ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্টের হামলার প্রধান হোতা তারেক রহমান

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

২১ আগস্টের হামলার প্রধান হোতা তারেক রহমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন চারদলীয় জোটের শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২১ আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তৎকালীন সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ হাওয়া ভবনে বসে এ হামলার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করা হয়। এতে হাওয়া ভবন কার্যালয়ের কর্ণধার তারেক জিয়া (তারেক রহমান) সরাসরি সম্পৃক্ত। তিনি পেছন থেকে সমস্ত কলকাঠি নেড়েছেন। তারেক রহমানের আশ্বাসে ও সহযোগিতায় ভয়াবহ ওই হামলা ঘটানো হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান রূপকার হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। হাওয়া ভবনসহ ১০টি স্থানে ২১ আগস্ট হামলার ষড়যন্ত্রমূলক সভা ও পরিকল্পনা করা হয়। যাতে সরকারের মন্ত্রীসহ তাদের অনুগত প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলাকারীরা হামলা ঘটিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক পেশকালে সোমবার এ কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার মোশাররফ হোসেন কাজল তার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক তুলে ধরবেন। এর পর চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান আইনী পয়েন্টের ওপর বক্তব্য তুলে ধরবেন। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ওই ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মোঃ আবু আব্দুল্লাহ্ ভ্ুঁইয়া, এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, এ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, আশরাফ হোসেন তিতাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে আইনজীবী এসএম শাহজাহান, নজরুল ইসলাম, মাসুদ রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মামলার কার্যক্রম শেষে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, মামলায় আজ (সোমবার)সহ মোট ২৬ কার্যদিবস রাষ্ট্রপক্ষ এবং ৮৯ কার্যদিবস আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ করেছে। সোমবার ছিল মামলার যুক্তিতর্ক পেশের ১১৫তম দিন। তিনি বলেন, এ মামলার অধিকতর তদন্ত বিষয়ে আইনগত ও পদ্ধতিগতভাবেই করা হয়েছে। এখানে কোন আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন। মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় দফায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার ক্ষেত্রেও কোন আইনগত ব্যত্যয় ঘটেনি। এর আগে গত ৫ আগস্ট টানা ৮৯ কার্যদিবসে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করেছে। এরপর ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক পেশ শুরু করেন। প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা বলেন, মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর পলাতক ১৮ আসামির বিষয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে তাদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ সব ধরনের আইনী প্রক্রিয়া শেষে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। এরমধ্যে যাদের বিষয়ে আইনে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার মতো ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিল। এ আইনজীবীরা পলাতকদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আসামিরা হলেন-মাওলানা তাইজউদ্দিন, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মোঃ হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহামন, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোঃ খলিল, মোঃ ইকবাল, মাওলানা লিটন ও মুফতি আবদুল হাই। তিনি আরও বলেন, পলাতক ১৮ জনের মধ্যে চারজন আসামির বিষয়ে ‘রাষ্ট্র নিযুক্ত’ আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়নি। তারা হচ্ছেন-আসামি সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। এ চার আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদ- হতে পারে এমন কোন ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তারা ‘স্ট্যাট ডিফেন্স বা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, গ্রেফতার ও পলাতক মিলিয়ে মোট ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্কে বলেন, যারা দেশ পুনরায় পাকিস্তান তথা ১৯৪৭-এ ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল তারাই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। হত্যাকারীরা ৭৫-এর ১৫ আগস্ট শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা থেকে বাদ দেয়নি। সে একইভাবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর রক্ত শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্য করা হয়। তৎকালীন সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ হাওয়া ভবনে বসে এ মামলার চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করা হয়। যাতে হাওয়া ভবন কার্যালয়ের কর্ণধার তারেক জিয়া (তারেক রহমান) সরাসরি সম্পৃক্ত। তারেক রহমানের আশ্বাসে ও সহযোগিতায় ভয়াবহ ওই হামলা ঘটানো হয়েছে। হাওয়া ভবনসহ ১০টি স্থানে ২১ আগস্ট হামলার ষড়যন্ত্রমূলক সভা ও পরিকল্পনা করা হয়। যাতে সরকারের মন্ত্রীসহ তাদের অনুগত প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলাকারীরা হামলা ঘটিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ২১ আগস্ট ঘটনা প্রমাণিত। কারা কারা ষড়যন্ত্র করেছে, অর্থ ও গ্রেনেড দিয়েছে, ঘটনা ঘটিয়েছেন তার বিষয়ে আমরা সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তাদের অনেকেই আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গি। ২১ আগস্ট হামলা কোন সাধারণ ঘটনা নয়। সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়েই এ ঘটনার ছক করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী তার যুক্তির পক্ষে বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা ও অপরাধীদের আড়াল করতে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করা হয়েছে। নিরীহ জজ মিয়াকে সম্পৃক্ত করে নাটক তৈরি করে মামলাকে ভিন্নখাতে নেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তার যুক্তিতর্কে মামলায় অধিকতর তদন্ত কিভাবে করা যায় তার আইনী ভিত্তি তুলে ধরেন। আজ রাষ্ট্রপক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল তার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক পেশ করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। ২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ৩ আসামি হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক। আসামিদের মধ্যে ৪৫ জনের যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়। উল্লেখ্য, ওই দিন আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে হামলার সময় দলটির সভানেত্রী ও ওই সময়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করছিলেন। বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যুদ্ধাস্ত্র ভয়াবহ আর্জেস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও দলটির নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক আহত হন। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচ- শব্দে তার শ্রবণ ইন্দ্রিয়তে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। বিচারের মুখোমুখি থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন- বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মোঃ আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।
×