ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধারাবাহিক জেলা উপজেলা সফর করবেন আওয়ামী লীগ নেতারা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ধারাবাহিক জেলা উপজেলা সফর করবেন আওয়ামী লীগ নেতারা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এর ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের আগে দেশের সকল জেলা-উপজেলা সফর করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন সৃষ্টি করতে কেন্দ্র কমিটি গঠন ও উঠান বৈঠকের জন্য স্থানীয় নেতাদের দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে দলে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। চলতি সপ্তাহেই তিন জেলায় যাচ্ছে শোকজ লেটার। কলহ কোন্দলের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের মনোনয়ন না দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সহিংসতা রোধে ২২ জেলায় বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, গত ১০ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে বর্তমান সরকার। গড়ে তুলেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে গ্রাম পর্যন্ত। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের জনপ্রিয়তা যাচাই করা জরুরী বলে মনে করেন তারা। সেইসঙ্গে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতৃত্বে দূরত্বের দেয়াল ভাঙতে চান দলটির নেতারা। গত ৩১ আগস্ট সিলেট সফর করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেখানে সিলেট বিভাগের সকল জেলা-উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। সেখানে আহমদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে বড় বড় কথা বলবেন আর ইলেকশন এলে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করবেন তা চলতে দেয়া হবে না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে যারা বেঈমানি করে যারা ধানের শীষের গান গাইবেন তাদের চিহ্নিত করা হবে। খালেদা জিয়ার আওয়ামী লীগ আমরা রাখব না। তিনি দলের সুযোগ সন্ধানী নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘খবর আছে কিন্তু খবর আছে।’ এরপর গত শনিবার নির্বাচনী ট্রেনযাত্রা শুরু করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। উত্তরবঙ্গগামী এই সফরে ১১টি পথসভা ও একটি কর্মী সমাবেশ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিটি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরার নির্দেশ দেন। বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় আসলে দেশের শতভাগ উন্নয়ন করা হবে। নির্বাচনের আগেই বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে গোটা দেশ। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা যাচাই প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা মানুষের কাছে যাব। তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়েছি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলার। কেন্দ্র কমিটি ও উঠান বৈঠক করার। এ ধরনের কর্মসূচী মাটি ও মানুষের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে ও শক্তি জোগাবে। তিনি বলেন, চলতি মাসে আরও একাধিক সাংগঠনিক সফর রয়েছে। ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর নৌ-পথে পটুয়াখালী ও বরগুনা, এরপর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সফর করা হবে সড়কপথে। চলতি মাসের শেষের দিকে সড়কপথে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ সফর করার কথা জানান তিনি। কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের উত্তরাঞ্চলের নির্বাচনী ট্রেনযাত্রায় পথে পথে লাখ-লাখ মানুষ হয়েছে। নাটোরের জনস্রোত অবিশ্বাস্য। পথসভা থেকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার সূচক আমরা নির্ধারণ করতে পেরেছি। প্রমাণ হয়েছে মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থাশীল। আমাদের প্রতি সকলের বিশ্বাস আছে। অথচ বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেই। তিনি বলেন, মাঠের বাস্তবতা প্রমাণ করে আমাদের জনপ্রিয়তা আছে কি নেই। ট্রেন যাত্রায় ১১টি সভা হয়েছে। প্রতিটি সভায় উপচেপড়া মানুষের ভিড় ছিল। দুটি অনির্ধারিত সভা করতে হয়েছে। কারণ যাত্রী নামানোর জন্য ট্রেন থামানোর পর লাইনের ওপর হাজার হাজার মানুষ শুয়ে পড়েছিল। তাদের দাবি ছিল আওয়ামী লীগের নেতারা ট্রেন থেকে নেমে কিছু বলুক। আমরা তাদের হতাশ করিনি। ট্রেন থেকে নেমে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেন, আমরা এসেছি এতেই জনতার বাঁধ ভাঙ্গা স্রোত। যদি দলের সভানেত্রী আসেন কত লোক হবে। নির্বাচনী সফরের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরের অর্জন মানুষ কিভাবে নিচ্ছে তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করা। আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সমর্থন কতটা বেড়েছে, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের কতটুকু আস্থা ও বিশ্বাস আছে এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা নেয়া। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী সফরের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে যদি কোন দেয়াল ওঠে সে দেয়াল ভেঙে সেতু নির্মাণ করা। সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়িয়ে মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐক্যের সেতু গড়তে চাই। তিনি বলেন, জনতার সঙ্গে সম্পর্কের সেতু না থাকলে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। তাছাড়া ঐক্য সুদৃঢ় হবে না।
×