ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কংগ্রেসের নেতৃত্বে যোগ দেয় ২১টি দল, তৃণমূল অংশ নেয়নি

ভারত জুড়ে বনধ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারত জুড়ে বনধ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও রুপীর মূল্য পড়ে যাওয়ায় সোমবার ভারতজুড়ে বনধ পালিত হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এতে নেতৃত্ব দেয়। ছোটবড় ২১টি দল ‘ভারত বনধ’ কর্মসূচীতে অংশ নেয় বলে কংগ্রেস দাবি করেছে। বিহার ও গুজরাটসহ কয়েকটি রাজ্য থেকে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ এদিন তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও রুপীর দরপতনের ঘটনায় ভারতের রাজনীতি উত্তপ্ত করে তুলেছে। সোমবার কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২১টি দল ভারত বনধ অংশ নেয়। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত নয়াদিল্লীর রাজঘাট থেকে এই কর্মসূচীতে অংশ নেন। রামলীলা ময়দানে মিছিল শেষে এক সমাবেশে যোগ দেন কংগ্রেসসহ বিরোধী দলের নেতারা। এদের মধ্যে ছিলেন মনমোহন সিং, সোনিয়া গান্ধী, গোলাম নবী আজাদ, শারদ পাওয়ার ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে মনমোহন বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই সরকারের পরিবর্তন আসন্ন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি সরকার ইতোমধ্যে বহু জনবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং তারা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ঐক্য ও শান্তির স্বার্থে আমরা সবাই একসঙ্গে পথে নেমেছি।’ এর আগে শুক্রবার মোদির সমালোচনা করে বলেন, তার সরকারের দেয়া তথ্য পরিসংখ্যান দেখে মানুষ মোটেও সন্তুষ্ট নয়। পাশাপাশি, দেশজুড়ে সহিংতার বিস্তার এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ যেভাবে নষ্ট হয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করেন মনমোহন। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও দিল্লী থেকে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এসব সংঘর্ষে ৭ জন মারা গেছে। এর আগে মধ্যপ্রদেশের পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে উত্তাল। দলিত সংগঠনগুলোর সঙ্গে পুলিশে খ-যুদ্ধে সেখানে ৫ জন নিহত হয়। আহত হয় ৬ জন। বনধ সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের রূপ নেয় মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী। সেখানে একটি পেট্রোল পাম্পে ভাংচুর চালায় কংগ্রেস সমর্থকরা। পুলিশ তাদের সরাতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। তাতে আহত হন এক কংগ্রেস সমর্থক। পাঞ্জাব ও উড়িষ্যা থেকেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর এসেছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার দলিতদের দাবিকে সমর্থন করার পর তার রাজ্য থেকে সংঘর্ষের খবর এসেছে। সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, এনসিপি, ডিএমকে, এমডিএমকে এই বনধে যোগ দিয়েছে। জেডি (ইউ)-এর যে অংশটি শরদ যাদবের সঙ্গে রয়েছে, তারাও এতে যোগ দিয়েছে। তবে দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের অন্যতম প্রবক্তা যে তৃণমূল তারা যোগ দেয়নি এতে। পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশজুড়ে বনধ এর ডাক দেয় কংগ্রেস ও বামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে বিরোধীদের ডাকা এই বনধে তেমন প্রভাব পড়েনি কলকাতায়। অন্য দিনের মতো সোমবারও কলকাতার রাজপথগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে শিয়ালদহের বেশ কয়েকটি জায়গায় রেল চলাচলে বাধা দেয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে এদিন শিয়ালদহে দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর বেশিরভাগ সময়মতো পৌঁছে। কংগ্রেস ও বাম দলগুলোর ডাকা ভারত বনধে সাড়া পড়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে অবরোধে যোগ দেয় বনধ সমর্থনকারীরা। বিহার, উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশে ট্রেন ও জাতীয় সড়ক অবরোধের জন্য ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। চন্ডীগড়ে অভিনব প্রতিবাদ করে আম আদমি পার্টি। রাজপথে মিছিল করে রাস্তায় বসে পড়ে আপ সমর্থকরা। তাদের একজন সাজেন বাইকরূপী দৈত্য। সেই দৈত্য গলা টিপে ধরছে আম জনতার। অন্য একজন সেজেছেন ভিখারি। প্রতীকী প্রতিবাদে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে মোদির সময় উর্ধমুখী জ্বালানির দাম ও মূল্যবৃদ্ধিতে ভিখারির মতো পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের।
×