ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পপি দেবী থাপা

পেন্সিল হাতে তরুণ জাদুকর ইমাম

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পেন্সিল হাতে তরুণ জাদুকর ইমাম

ইমাম মাহ্দী ইভান। ১৯৯৫ এ জন্ম নেয়া এই তরুণ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদে প্রিন্ট মেকিং ডিপার্টমেন্টের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এবারে ১৮তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর প্রজেক্ট ‘বিন্দু বিসর্গ’তে নজর কেড়েছেন আলাদা করে। বড় হয়ে শিল্পী হবেন, ইমামের বেলায় তার জীবনের এই গতিপথটি নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল শৈশবে। অন্তত ইমামের গল্প শুনে এই ধারণাই মেলে। শৈশবেই আঁকাআঁকি শুরু। তার ছবি দেখে বন্ধুদের প্রশংসা তাকে এমন ধারণা দিয়েছিলÑ আমি পারব। পরিবারের কেউ এ জগতের না থাকলেও পাশে এসে দাঁড়ান মা মাহিমা। পেশায় স্কুলশিক্ষিকা। মায়ের নিজেরও ছিল ছবি আঁকায় ঝোঁক। নিজের অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন একমাত্র সন্তান ইমামের মাঝে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু চারুকলার জয়নুল শিশুকলা নিকেতনে, ইমাম তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। সপ্তম শ্রেণীতে আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসে রিয়েলস্টিক পোর্ট্রেট। ইমামের অন্যতম শক্তির জায়গা হচ্ছে তার দৃষ্টি। চারপাশের দৃশ্যাবলীর একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক তিনি। প্রকৃতিপ্রেমী ইমাম প্রকৃতি দেখেন পরম মমতায়। যা উঠে আসে তার শিল্পকর্মেও। শুরু থেকেই পেন্সিল তার আগ্রহের বিষয়। ছোটবেলা থেকেই বৃদ্ধা অঙ্গুলি, তর্জনী আর মধ্যমায় ধরা পেন্সিল আর কাগজে পেন্সিলের আচরের খস খস শব্দ তাকে নিয়ে যেত অপার্থিব এক ভুবনে। যেখান থেকে চেনা ছবিগুলো বদলে গিয়ে পেন্সিলের আঁচরে উঠে এসেছে ভিন্নমাত্রা নিয়ে। পেন্সিল তাকে ভাবায় ছোটবেলা থেকেই। এতটাই যে, পেন্সিলের অপচয় রোধে কাজ করেন নিজের উদ্ভাবিত জিরো ওয়েস্ট টেকনিকে। বিন্দু বিসর্গে তার শিল্পকর্মটি ভি আকৃতির দেয়ালে কার্বন পেন্সিলে আঁকা। পুরো ছবিটি আঁকতে ব্যবহার করেছেন একটি পেন্সিলের চার ভাগের এক ভাগ। এবারের শিল্পকর্মটি মনে করিয়ে দেয় মাইকেল এ্যাঞ্জেলোর অমর সৃষ্টি আদমের কথা। তবে হাতের পরিবর্তে এখানে তিনি ব্যবহার করেছেন গাছের শাখা, পাতা ও ফুল। যে শাখা দুটি ছুঁয়ে দিতে চাইছে পরস্পরকে। বিমূর্ত বিধায় এটির প্রকাশ হতে পারে অন্য যে কোন অর্থে। হতে পারে দুটি গ্যালাক্সির মিলন, মিলে যাচ্ছে দুটি আত্মা, নারী-পুরুষের মিলনের আকুতি। দর্শক চাইলে ইমামের শিল্পকর্ম দেখে নিজের ভাবনাকে নিয়ে যেতে পারেন আরও বহুদূর। ইমামের শক্তির জায়গাটি হচ্ছে স্কেচিং, ড্র্রয়িং, কম্পোজিশন ও কালার মিক্সিং। দ্য ভিঞ্চি, মাইকেল এ্যাঞ্জেলো, জে এম ডব্লিউ টার্নারসহ অনেকের কাজে অনুপ্রাণিত ইমাম সবসময়ই নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চান এবং সেটি নিজের মতো করে। তার নিজস্ব টেকনিকে। তবে সেটা সকলের ভাল লাগার ওপর ভিত্তি করে। তিনি চান তার কাজের প্রতি থাকবে সকরের ভিন্ন রকম এক আকর্ষণ। তিনি প্রিন্ট মেকিংয়ে স্কেচিং, ড্রয়িংয়ের বিষয়গুলো তুলে আনতে চান। ইমাম সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন যেখানে তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হবে। যে দেশে থাকবে সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা। সাহিত্য, শিল্প ভাবনায় পরিপূর্ণ হবে মানুষের মানসিকতা। হাতে পেন্সিল পেলে তিনি গায়ে বয়ে যাওয়া শিহরণের অনুভূতি তুলে আনতে পারেন কাগজে। মায়ের স্বপ্ন পূরণে নতুন শিল্প সৃষ্টির সন্ধানে পথ চলতে চান সারাটি জীবন। পেন্সিল হাতে ইমামের শিল্পকর্ম একদিন শিহরিত করবে সারা বিশ্বের শিল্পপ্রেমীদের- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
×