ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

কৃষি অর্থনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর অবদান

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কৃষি অর্থনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর অবদান

উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান ধারায় বাংলাদেশের অব্যাহত সাফল্য দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও কর্মযোগ বিকিরণ করছে। সর্ব সাধারণের মৌলিক চাহিদা ও প্রাপ্য অধিকার পূরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার যে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, তা আজ দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট এবং প্রকাশিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সিংহভাগ অর্থনীতি এখনও কৃষিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। মাছে-ভাতে বাঙালীর চিরায়ত বৈভব শুধু প্রবাদই নয়, এখন সর্বমানুষের দ্বারে তার সুফলও অবারিত। সেই সমূহ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হলো কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের ষষ্ঠ কনভেনশন। ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার কৃষিবিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই বৃহৎ আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় কনভেশন উপলক্ষে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারেরও পরিকল্পনা করা হয়। উদ্বোধন ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের প্রধান এমএ সালেহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং কেআইবি মহাসচিব মোঃ খায়রুল আলম প্রিন্সের বক্তব্যে উঠে আসে কৃষিপণ্যের যথাযথ সরবরাহসহ কৃষকদের ঋণ প্রদান, প্রয়োজনীয় উপাদান সংশ্লিষ্টদের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া ছাড়াও কৃষি অর্থনীতিতে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করাও বিশেষ জরুরী। প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে বাংলাদেশের সফল অভিগমনকে বিবেচনায় এনে অতি আবশ্যিকভাবে প্রান্তিক কৃষকদের মান্নোয়নের ওপর বিশেষ জোর দেন। কৃষিতে যেভাবে প্রবৃদ্ধির জোয়ার দৃশ্যমান তাতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সময়োপযোগী ভূমিকা রাখছে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানী ও গবেষকদের সফল অবদান এ খাতকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, তা আজ পুরো জাতির জন্য এক অভাবনীয় দৃষ্টান্ত। কৃষি অর্থনীতি যদি আধুনিকতা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সময়ের গতিপ্রবাহে শামিল হতে না পারে, তাহলে সার্বিক ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়া ছাড়া পথ থাকে না। সেই লক্ষ্যে ১৯৯৬ সাল থেকেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম নজর দিয়েছিল অবহেলিত, পশ্চাদপদ কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে। স্মরণ করা যেতে পারে, মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে জনগণের একটি প্রধানতম মৌলিক চাহিদাকে সাধারণ মানুষের দ্বারে পৌঁছে দেয়। কিন্তু ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশ আবার পূর্বের খাদ্য ঘাটতি এবং আমদানিনির্ভর অবস্থায় ফিরে যেতে সময় নেয়নি। এ কথা সুবিদিত সফলতাকে মানুষের দ্বারে নিয়ে যেতে অনেক সময় লাগলেও ব্যর্থতায় ফিরে যেতে খুব বেশি দেরি হয় না। ফলে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন হলে দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে বিভিন্ন অঙ্গীকার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করতে হরেকরকম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেখান থেকে শুরু হওয়া নবযাত্রায় বাংলাদেশ অন্তর্নিহিত শক্তির উদ্যমতায় তৈরি হতে থাকে। কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে পড়ে এর যুগান্তকারী ছাপ। অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন সাঙ্গ করে আজ আন্তর্জাতিক বলয়েও বাংলাদেশ নিজের সক্ষমতাকে প্রমাণ করেছে। প্রতিটি উন্নয়ন সূচকে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে বিশেষ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমিক বিশ্লেষণে দেখা যাবে শ্রেণী বিভক্ত সমাজের অবধারিত বৈষম্য ছাড়া দৃষ্টিকটু অনেক ফারাককে সহনীয় অবস্থায় আনা বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী কৃতিত্ব। আমরা যদি কৃষি অর্থনীতিকে দেশের প্রধানতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় বিবেচনায় আনি তাহলে দেখা যাবে এই খাতের সামনে এগিয়ে যাবার ক্রমবর্ধমান গতি। উন্নয়ন দশকের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশ কৃষিতে যে জাগরণ তৈরি করে, সেখানে দেশই শুধু নয় বিদেশেও তা রফতানি করার সুযোগ এবং সক্ষমতা অর্জন করা হয়। সবজি উৎপাদনে বাংলা দেশের সাফল্য আজ আন্তর্জাতিক বিশ্বেও জায়গা করে নিয়েছে। এখানে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একেবারে তৃতীয়। এই সফলতা আয়ত্তে আসার পথপরিক্রমা অত সহজ আর স্বাভাবিক ছিল না। প্রতিপক্ষ শক্তির সহিংস রাজনীতি, ধর্মীয় ও মৌলবাদী উন্মাদনা তার চেয়েও বেশি সরকারের উন্নয়ন রথকে থামানোর অপকৌশল সব মিলিয়ে অরাজক, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু হলেও সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়েছে দেশপ্রেম আর সাধারণ মানুষের প্রতি মমতা আর দায়বদ্ধতায় তাকে সফলভাবে অতিক্রম করতে। প্রতিকূল ভৌগোলিক পরিবেশ কতভাবেই না বিঘিœত করে স্বাভাবিক ফসল উৎপাদন। সেখানেও দেশের প্রান্তিক চাষীদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হয়েছে। পাশে সাহায্যের হাত বাড়ায় সরকার। গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ কৃষকরা খরা, জলমগ্নতা, লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনে প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে বিরূপ জলবায়ুকে জয় করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ফলদ বৃক্ষ ও উচ্চফলনশীল জাত শস্যবীজ উদ্ভাবন করে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। এবার বর্ষার মৌসুমে বৃক্ষরোপণ উৎসবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ৩০ লাখ গাছ রোপণ করে ক্রমবর্ধমান কৃষিখাতকে আরও জোরালো করেছেন। আর কৃষকদের প্রতি শেখ হাসিনার সচেতন দৃষ্টি নিবদ্ধতা প্রান্তিক চাষীদের যে মাত্রায় সুযোগ-সুবিধা আর প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন, তা শুধু হতদরিদ্র উৎপাদক শ্রেণীর জীবনমানই বাড়িয়ে দিচ্ছে না, পাশাপাশি দেশকে স্বয়ংম্ভরতার দিকেও এগিয়ে নিচ্ছে। কৃষির জন্য উপযোগী সহায়ক সমস্ত উপাদান, সার, বীজ, সেচপ্রকল্প, স্বল্পসুদে ঋণ ব্যবস্থা, ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিং সবই আজ গ্রাম-গঞ্জের কৃষকদের হাতের নাগালে। উন্নয়ন সহযোগী সার্বিক ব্যবস্থাপনা হাতের মুঠোয় আসতে না পারলে সচেতন এবং আগ্রহী কৃষকরাও উৎপাদনে অনীহা প্রকাশ করে। সেখানে সরকারের অভাবনীয় উৎসাহ, উদ্দীপনাই শুধু নয় বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রান্তিক কৃষকদের সমৃদ্ধ করার অন্যতম নিয়ামক শক্তি। এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাষীরা যাতে আরও নতুন উপকরণ আর উদ্যমে কাজ করতে পারে সেজন্য ভাসমান কৃষিক্ষেত তৈরির প্রতিও সরকারের নজর রয়েছে। ইতোমধ্যে যা গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় পরীক্ষামূলক হিসেবে শুরু করা হয়েছে। এসব অঞ্চলে কচুরিপানার ওপর শক্ত প্রলেপ তৈরি করে ফসল উৎপাদনে চাষীরা কাজ করছেন। ক্রমান্বয়ে সারাদেশে তা সম্প্রসারিত করা হবে। এ ধরনের নতুন কিছু কৃষিপণ্যের নব উদ্ভাবনে বাংলাদেশের কোন পতিত জায়গা যদি অনাবাদি পড়ে না থাকে, তাহলে কৃষিতে স্বর্ণযুগ আসতে সময় নেবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন সাপেক্ষে ‘একটি ঘর, একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক চাষীদের প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় আরও একমাত্রা যোগ করা হয়েছে। এছাড়া পল্লী ব্যাংক সঞ্চয়ের অধীনে কৃষকরা ১০০ টাকা সঞ্চয় করতে পারলে প্রায় সমপরিমাণ টাকা সরকার থেকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে। সঞ্চয়ের আগ্রহ বাড়লে ব্যক্তিগত পুঁজি গড়ে উঠতে বিশেষ সহায়ক হয়। তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভাব বাড়ে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়, দেশেও সমৃদ্ধির দ্বার উন্মোচন হয়। কৃষি অর্থনীতিকে আরও আধুনিক করতে সরকার আরও ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কৃষি উপযোগী উর্বর পলিমাটি আর নদীবিধৌত ও বৃষ্টিস্নাত বাংলার অকৃত্রিম এবং পরিশোধিত পানির সমন্বয়ের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতির ক্ষেত্রকে আরও শাক্তিশীল করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। শ্যামল বাংলার প্রকৃতির অফুরন্ত দান যেমন সর্বমানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গ হয়েছে, একইভাবে বিভিন্ন গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি আর আবিষ্কারকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য জাতীয় মাছ ইলিশের জীবনরহস্য উদ্ভাবনে বাংলাদেশের মৎস্য বিশেষজ্ঞদের নবতর আবিষ্কার দেশের সম্ভাবনার দ্বারা উন্মোচন করবে। সঙ্গত কারণে এসেই যায় নদীস্নাত বাংলার মৎস্য সম্পদের সীমাহীন প্রাচুর্য। হরেকরকম প্রজাতির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রান্তিক চাষীদের আবশ্যিক ভূমিকা এই শিল্পকে বিশ্বের দরবারেও পৌঁছে দেয়। শুধু তাই নয় অতিবৃষ্টি, বন্যা আর নদ-নদীর প্রবাহিত জলসম্পদে বাংলায় যে প্লাবন-ভূমি তৈরি হয়, সেখানে বৈচিত্রিক মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। সামগ্রিক মৎস্য শিল্পে আমরা পৃথিবীতে তৃতীয়তম স্থানে। প্রকৃতি আর জীববৈচিত্র্য তার নিজস্ব নিয়মে চলে এবং তার আশপাশের মানুষদের জীবনযাত্রাও সেই মাত্রাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ পোনা থেকে যখন স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যায় সেখানে তাকে পরিপুষ্ট করে না তোলা পর্যন্ত সুস্বাদু-সুষমায় পরিণতি লাভ করে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানেও মাছ চাষীদের সতর্ক এবং সাবধানই করেননি, প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে অপরিণত ইলিশকে ধ্বংসের হাত থেকেও বাঁচিয়েছেন। পূর্ণতার একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ক্ষুদ্রাকার ইলিশ জালে তোলা একেবারেই নিষিদ্ধ। সবজায়গায় হয়ত বা নিয়মটা মানা না হলেও অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে এবং বাংলাদেশ সুস্বাদু ও পরিপুষ্ট ইলিশ উপহারও পেয়েছে। যে ইলিশের চাহিদা পৃথিবীজুড়ে। যা বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। কৃষিভিত্তিক মৎস্য সম্পদের দেশ আমরা। স্বাস্থ্য সম্পদেও মাছের অভাবনীয় ভূমিকার কোন তুলনা নেই। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে চিকিৎসকরা অভিমত ব্যক্ত করেন। শস্য উৎপাদনে সরকারের যেমন নানামাত্রিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়, একইভাবে মাছের চাষাবাদ প্রক্রিয়ায়ও বিভিন্ন কর্মসূচী প্রণয়ন করে এই খাতকে তার অবস্থানে জোরালো করা হয়। প্রাসঙ্গিক, ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে বর্তমান সরকার মৎস্য শিল্পের সমৃদ্ধ আঙ্গিনাকে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ গতিপ্রবাহে সামিল করতে আবশ্যিক প্রণোদনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক চাষীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ এসব প্রান্তিক কৃষক শ্রমিকের ব্যাপক অংশগ্রহণ, অর্থায়ন এবং সরকার গৃহীত নানাবিধ প্রকল্পের আওতায় দেশের কৃষি অর্থনীতি যেভাবে সফলতার দিকে এগিয়ে গেছে একইভাবে উন্নয়নের বাকি খাতগুলোতে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে সময় লাগেনি। কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার বীজ বপন সভ্যতাসূর্য উদয়ের শুভক্ষণ। আজ অবধি সেই কৃষি সভ্যতাই দেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রার নিয়ামক। ভূমিনির্ভর কৃষি অর্থনীতি ফসলের আবাদকেই কেন্দ্র করে সফলতার মুখ দেখে। সেই সমৃদ্ধি মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে কুক্ষিগত হলে সামগ্রিক উন্নয়নের জোয়ার দৃশ্যমান হয় না। সিংহভাগ মানুষের জীবনযাত্রার মানও বাড়ে না। শুধু তাই নয়, আর্থ-সামাজিক মানদ-ে আন্তর্জাতিক সীমানায়ও তার অবস্থান নির্ণীত হয় না। কৃষিজাত পণ্য যেমন ধান, সবজি আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের খ্যাতি আজ বিশ্বব্যাপী। ধান উৎপাদনেও বাংলাদেশ পৃথিবীতে চতুর্থতম। এসব অর্জনগুলো কখনোই বিশ্ব প্রতিবেদনে ওঠে আসত না, যদি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে তার সফল পদচারণা নির্ণীত না হতো। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গবেষণায় বাংলাদেশ যখন উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে নিজের অংশীদারিত্ব জোরালোভাবে প্রমাণ করে, তখনই বুঝতে হয় সব মানুষকে নিয়েই জাতি এগিয়ে যাচ্ছে। এই অভাবনীয় সাফল্য যেমন গণমানুষের, একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। শিল্পের বিকাশ হচ্ছে, শিক্ষার হার বাড়ছে, লিঙ্গ বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে, উন্নয়নের বিভিন্ন মাত্রায় নারীদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হচ্ছে, বিশেষ করে শিল্প ও প্রযুক্তিতে নারীরা নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরছে অর্থাৎ সব মিলিয়ে সামগ্রিক সমৃদ্ধি দেশ এগিয়ে যাবার সীমানাকে স্পর্শই শুধু নয়, অতিক্রমও করে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন জরিপে সেটা প্রকাশও পাচ্ছে। বস্তুবাদী সমাজ নির্দেশক কাল মার্কস শ্রেণী বিভক্ত সমাজের যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি নির্ণয় করে শোষণহীন অর্থনীতির যে রূপরেখা দিয়েছিলেন, সেখানে বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে কাছে না হলেও খুব দূরে নয়। মার্কস বলেছেন, মূল কাঠামো অর্থনীতির প্রভাব পড়বে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় চেতনা, রাষ্ট্রীক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে জনগণের প্রতিদিনের জীবন মান উন্নয়নের ওপর। উন্নয়নশীল আর মধ্যম আয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা সেই ক্রান্তিকাল পাড়ি দিচ্ছি, যেখানে সামগ্রিক উন্নয়নের সুফল সর্বমানুষের হাতের নাগালে পৌঁছাতে দেরি হলেও এক সময় সবাই তাকে স্পর্শ করতে পারবে। আর সেই যুগান্তকারী অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিস্মরণীয় অবদান একেবারে মাইলফলক। অনুন্নত একটি দেশের হরেকরকম সমস্যাকে উত্তরণ করে উন্নয়নশীল কাতারে নিয়ে যাওয়া, সেও এক বৃহৎ যুগ পরিকল্পনা। দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির অবারিত দ্বার খোলার কৃতিত্ব আরও একজনের ওপর বর্তায়। তিনি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। যার গুরুত্বপূর্ণ কর্মপরিকল্পনা, উদ্যোগ এবং বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপ কৃষি অর্থনীতির হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষক ও শ্রমিকদের যে পরিমান উৎসাহ আর প্রণোদনা দেয়, সেটাও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভূমিনির্ভর সমাজব্যবস্থায় বৈপ্লবিক অবদান রাখে। লেখক : সাংবাদিক
×