ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুদকের তদন্ত শুরু

বগুড়ায় আরডিএসহ ৫ প্রকল্পে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বগুড়ায় আরডিএসহ ৫ প্রকল্পে  অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ দরিদ্রতা দূরীকরণ ও গ্রামের মানুষের আবাসনে ফসলি জমি নষ্ট না করে বহুতল ফ্লাট বাড়ি নির্মাণের পল্লী জনপদ নামের বহু কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প আজও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্প গত বছর প্রথম ভাগে বাস্তবায়ন করার কথা বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ)। এই পল্লী জনপদসহ ৫টি প্রকল্পে দুর্নীতি অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতসহ ১১টি অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়া। দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম সোমবার দুপুরে জানান, প্রকল্পগুলোর নথিপত্র চেয়ে বগুড়া আরডিএর মহাপরিচালক আব্দুল মতিনের কাছে রবিবার বিকেলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এরপর অভিযোগ পর্যালোচনা করে সত্যতা সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়ন, আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্মিলিত সমবায় ভিত্তিক বহুতল ভবন ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। সময়সীমা ছিল ২০১৭ সালের জুন মাস। নির্ধারিত নক্সা ও কাঠামো অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের সাতটি বিভাগের সাতটি স্থানে পল্লী জনপদ বানানো হবে। রাজশাহী বিভাগের বগুড়ার শাজাহানপুর, ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, রংপুর, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে চার তলা ভবনের প্রতিটি পল্লী জনপদে ২শ’ ৭২টি করে পরিবার থাকবে। ফ্লাট হবে চার ক্যাটাগরির। ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১৫ বছরের কিস্তিতে স্বল্প মূল্যের এই ফ্লাট কেনা যাবে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪শ’ ২৪ কোটি টাকা। সরকারের বিনিয়োগ (সরকারী অর্থ) ৩শ’ ৬৩ কোটি টাকা। সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ডাউন পেমেন্ট পাওয়া যাবে ৬১ কোটি টাকা। আরডিএর মহাপরিচালক আব্দুল মতিন জানান, একাডেমির সেন্টার ফর ইরিগেশন এ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের (সিআইডব্লিউএম) মাধ্যমে পল্লী জনপদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। আরেক সূত্র জানান, নানা কাজে সময় বেশি লাগায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। যে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার কথা তাও পাওয়া যায়নি। যে কারণে দু’বছর বাড়তি সময় চাওয়া হয়েছে। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রিভাইজড প্রকল্পে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। শীঘ্রই তা জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের অর্থনৈতিক কমিটির (একনেক) বৈঠকে উঠবে। ঠিকাদার নিযুক্ত হওয়ার পর বগুড়া ও রংপুরে কাজ চলছে। আরেক সূত্র জানায়, পল্লী জনপদের প্রকল্প পরিচালক মাহমুদ হাসান খান প্রায় এক বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি দিয়েছেন। জনশ্রুতি আছে তিনি আর ফিরবেন না। বগুড়া পল্লী জনপদ প্রকল্পে জমি কেনার সময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দলিলে অনেক বেশি মূল্য দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা নয়-ছয় করা হয়েছে। যার তদন্ত চলছে। পল্লী জনপদ প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতায় চার তলা ভবনের ফ্লাটে ব্যবহৃত বর্জ্য, পল্লী জনপদের ভেতরে অন্য স্থানে গরু-ছাগল হাস-মুরগি পালনের বর্জ্যে বায়োগ্যাসে বিদ্যুত ও রান্নাবান্নার ব্যবস্থা। নিরাপদ পানি, কমিউনিটি ভিত্তিক দোকানসহ জীবন মানোন্নয়নের সকল ব্যবস্থার এমন প্রকল্প ব্যাপক সাড়া ফেলে। বগুড়া শাজাহনপুর উপজেলার জামালপুর গ্রামে পল্লী জনপদ প্রকল্পের কাজ কখনও চালু কখনও বন্ধ। ওই গ্রামের আব্দুর রহিম বললেন, কোন রকমে দোতলার গাঁথুনি হয়েছে। আর এগোয়নি। রংপুরে কিছু কাজ হয়েছে। পল্লী জনপদ প্রকল্প নিয়ে এন্তার অভিযোগ জমা পড়েছে বগুড়া জেলা দুদক কার্যালয়ে। যার মধ্যে আছে, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক পল্লী জনপদ প্রকল্পে অনিয়মসহ চরজীবিকায়ন, সেন্টার ফর ইরিগেশন এ্যান্ড ওয়াটার ম্যনেজমেন্টসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অনিয়ম।
×