ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মাগর্ভে চলে যাচ্ছে নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পদ্মাগর্ভে চলে যাচ্ছে নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

আবুল বাশার, শরীয়তপুর ॥ প্রমত্তা পদ্মার তীব্র ভাঙ্গনে বিপর্র্যস্ত হয়ে পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা। সোমবার নদীতে তীব্র ¯্রােতের কারণে জেলার নড়িয়া উপজেলার মুলফৎগঞ্জ এলাকায় পদ্মার ভাঙ্গন বেড়ে গেছে। এখানে অবস্থিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মসজিদ, দেয়ালসহ অন্যান্য আরও ৩টি ছোট ছোট ভবন এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন লাইফ কেয়ার হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সোমবার নদীতে বিলীন হয়েছে। যে কোন মুহূর্তে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনসহ ১২টি ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ খলিলুর রহমান সোমবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিদর্শনে এসে ভাঙ্গনের তীব্রতা দেখে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালের ভবনগুলো নদীর ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে থাকায় ইতোমধ্যেই আমরা নতুন ও পুরাতন ভবনের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম স্থগিত করেছি এবং এখানকার মালামাল আমরা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগের স্থগিত করা স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম হাসপাতালের কম্পাউন্ডের ভেতরে ডাক্তারদের আবাসিক কোয়ার্টারে সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা নিরাপদ ভেবে সেখানে চালু রাখা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এ ছাড়াও হাসপাতালের সমস্ত ভবনের প্রাক্কলন নিলাম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ লাখ টাকা। এদিকে সোমবার নদীর ভাঙ্গন কবলিত উপজেলার মুলফৎগঞ্জে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বহু মানুষের দীর্ঘ দিনের সাজানো সংসার, কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, মসজিদ, ব্রিজ-কালভার্ট মুহূর্তের মধ্যে পদ্মার গর্ভে চলে যাচ্ছে। পদ্মা পাড়ে চলছে ভাঙ্গনে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষের মাতম। কিছুদিন আগেও যারা নিজ নিজ ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে সচ্ছল দিন কাটাত, তারা আজ ভূমিহীন পথের ফকির হয়ে গেছে। দেখা গেছে, প্রায় ৩শ’ বছরের পুরানো মুলফৎগঞ্জ বাজারে অবস্থিত ২ হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্ধেকটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকিরা তাদের সাজানো-গোছানো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেরাই ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে পুরনো এ বাজারের আরও সহ¯্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসতঘর। যে কোন মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে নড়িয়া উপজলার ঐতিহ্যবাহী মুলফৎগঞ্জ মাদ্রাসা। এদিকে ভাঙ্গন রোধে সরকার ৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে পদ্মার পাড়ে যে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে তা কোন কাজেই আসেনি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ঠেকানো যায়নি ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গনে ৩তলা পাকা বাড়ি, ৩ তলা পাকাভবনের ক্লিনিকসহ ৩/৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান। বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনকারীদের নেতা ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, বর্ষার আগেই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এ সব এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছিল। এরপর এ ভয়াবহ ভাঙ্গন রোধে সরকার পদ্মা নদীর দক্ষিণ (ডান) তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প গ্রহণ করে। এরপর গত ২ জানুয়ারি তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তা একনেকের বৈঠকে পাস করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ষার আগেই বাঁধ নির্মাণ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে আজ আমাদের সর্বস্ব হারাতে হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি ও ভাঙ্গন কবলিত এলাকাকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
×