ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। একই সঙ্গে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও দাবি তোলেন তারা। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সোমবার আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেন, তাকে মুক্তি দেয়া না হলে আগামী নির্বাচন বর্জন করবেন। প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশ নেত্রীর মুক্তি দিলেই বোঝা যাবে যে এই সরকার দেশে নির্বাচন চায়। আওয়ামী লীগকে দেউলিয়া রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন দরকার ঐক্য। ইস্পাত কঠিন ঐক্য। দল ও জনগণের মধ্যে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে এই দানব সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই এ ঐক্যের কথা বলে যান বলে উল্লেখ করেন। সোমবার সকালে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে এই মানববন্ধন কর্মসূচীতে সকাল ১০টা থেকেই দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে আসতে শুরু করেন। একপর্যয়ে কেন্দ্রীয় এই কর্মসূচীতে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটে। ফলে মানববন্ধন কর্মসূচীর বদলে তা সমাবেশে রূপ পায়। এ সময় প্রেসক্লাবের সামনে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কের এক পাশ বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয় যানজট। একই সঙ্গে প্রেসক্লাবের সামনে এবং সারা দেশে মহানগর ও জেলা সদরে বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচী চলে। প্রেসক্লাবের ফুটপাথসহ সড়কের পাশে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’, খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন মানি না, মানব না’ স্লোগান দিতে থাকেন। মানববন্ধন স্থলের আশপাশ থেকে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ করে দলটি। এছাড়াও মানববন্ধন ঘিরে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের এপিসি ভ্যান ও জলকামানও রাখা ছিল। গ্রেফতার এড়াতে মানববন্ধন শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগেই নেতাকর্মীদের তাড়াহুড়ো করে প্রেসক্লাব এলাকা ত্যাগ করতে দেখা গেছে। মানববন্ধন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। তার মুক্তি চাই। এটা কোন করুণা নয়, দয়া ভিক্ষা নয়। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। অবশ্যই তাকে মুক্তি দিতে হবে, মুক্তি তার আইনগত প্রাপ্য। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এদেশে কোন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না জনগণের কাছে, যদি দেশনেত্রী কারাগারে থাকেন। তিনি বলেন, সরকার সারা দেশে ভৌতিক মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। হুমকি-ধমকি দিয়ে গোটা জাতিকে জিম্মিতে পরিণত করেছে। তারা খবর পেয়েছেন ১ লাখ মানুষকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেফতার হয়েছে ১২ হাজার। গুম, খুন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না। সরকার সংসদকে প্রহসনে পরিণত করেছে। গৃহপালিত বিরোধী দল রেখে সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছে। সরকার প্রশাসনকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে রেখেছে। দুর্ভাগ্য, তারা বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করতে সব ধরনের চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন ফখরুল ইসলাম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করাই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আগামী নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সারা দেশের মানুষ যেমন এই দাবিতে একমত, সারা বিশ্বও বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। তফসিল ঘোষণার আগে আমাদের সকল দাবি পূরণ করতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচন করে এ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে খালেদা জিয়ার মতো ভূমিকা পালন করতে হবে। অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। তাকে মুক্ত করে গণতন্ত্রের লড়াই এগিয়ে নিয়ে, সব দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি। খালেদা জিয়াকে নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তার সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে বলেন, খালেদাকে মুক্ত করে নির্বাচনে গিয়ে তাকে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী করবেন। মানববন্ধন শেষে ১৫ মিনিট আগে হুড়োহুড়ি করে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্থান ত্যাগ করেন। গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মানববন্ধন থেকে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন মানববন্ধন থেকে ৪০-৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কর্মসূচীতে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, বরকতউল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের নুরুল ইসলাম খান নাসিম, ছাত্র দলের রাজীব আহসান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান মানববন্ধনে বক্তব্য দেন। সোমবার বিকেলে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন ঢাকাসহ সারাদেশের মানববন্ধন থেকে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ও গাজীপুর, বাগেরহাট ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করতে আসা ও যাওয়ার পথে সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশ বাহিনী বিনা উসকানিতে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে, নির্বিচারে গ্রেফতার করেছে। এই গ্রেফতারে রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষসহ নেতাদের গাড়ি চালকও।
×