ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশের জীবন রহস্য

প্রথম কৃতিত্ব কার- ঢাবি না বাকৃবির

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রথম কৃতিত্ব কার- ঢাবি না বাকৃবির

বাকৃবি সংবাদদাতা ॥ একদিনের ব্যবধানে পৃথক পৃথকভাবে জাতীয় মাছ ইলিশের জীবনরহস্য আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল ইলিশ মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন শুক্রবার এমন সংবাদ পরিবেশন করে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা। পরের দিন সকালে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করেন তারাই প্রথম ইলিশ মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন। পরে বিষয়টি নিয়ে দেশের বিজ্ঞানী মহলে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। এমন অবস্থায় জাতীয় মাছ ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সামনে এই ঘোষণা দেন তারা। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ আগে প্রকাশিত হলেও তারাই প্রথম করেছেন এমন দাবি থেকে কিছুটা হলেও সরে এসেছে তারা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে প্রথমবারের মতো ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং ডি নোভো এসেম্বলি সম্পন্ন শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গবেষকদলের সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মুহাঃ গোলাম কাদের খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আকবর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ জসিমউদ্দিন খান, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদসহ ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী গবেষকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও বৈজ্ঞানিকবৃন্দ। অনুষ্ঠানের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম ইলিশ মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছে এই বিষয়ে প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন গবেষক দলের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মোঃ সামছুল আলম ও সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মোঃ বজলুর রহমান মোল্যা। তারা বলেন, বিশ্বে ইলিশের জিনোম ডাটার প্রথম ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’ (এনসিবিআই) রেজিস্ট্রেশন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। বিশ্ববিদ্যালয় এই রেজিস্ট্রেশন পায় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। এর আগে কেউ ইলিশ জিনোমের কোন ডাটা এনসিবিআইয়ে জমা দেয়নি। পরে এই জিনোম ডাটাগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে এ্যাসেম্বলি কাজ করেন গবেষকরা। আজকের সোমবার দিনটিকে নির্ধারণ করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম গবেষণায় অভিজ্ঞদের আমন্ত্রণপত্র পাঠায় তারা। আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর ঠিক একদিন পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ইলিশ মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে গবেষকরা বলেন, আবিষ্কারটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য অনেক দিন যাবত কাজ করছি। যখনই আমরা অনুষ্ঠান আয়োজনের তারিখ নির্ধারণ করলাম দেখা গেল অন্য কেউ একটি মাত্র জাতীয় দৈনিকে তাড়াতাড়ি একটা প্রতিবেদন ছাপাল। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা গবেষণাটি অনেক আগে সম্পন্ন করেছি এই বিষয়ে বিভিন্ন প্রমাণ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটা সুপার কম্পিউটার আছে যা অনেকেরই অজানা আর আমাদের গবেষণায় এটা ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে। ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনে অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন বক্তারা। বক্তারা বলেন, ইলিশের জিনোম আবিষ্কার একটা নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এর সুফল পেতে ধারাবাহিক গবেষণা এবং সময়ের প্রয়োজন। ইলিশ মাছ রক্ষায় আমাদের দেশে অনেক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে -যেমন অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা, নির্দিষ্ট সময়ে এ মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অনেক বিতর্ক আছে। পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য নিয়ে গবেষণা করে এসব বিতর্কের সমাধান করা সম্ভব হবে। দেশে জাতীয় মাছ ইলিশের জীবনরহস্য কে প্রথম উন্মোচন করেছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক দলের সমন্বয়ক প্রধান অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, একটি গবেষণা একই সময়ে অনেকেই করতে পারে। আমার কাজ বা কারও কোন কাজ নিয়ে কোন বিতর্ক হোক আমি চাই না। আমরা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করি আর বিজ্ঞান আমাদের এখানে খুব কমই আলোচিত হয়। আলোচনা যেটুকু হয় সেটা নেতিবাচক না হলেই আমাদের জন্য ভাল। তাই আমি আর কোন আলোচনাই চাই না।
×