ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যত্রতত্র বাস স্টপেজ ॥ ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

যত্রতত্র বাস স্টপেজ ॥ ভোগান্তি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী মহানগরীতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে সব যানবাহনের চলাচল। ট্রাফিক আইন আমান্য করে যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে বাসের স্টপেজ। অটোরিক্সার বেপরোয়া চলাচলে পদে পদে দুর্ভোগ নগরবাসীর। রাজশাহী নগরীতে অনিয়ন্ত্রিত অটোরিক্সার চলাচলেই দুর্ভোগের সবচেয়ে বড় কারণ। রাজশাহী নগরীর তিনটি প্রধান সড়কেই অন্তত ২০টি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অলিখিত বাস স্টপেজ। অভ্যন্তরীণ, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো থামছে এসব স্টপেজে। তিনটি বাস টার্মিনাল থাকলেও সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে নগরীর ভেতর দিয়েই দাপিয়ে ফিরছে বাস। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীতে গণপরিবহন বলতে অটোরিক্সা ও ইজিবাইক। প্রায় অর্ধলাখ যানবাহন চষে বেড়াচ্ছে নগরীর অলিগলি। হিউম্যান হলার রয়েছে আরও হাজার দেড়েক। এছাড়া পথে পথে বাস স্টপেজ ও অস্থায়ী টার্মিনাল গড়ে ওঠায় নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে যানজট। যদিও এ জন্য নগরীর অপ্রতুল সড়ক নেটওয়ার্ককে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) জানিয়েছে, নগরীর নওদাপাড়া এলাকার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল রয়েছে। নগরীর যানজট নিরসন ও যাত্রীসেবা বৃদ্ধির জন্য ২০১১ সালে ৭ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে এই টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়। তবে নগরী থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে এই টার্মিনালে মানুষ যায় না। পরিকল্পনা ছিলো রাজশাহী বাইপাস মহাসড়ক ঘেঁষা এই টার্মিনাল থেকে আম চত্বর ঘুরে রাজশাহী-নওগাঁ রুটের গাড়িগুলো চলাচলের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আর হয়ে ওঠেনি। শুধু তাই নয় এই টার্মিনালের গাড়ি চলাচলের জন্য নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়। এই সড়ক হয়ে কেবল টার্মিনাল থেকে ভদ্রা মোড়ে আসা-যাওয়ার কথা গাড়িগুলো। কিন্তু সেগুলো সরাসরি প্রবেশ করে শহরে। এছাড়া নগরীর আলুপট্টিতে রয়েছে বিআরটিসি বাস টার্মিনাল। ব্যস্ততম সাগরপাড়া ও নাটোর রোড হয়ে গন্তব্যে চলাচল করছে বিআরটিসির বাসগুলো। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আলুপট্টি থেকে ছেড়ে যাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী মহানন্দা পরিবহন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী-নওগাঁ রুটের গাড়িগুলো রেলগেটের সড়কের গিয়ে থামে। সেখান থেকে প্রতিদিন নওগাঁ, নিয়ামতপুর, জয়পুরহাট, সাপাহার, মঙ্গলবাড়ী ও হিলির উদ্দেশে অর্ধশতাধিক বাস ছেড়ে যায়। সেখান থেকেই বাগমারার ভবানীগঞ্জ, তানোর, আমনুরা ও ম-ুমালার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আরও অর্ধশত বাস। এছাড়া বিআরটিসিসহ অন্তত ৫টি পরিবহনের কাউন্টার রয়েছে সেখারকার ফুটপাথে। রাস্তার ওপরেই রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ও থ্রি-হুইলারের স্টপেজ। মাঝেমধ্যেই চলে আসে ট্রেন। এতে দিনের বেশিরভাগ সময় নগরীর অনত্যম এই প্রবেশপথ আটকে থাকে জানজটে। এছাড়ও নগরীর ভেতরের সড়কগুলো ভারি যানবাহনের দখলে থাকায় হালকা যানগুলো প্রায় পড়ছে দুর্ঘটনায়। ঘটছে প্রাণহানিও। ওভার লোড যানবাহনের চাপে নষ্ট হচ্ছে নগরীর সড়ক অবকাঠামো। বছর না ঘুরতেই নষ্ট হয়ে গেছে পদ্মা আবাসিক বাইপাস সড়ক। কয়েক বছর ধরেই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড-তালাইমারী রাস্তা। নগর সবচেয়ে ব্যস্ততম এই সড়কটির একপাশ বন্ধ রেখে মেরামত চলছে। এতে এ রুটে চলাচলকারী যানগুলোর ভোগান্তির শেষ নেই। আর অটোরিক্সা চলছে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবেই। এসব যানবাহনের নিয়ন্ত্রণই করতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুনজুর রহমান পিটার বলেন, শুরুতে নওদাপাড়া টার্মিনাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর গাড়িগুলো ছাড়ছিল। কিন্তু যাত্রী পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত এগুলো নগরীর বিভিন্ন স্টপেজ ঘুরে গন্তব্যে পাড়ি দেয়। আর ঢাকার বাসগুলো রাত্রিকালীন যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে টার্মিনালে যায়নি। ভোগান্তির জন্য নগরে অপ্রতুল সড়ক এবং ইজিবাইককেই দায়ী করেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ অটোরিক্সা ও সিএনজি সংগঠনগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ট্রাফিক বিভাগ। অটোরিক্সা ও সিএনজিগুলোকে কর্তব্যরত ট্রাফিকদের কাজে বাধা দিতেও দেখা যায়। নগরীর দড়িখরবোনা মোড়ে সন্ধ্যায় যানজট লেগেই থাকে। চার রাস্তার এই মোড়টিতে দুইজন ট্রাফিক কর্তব্যরত থাকেন। এই মোড়ের সড়কের এক ধারে সবসময় অটোরিক্সা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কর্তব্যরত ট্রফিক এই অটোগুলোকে সরে যেতে বললেও তারা সরে না। রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক বিভাগ জানায়, রাজশাহীতে যানজটের অন্যতম কারণ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা। এসব অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো। অটোর চালকরা সড়কের চলাচলের কোন নিয়ম মানেই না। জরিমান করেও কোন কাজ হয় না। তবে আরএমপির সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছেন তারা। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু হলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হবে। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালুর জন্য আরএমপির পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনকে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে।
×