের ভালবাসা দেখে। আমার ভিসা পেতে অনেক অসুবিধা হয়েছিল। আজ আমি মাতৃভূমিতে পা রাখতে পেরেছি। আমার উদ্দেশ্য চলচ্চিত্রে কাজ করা কিংবা শিল্পী জগতটা কেমন আছে সেটা দেখাই মুখ্য নয়। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি তীর্থে পা রাখলাম। দেশের বর্তমান চলচ্চিত্র কোন্ দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন? অঞ্জু ঘোষ : চলচ্চিত্রটা দুই বাংলাতেই অনেক দূরে সরে গেল। আমি মোটামুটি তাই দেখতে পাচ্ছি। মা-বোনেরা টিভি শো দেখে। সেখানের সিরিয়ালসহ অনেক অনুষ্ঠানের প্রতি আকৃষ্ট প্রায় সবাই। কলকাতা বা বাংলাদেশে সব জায়গাতে হচ্ছে এ বিষয়টা। আমি যখন চলচ্চিত্রে এসেছিলাম, তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। তখন থেকে অনেক বছর এখানেই কাজ করেছি। একসঙ্গে চার পাঁচটি চলচ্চিত্রের শূটিং হতো এখানে। শিল্পীদের ভিড় লেগে থাকত। এটাই ছিল আমাদের ঘরবাড়ি। কি জন্য মানুষ চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে গেল, ঠিক বুঝতে পারছি না। কি সুন্দর একটা ইন্ডাস্ট্রি ছিল। এখন চলচ্চিত্র হচ্ছে না। চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিতে করণীয় কী? অঞ্জু ঘোষ : আমরা শিল্পীরা হলাম শ্রমিক। আমাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। একজন প্রযোজক কোটি কোটি টাকার ঝুঁকি নেন আমাদের ওপর নির্ভর করে। দর্শকদের হলমুখী করার চেষ্টা করতে হবে। দর্শক যাতে আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরে আসে, তার জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। এত জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও কোন্ অভিমানে আপনি দেশ ছাড়লেন? অঞ্জু ঘোষ : কোন ক্ষোভ থেকে আমি সেখানে যাইনি। আমার কারও ওপর কোন ক্ষোভ নেই। বাজে চলচ্চিত্রের অফার ছিল কিন্তু আমার মনের বিরুদ্ধের আমি অভিনয় করতে চাইনি। আমি কেন গিয়েছিলাম বেড়াতে। দুই দিনের জন্য মাকে দেখতে গিয়েছিলাম। মায়ের জন্যই ফেঁসে গিয়েছি। তারপর ওখানে চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেন যেন আর ফেরা হয়নি। বাংলাদেশ আমার নিশ্বাস। এখান থেকে নিশ্বাস নিয়েছিলাম, এখনও বেঁচে আছি। অভিনয় জীবনের কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা যদি বলেন? অঞ্জু ঘোষ : ভারতে আমি গাড়িতে যাচ্ছিলাম ‘অঞ্জু নাইট’ নামের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। প্রায় পাঁচ-ছয়টা ছেলে কয়েকটা গাড়ি নিয়ে শুধু আমার পেছনে ঘুরছে। আমি প্রথম দিকে তাদের দেখে ভয় পেয়ে গেছি। আমার সঙ্গে থাকা প্রশাসনের লোকজনও কিছুটা বিব্রত হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেন এমন করছে। সে বলল, ম্যাডাম, আমি খুব গরিব ছিলাম। কাঠের ব্যবসা করতাম। আপনার অভিনীত ‘নির্মোহ’ চলচ্চিত্রটি আমি ভিডিওতে চালিয়ে অনেক ব্যবসা করেছি। আপনি ভাববেন না আপনাকে কোন ডিস্টার্ব করার জন্য এখানে এসেছি। সে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। আর বলল, আজ আপনার জন্য আমি দাঁড়িয়ে আছি। এইগুলো মনে পড়লে বুকের মধ্যে সাহস হয়। খুব ভাল লাগে। ‘বেদের মেয়ে জোস্না’ চলচ্চিত্রের সাফল্য নিয়ে বলেন। অঞ্জু ঘোষ : অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি কিন্তু এ চলচ্চিত্রটির কথা কেন যেন সবার মুখে বেশি শুনি। আমাদের কাছে সবই সমান। ‘বেদের মেয়ে জোস্না’ চলচ্চিত্রে মাটির টান ছিল। আমরা সবাই মাটিকে ভালবাসি। এ কারণেই চলচ্চিত্রটি হয়ত সুপার-ডুপার হিট হয়েছিল। বাংলাদেশের কোন চলচ্চিত্রে কাজের অফার পেলে করবেন? অঞ্জু ঘোষ : আমি কোন বাধা মানি না। সব বাধা পেরিয়ে আমি এগিয়ে যাই। ভাল গল্প পেলে কাজ করব। সাংবাদিকরাও আমাদের আপন জন। তারা অডিয়েন্সের সঙ্গে আমাদের দুই হাতকে এক করে দেন। কখনও হয়ত কষ্ট লাগে আবার কখনও ভালও লাগে। আমরা ভালটা গ্রহণ করব। -গৌতম পাণ্ডে
×