ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তবলীগ নিয়ে ষড়যন্ত্র পাকিস্তানপন্থীদের ॥ মুসল্লিরা সোচ্চার

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তবলীগ নিয়ে ষড়যন্ত্র পাকিস্তানপন্থীদের ॥ মুসল্লিরা সোচ্চার

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ পবিত্র হজ ফেরত মুরব্বিদের ওপর হামলার পর রীতিমতো গেট বন্ধ করে তবলীগ জামাত বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয় কাকরাইল মসজিদের দখল নিয়েছে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী বিরোধী বিতর্কিতরা। তবলীগ নিয়ে রাজনীতি বন্ধের দাবিতে সোচ্চার সা’দের অনুসারীদের মসজিদে প্রবেশেও বাধা দিচ্ছেন। ঘটনায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে মুসল্লিদের মাঝে। ঘটনাকে তবলীগের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন পকিস্তানপন্থীদের চক্রান্ত অভিহিত করে বাংলাদেশে বিশ^ ইজতেমা ও মারকাজ বন্ধের আশঙ্কা করছেন মুসল্লিরা। প্রতিবাদে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসছেন তবলীগের অনুসারী সাধারণ মুসল্লিরা। এদিকে মসজিদ দখল ও হামলাকারীদের বিচারসহ তবলীগ বিরোধী চক্রান্ত বন্ধে সাধারণ মুসল্লিরা প্রধানমন্ত্রী দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তবে তবলীগ জামাতের মূলকেন্দ্র দিল্লী নিজামুদ্দিন মারকাজকে উপেক্ষা করে তবলীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশে তবলীগ নিয়ে রাজনীতি করা চক্রটি। তাদের কারও লক্ষ্য আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন, কারও উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে সহায়তা করা, কারও উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করা। চক্রটি চাচ্ছে তবলীগ জামাতের মূলকেন্দ্র দিল্লী নিজামুদ্দিন মারকাজকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র পাকিস্তানে সরিয়ে নিতে। একটি সঙ্কট তৈরি করে বিশ্ব ইজতেমাকেও পাকিস্তানে সরিয়ে নেয়া তাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে তবলীগে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির জন্যই এখন মসজিদ দখল, হামলা ও মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর বিরুদ্ধে বিতর্কিতরা প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন বলে বলছেন তবলীগের অধিকাংশ শূরা সদস্য, সাথীসহ সংশ্লিষ্টরা। মুসল্লিরা বলছেন, সা’দ বিরোধী অবস্থান থাকলে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিদেশীরা এখানে আসবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এভাবে ধর্মীয় ইস্যুতে মাঠ ঘোলা করাটা অবশ্যই স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছুর ইঙ্গিত বলে মনে করছেন তারা। মুরব্বিরা বলেছেন, আমরা এক হয়ে কাজ করতে চাই। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমাকে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে তাতে আমাদের হতাশা বাড়ছে। পাকিস্তানীরা কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা হোক। এর আগে বহুদিন ধরে সঙ্কট চললেও এবারের অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল শনিবার রাতে। জানা গেছে, মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামসহ কয়েকজন মুরব্বি ও সাথী এবার হজে গিয়েছিলেন। শনিবার রাতে এশার নামাজের পর তার সাদের অনুসারী তবলীগের মুরব্বিরা কাকরাইল মসজিদে প্রবেশ করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন। এ সময় কাকরাইল মসজিদের ভেতরে ছিলেন সা’দবিরোধী পক্ষের মুরব্বি মাওলানা যোবায়ের। কাকরাইল মসজিদের ভেতরের মাদ্রাসার ছাত্ররা বাইরে এসে সা’দ বিরোধীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হাতাহাতির ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। রাতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। বরং মুরব্বিদের ওপর হামলার পর এখন গেট বন্ধ করে মসজিদের দখল নিয়েছে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী বিরোধী বিতর্কিতরা। তবলীগ নিয়ে রাজনীতি বন্ধের দাবিতে সোচ্চার সা’দের অনুসারীদের মসজিদে প্রবেশেও বাধা দিচ্ছেন। কামরাঙ্গীরচরে সা’দপন্থীরা দ্বীনের দাওয়াতের মেহনতের কাজ করতেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। পুলিশ ও দুই ওয়ার্ড কমিশনার সা’দ বিরোধীদের সমর্থন করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মুসল্লিরা। এ নিয়ে তবলীগ জামাতে চলছে উত্তেজনা। মাওলানা সা’দ বিরোধী অংশকে সমর্থন দিচ্ছেন হেফাজতে ইসলামপন্থী কয়েক কওমি আলেম। যাদের কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ হেফাজতের অধিকাংশ নেতাকর্মীও। তবলীগ কর্মী মাওলানা মনসুর আব্দুল্লাহ বলেন, এককভাবে কাকরাইল মসজিদ দখল করে আছে একটি গ্রুপ। মসজিদের ভেতর থেকে আমাদের সাথীদের বের করে দিচ্ছেন। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। রবিবার সকাল থেকে আমাদের অনেক সাথী কাকরাইল মসজিদে যেতে চাইলে তাদের ভেতরে যেতে দেয়া হয়নি। মাওলানা জুনায়েদ সিদ্দিক বলছিলেন, তবলীগ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন পকিস্তানপন্থীরা। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এভাবে ধর্মীয় ইস্যুতে মাঠ ঘোলা করাটা অবশ্যই স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছুর ইঙ্গিত বলে মনে করি। মসজিদ দখলে নেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের ওপর হামলা চালাতে মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি জানান, শান্তিপ্রিয় প্রতিটি মানুষ এসব কর্মকা-ের বিরুদ্ধে। আমরা বাইরে আছি। এসব ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসছেন তবলীগের অনুসারী সাধারণ মুসল্লিরা। তবলীগের অনুসারী মুসল্লিরা মসজিদ দখল ও হামলাকারীদের বিচারসহ তবলীগ বিরোধী চক্রান্ত বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলা ছাড়াও আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হতে পারে। কিন্তু বিশ^ ইজতেমা ও মারকাজ বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার আশঙ্কা কেন করছেন অধিকাংশ শূরা সদস্য, সাাথীসহ মুসল্লিরা? কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, সা’দ বিরোধী অবস্থান থাকলে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিদেশীরা এখানে আসবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। কাকরাইলের মুরব্বিরা বলেছেন, আমরা এক হয়ে কাজ করতে চাই। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমাকে বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে তাতে আমাদের হতাশা বাড়ছে। তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মূল কেন্দ্র ও ইজতেমা পাকিস্তানে সরিয়ে নেয়ার চক্রান্তের ঘটনায়। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইতোমধ্যেই মূলকেন্দ্র দিল্লী নিজামুদ্দিন মারকাজকে উপেক্ষা করার বিষয়ে যে কথা কলেছে তাতে ইজতেমা বাংলাদেশে থাকবে না। মুরব্বিদের আশঙ্কা তবলীগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির জন্যই একটি চক্র এখন নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। জানা গেছে, পরিস্থিতির বিষয়ে গত কিছুদিন আগে তবলীগের বাংলাদেশ শূরা ও সরকারকে শূরা কানাডা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া চিঠি দিয়েছে। এসব চিঠিতে মাওলানা সা’দকে যেন ইজতেমার আমির ও ফয়সালের (সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী) পদ থেকে সরানো না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। তবলীগ জামাতের কানাডা শূরার সদস্য আবির রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা আছে, টঙ্গী ইজতেমায় নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সা’দের অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে আমরা জেনেছি। ‘দিল্লীর নিজামুদ্দিন মসজিদ থেকে শতবর্ষ আগে তবলীগ জামাতের এই যাত্রা ও প্রসারের ক্ষেত্রে মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস (রহ.)-এর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও দোয়ার কথা বিশ্ববাসী জানে।
×