ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে পানিবন্দী শতাধিক পরিবার

উজানের ঢলে পদ্মার পানি বেড়ে বিলীন৩৫ বসতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

উজানের ঢলে পদ্মার পানি বেড়ে বিলীন৩৫ বসতি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে রাজশাহীর পদ্মা নদী আবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। প্রতিদিন পানি বাড়ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন রাজশাহীর বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ। পানির তোড়ে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী মানুষ। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এদিকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে জেলার পবা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম চর খিদিরপুর। ওই গ্রামের অন্তত ৫০ টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর বয়ারমারী আমিনপাড়া গ্রামের ৩৫টি বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে আরও ১৫ বাড়িঘর। রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, প্রতিদিনই পদ্মার পানি তিন-চার সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। সর্বশেষ সোমবার রাজশাহী নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ১৪ মিটার। এনামুল হক বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। এখন প্রতিদিন পানি বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এখনই পদ্মার বুকে জেগে ওঠা বেশিরভাগ চর তলিয়ে গেছে। এসব চরে মানুষের বসতি না থাকলে গবাদি পশু পালন হতো। পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে যেসব চরে বসতি রয়েছে সেগুলোতে পানি ঢুকবে। এছাড়া রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর বয়ারমারী আমিনপাড়া গ্রামের ৩৫ টি বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। ওই গ্রামের বসবাসকারীরা ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন এলাকার মানুষ। চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ রানা উজ্জ্বল বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরইমধ্যে চর বয়ারমারী আমিনপাড়া গ্রামের ৩৫টি বাড়িঘর পুরোটাই পদ্মায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেছে। যে গতিতে পদ্মার পানি বৃদ্ধি হচ্ছে তাতে যে কোন সময় ওই গ্রামটি বিলীন হয়ে যেতে পারে। শুধু বাড়িঘর নয়, এরইমধ্যে গ্রামের একটি বড় জামে মসজিদ ও প্রায় ৫০ বিঘার আবাদি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে গ্রামটির ৫০টি পরিবারের ৩ শতাধিক মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যাদুর্গতরা জানান, বন্যায় তাদের স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। টিউবওয়েলগুলো ডুবে গেছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানির সঙ্কট। নীলফামারী ॥ এদিকে নীলফামারী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভারি বর্ষণের সঙ্গে উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সোমবার সকাল ছয়টা হতে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পায় ৬০ সেন্টিমিটার। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার প্রবাহ বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটারে মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলে তা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিপদসীমা অতিক্রম করে। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবার খবর জানালেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তা বিপদসীমা অতিক্রম করে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। একই সূত্র জানায় ভারতের তিস্তা নদীর দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার (৮৫ দশমিক ৯৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুপুর ১২টা হতে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছিল। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ৬টা হতে পানির পরিমাপ করা হবে।
×