ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাতার থেকে দ্বিতীয় চালানে এলো এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার

এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধিতে গ্যাস সঙ্কট কাটছে চট্টগ্রামে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধিতে গ্যাস সঙ্কট কাটছে চট্টগ্রামে

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) পাইপ লাইনে যুক্ত হয়েছে আরও ২শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস)। সোমবার এই সংযুক্তির মধ্য দিয়ে এলএনজি সরবরাহ দৈনিক ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হলো। সাপ্লাই বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক ক্ষেত্রে গ্যাস সঙ্কট দ্রুতই কেটে যাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজারের মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে সোমবার ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রামের আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় নির্মিত সেন্ট্রাল জেনারেটিং স্টেশনে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে সেই গ্যাস সংযোজিত হয় কর্ণফুলীর পাইপ লাইনে। চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলক এলএনজি সরবরাহ শুরু হয় গত ১৮ আগস্ট। প্রথমে ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ হচ্ছিল। সোমবার থেকে তা বেড়ে হয়েছে তিনগুণ। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমেদ মজুমদার জনকণ্ঠকে জানান, সকাল ৮টায় এলএনজি সরবরাহের কাজ শুরু হয়। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে লাইনে সরবরাহ ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে এ সরবরাহ দৈনিক ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হবে। এতে চট্টগ্রামে আবাসিকের পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাস সঙ্কট দূর হবে। চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট নিরসনে শিল্পোদ্যোক্তা ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এলএনজি আমদানির দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। গ্যাসের অভাবে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন ব্যাহত হচ্ছিল। স্থাপনা করা অনেক শিল্প কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছিল না। এই সঙ্কট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১০ সালে গৃহীত হয় এলএনজি প্রকল্প। এরপর ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়। এর দুই বছরের মধ্যেই মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হয় এলএনজি টার্মিনাল। মধ্যপ্রাচ্যের কাতার থেকে প্রথম দফায় গত ২৪ এপ্রিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯শ’ ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে যে জাহাজটি মাতারবাড়ি উপকূলে আসে, সেটিই ব্যবহৃত হচ্ছে ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে। গত ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে আসে দ্বিতীয় জাহাজ। এই জাহাজ থেকে ভাসমান টার্মিনালে এলএনজি স্থানান্তরের কাজ চলছে বাংলাদেশ রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায়। কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, দৈনিক ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্রহণ ও সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে সংস্থাটি। তন্মধ্যে এ পর্যন্ত ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট যুক্ত হয়েছে। মূলত চট্টগ্রামের চাহিদা মেটানোই এলএনজি আমদানির উদ্দেশ্য। এদিকে, আমদানি করা এলএনজি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কমানো হচ্ছে। ফলে প্রকৃতপক্ষে গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। কেজিডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এমনই হওয়ার কথা ছিল। নিজস্ব গ্যাস না থাকায় কর্ণফুলীকে এতদিন ধরে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস দেয়া হচ্ছিল। এলএনজি সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস পাওয়া কমতে থাকবে। এক পর্যায়ে জাতীয় গ্রিডের গ্যাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আমদানি করা এলএনজিতেই চলবে চট্টগ্রাম। সেই পরিকল্পনা নিয়েই গৃহীত হয়েছে এলএনজি প্রকল্প। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে শিল্প, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক মিলে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৪৮০ থেকে ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। কেজিডিসিএল সরবরাহ করতে পারত সর্বোচ্চ ২৮০ থেকে ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। চট্টগ্রামের সেমুতং গ্যাস ক্ষেত্র থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কর্ণফুলী গ্যাসের সরবরাহ ব্যবস্থা সঙ্কটের মুখে পড়ে যায়। জেলায় সব মিলিয়ে গ্রাহক ৫ লাখ ৮০ হাজার। শিল্প, বাণিজ্যিক, সার কারখানা, বিদ্যুত কেন্দ্র ও চা বাগানের মতো বৃহৎ গ্রাহকের সংখ্যা ৪ হাজার ৯২। রি-ফুয়েলিং স্টেশন রয়েছে ৭০ থেকে ৮০। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম এ বিষয়ে বলেন, চট্টগ্রামে গ্যাসের অভাবে শিল্পোৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। শুধু উৎপাদন নয়, শিল্পায়নও থেমে গিয়েছিল। এলএনজি আমদানির জন্য ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে দাবি ছিল। সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সে দাবি পূরণ করেছে। এলএনজি প্রকল্প পুরো সক্ষমতায় বাস্তবায়িত হলে এ সঙ্কট কেটে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। বিদ্যুত, সারসহ সর্বক্ষেত্রে গ্যাসের হাহাকার কেটে যাবে।
×