ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাঁটি অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ভাগ চায় ॥ মাগুরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঘাঁটি অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ভাগ চায় ॥ মাগুরা

সঞ্জয় রায় চৌধুরী, মাগুরা ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। তাই দম ফেলানোর সময় নেই বড় বড় রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। তাই জেলার দুটি আসনেই নির্বাচনের দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে কোন্ দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি থেকে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাগুরায় জাতীয় সংসদের দুটি আসন রয়েছে। আর এই দুটি আসনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। আগামী নির্বাচনেও এ দুটি আসন নিজেদের দখলে রাখতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে আসন দুটিতে ভাগ বসাতে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। সাংগঠনিক দিক দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অন্য রাজনৈতিক দল থেকে এগিয়ে। জেলা বিএনপির মধ্যে দুটি শক্তিশালী গ্রুপ প্রকাশ্য থাকায় তারা সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। সবার পূর্বে মাগুরায় আসন্ন জাতীয় সংসদের দুটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন। মাগুরা-১ আসনে মাওলানা নাজিরুল ইসলাম এবং মাগুরা-২ আসনে মুফতি মোস্তফা কামাল আগামী নির্বাচনে হাতপাখা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মাগুরা-১ (মাগুরা সদর ও শ্রীপুর) ॥ মাগুরা সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা এবং শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ নির্বাচনী আসন। আসনটি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি। আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি দীর্ঘদিন থেকে নিয়মিত এলাকায় আগমন এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে তার অবস্থান শক্ত করে নিয়েছেন। নেতাকর্মী ও জনসাধারণের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ও সভা সমাবেশ করছেন। মাগুরায় মেডিক্যাল কলেজ ও রেললাইন স্থাপনে তার রয়েছে অবদান। নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে তার দারুণ জনপ্রিয়তা। তার বাবা মরহুম এ্যাডভোকেট আছাদুজ্জামান মাগুরা-২ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। মনোনয়ন দৌড়ে তিনি এগিয়ে আছেন বলে তার সমর্থকদের ধারণা। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব)এটিএম আব্দুল ওয়াহাব। তিনিও এলাকায় নিয়মিত আসছেন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন। সাবেক এমপি ডাঃ এমএস আকবরের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ছাত্র নেতা পংকজ সাহা এলাকায় নিয়মিত আসছেন ও গণসংযোগ করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তুখোড় ছাত্র নেতা এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে এলাকায় তিনি সুপরিচিত। তিনিও মনোনয়ন লাভের জন্য চেষ্টা করছেন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে জাপা কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা সম্পাদক এ্যাডভোকেট হাসান সিরাজ সুজা মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন। তিনি নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন এবং নেতাকর্মী ও জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি এই আসনের একজন শক্ত প্রার্থী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এলাকায় একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন । বিএনপি থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কবীর মুরাদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক-আহসান হাবিব কিশোর, সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল আখতার খান কাফুর, শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বদরুল আলম হিরো প্রমুখ মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন। কবীর মুরাদ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এলাকায় মানুষের সঙ্গে তার রয়েছে নিয়মিত যোগাযোগ। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ফলে তার সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। জেলার সর্বত্র শোভা পাচ্ছে তার পোস্টার। তিনি মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন। মাগুরা-২ আসন (মহম্মদপুর, শালিখা ও মাগুরা সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন) ॥ এই আসনটিও আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি। এই আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার। এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে রয়েছে তার অবদান। অনেক দিন থেকেই তিনি এলাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন। সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে এলাকায় তার একটা ভাল অবস্থান রয়েছে। এই আসনে তিনি একজন শক্ত প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চু এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। সেই নির্বাচনে বিএনপির নজিরবিহীন কারচুপি হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন হয়। তিনি এলকায় গণসংযোগ করছেন। তার বাবা মরহুম এ্যাডভোকেট আছাদুজ্জামান এই আসন থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের পিপি কামাল হোসেন, মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, সাবেক ছাত্র নেতা এ্যাডভোকেট ড. ওহিদুর রহমান টিপু দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য চেষ্টা করছেন। কামাল হোসেন নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন ও গণসংযোগ করছেন। এলাকায় তার ভাল অবস্থান রয়েছে। এলাকায় একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। তিনি মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন । মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নানের এলাকায় ভাল অবস্থান রয়েছে। সাংগঠনিকভাবে তারও দক্ষতা রয়েছে। ইতোপূর্বে তিনি এমপি পদে নির্বাচন করেছিলেন এবং এলাকায় তিনি নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। তিনি মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন । সাবেক ছাত্র নেতা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক কূটনীতিক এ্যাডভোকেট ড. ওহিদুর রহমান টিপু এলাকায় একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। তিনি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এবার তিনিও মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন এবং এলাকায় তিনি নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাগুরা-২ আসনে মুফতি মোস্তফা কামালকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংগঠনের মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার অন্যতম সদস্য ও ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মুফতি মোস্তফা কামাল চরমোনাই পীরের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে পাখা প্রতীকসহ ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগিয়েছেন এলাকায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে প্রায় ১১ হাজার ভোট পেয়েছিলেন যা বিএনপির প্রার্থী নিতাই রায় চৌধুরীর পরাজয়ের অন্যতম কারণ হয়েছিল। চরমোনাই পীরের মুরীদ ও ইসলামী আন্দোলনের সকল স্তরের নেতাকর্মী ও দেশপ্রেমিক ধর্মপ্রাণ মানুষের সমর্থন নিয়ে মোস্তফা কামাল সভা, বৈঠক, জলসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সালিমুল হক কামালের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের এলাকায় ভাল অবস্থান রয়েছে। সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে এলাকায় তার অনুগামী নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। জেলা বিএনপির একটা বড় অংশ তার পক্ষে রয়েছেন। তিনি একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকলেও তার পক্ষে নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীও নিয়মিত এলাকায় আসছেন ও গণসংযোগ করছেন। এই আসনে তিনি একজন শক্ত প্রার্থী হিসেবে পরিচিত।
×