ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীপুরের মেয়র ইন্দোনেশিয়ায়, ভুয়া পরিচয়ের ব্যক্তি জেলে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শ্রীপুরের মেয়র ইন্দোনেশিয়ায়, ভুয়া পরিচয়ের ব্যক্তি জেলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমানসহ দু’জনকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় রবিবার কারাগারে প্রেরণ করেছে ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল আদালত। কিন্তু প্রকৃত মেয়র আনিছুর রহমান বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান করছেন। তাহলে মেয়রের পরিচয়ে কারাগারে আটক ব্যক্তি কে? বিষয়টি জানাজানির পর আদালতপাড়ায় ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে। এছাড়া নিজ জেলা গাজীপুরের বিষয়টি ছিল টক অব দ্য ডিস্ট্রিক্ট। স্থানীয়দের প্রশ্ন প্রকৃত মেয়র বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন, তাহলে তার পরিবর্তে মেয়র আনিছুর রহমান পরিচয়ে কারাগারে প্রেরিত ব্যক্তিটি কে ? আর কেনই বা সে মিথ্যা পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন ? এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় এবং তাদের স্বার্থ সম্পর্কে জানতে চান এলাকাবাসী। এদিকে সোমবার মেয়র হিসেবে মিথ্যা পরিচয়দানকারী নূরে আলম মোল্লাকে ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হলে নূরে আলম বিচারক মিজানুর রহমানের কাছে তার জবানবন্দী প্রদান করেন। পরে বিচারক আসামি নূরে আলমের বিরুদ্ধে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা ও গাজীপুরের শ্রীপুর থানাকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে নূরে আলম বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার সময় আমাকে বলেন, আমি ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছি। তুই আমার মামলার বিষয়ে ব্যবস্থা করিস। আমি তার মামলার বিষয়ে দেখাশোনা করি। রবিবার আদালতে এসেছিলাম মামলার বিষয় খোঁজ-খবর নিতে। মেয়রের অনুপ্রেরণায় আমি তার নামে আত্মসমর্পণ করেছি। মেয়রের আত্মীয় নূরে আলম বর্তমানে মেয়রের পরিবর্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে আটক রয়েছেন। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী রুহুল আমিন খান বলেন, ‘ভুয়া মেয়র আনিছুর সেজে রবিবার নূরে আলম মোল্লা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তিন মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে আমরা জানতে পারি, সে শ্রীপুরের মেয়র না। আজ আদালতে তিনি এ বিষয়ে জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দী শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।শ্রীপুরের মেয়র আনিছুর ও তার নিকটাত্মীয় নূরে আলমের নামে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।’ জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান গত শনিবার ৯ দিনের সরকারী সফরে ইন্দোনেশিয়া গেছেন। তিনি বিদেশ যাওয়ার পর দিন রবিবার শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান পরিচয়ে এক ব্যক্তি ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ মিজানুর রহমান খানের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে চার মামলায় জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাকে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় এক মামলায় জামিন দেয়, তবে তিন মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। একই সময় শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক হিসাবরক্ষক আব্দুল মান্নান একই আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিনের আবেদন করেন। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকেও কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। পরে আদালত থেকে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এদিকে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়রকে কারাগারে প্রেরণের খবর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে শ্রীপুরসহ গাজীপুরের সর্বত্র শুরু হয় নানা গুঞ্জন। এ বিষয়ে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে মেয়র পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণকৃত ব্যক্তিটি যুবলীগ কর্মী নূরে আলম মোল্লা। শ্রীপুর পৌরসভার সচিব বদরুজ্জামান বাদল বলেন, শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান আমার উপস্থিতিতে ৯দিনের সরকারী সফরে শনিবার রাত ১১টার দিকে মালিন্দো এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে চড়ে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দেবেন। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে বিদেশ অবস্থান করছেন। শ্রীপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, মেয়র আনিছুর রহমান দেশের বাইরে থাকায় তিনি রবিবার হতে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে মেয়র সেজে কে কারাগারে রয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা নেই। মেয়র আনিছুর রহমানের ছোট ভাই স্থানীয় মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোকলেছুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মেয়র আনিছুর রহমান বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। লোকমুখে শুনেছি মেয়র আনিছুর রহমান পরিচয়ে তার আস্থাভাজন যুবলীগ কর্মী নূরে আলম মোল্লা নামে এক ব্যক্তি আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেছেন। মেয়র আনিছুরের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান নামে একজন রবিবার ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে চার মামলায় জামিনের আবেদন করেন। চার্জশীটের সঙ্গে তার নাম ও পিতার নাম মিল ছিল। আদালত এক মামলায় মেয়র আনিছুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেয়, তবে তিন মামলায় তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তিনি সঠিক মেয়র কিনা এ বিষয়ে কাগজে প্রমাণিত হবে। তার সঙ্গে শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক হিসাবরক্ষক আব্দুল মান্নান আদালতে আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিনের আবেদন করলেও আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকেও কারাগারে প্রেরণ করে। তবে মেয়র বিদেশ রয়েছেন এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। মামলার অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে আসামিরা শ্রীপুর পৌরসভার অন্তর্গত ৫টি হাট-বাজার থেকে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ২শ’ টাকা আত্মসাত করেন। ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলাটি দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্ত করে চার্জশীট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন। অপর তিন মামলার অভিযোগে বলা হয়, পৌরসভার রসিদের মাধ্যমে আদায়কৃত ট্যাক্স ও বিবরণীর ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ১০৭ টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না করে আত্মসাত করা হয়। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন। তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৬ সালের ১২ জুলাই চার্জশীট দাখিল করেন। অন্য দুই মামলায়ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
×