ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেক্সিকোয় ম্যারাডোনা- হাজার সমর্থকের অভিবাদন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  মেক্সিকোয় ম্যারাডোনা- হাজার সমর্থকের অভিবাদন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দিয়েগো ম্যারাডোনা মেক্সিকোয় এসেছেন। সর্বকালের সেরা এ ফুটবলার নতুন এক দায়িত্ব নিয়ে কুলিয়াক্যান বিমানবন্দরে নামার পর অগুনিত ভক্ত-সমর্থক তাকে অভিবাদন জানায়। তিনি সিনালোয়া রাজ্যের দ্বিতীয় বিভাগের দল ডোরাডোসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করবেন। কিংবদন্তি এ ফুটবলারকে অভ্যর্থনা জানাতে কয়েক হাজার সমর্থক প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। এমন একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘অভিবাদন সোনালি ঈশ্বর। ম্যারাডোনা তোমাকে ধন্যবাদ, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’ আনুষ্ঠানিকভাবে আজ ক্লাবের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। তবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে করতে ১৭ সেপ্টেম্বর। ওইদিন প্রথম ম্যাচ খেলবে ডোরাডোস। আগাগোড়া কালো কাপড় পরিহিত অবস্থায় বিমান থেকে নামেন ম্যারাডোনা। স্বর্ণালঙ্কারও ছিল তার শরীরে এবং গলায় ঝোলানো ছিল সাদা-কালো ডোরাডোস ক্লাবের স্কার্ফ। কিন্তু উপস্থিত দর্শকদের কারও সঙ্গেই কোন কথা বলেননি ম্যারাডোনা। ক্লাবের কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত আইনজীবীসহ সাংবাদিক ও ভক্তদের ছোট্ট সমুদ্র পেরিয়ে যেতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে তার। এরপর ক্লাবের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সাক্ষাত করেন তিনি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মেক্সিকোর মাটিতেই ম্যারাডোনা শিরোপা জিতিয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে। ৫৭ বছর বয়সী এ মহাতারকা অবশ্য কোচিং ক্যারিয়ারে বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। ডোরাডোস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট জোসে এ্যান্টোনিও নুনেজ বলেন, ‘যখন ডিয়েগোর মতো কেউ এমন জায়গায় আসে তখন আর্থিক প্রস্তাবনার চেয়েও বেশি আসলে মানসিক ইচ্ছার প্রতিফলন বলেই ধরে নেয়া যায়। তিনি ভালই জানেন একেবারে শেষ অবস্থান থেকে শুরু করতে কেমন অনুভূতি হয়, তিনি এমন নিম্নমানের লীগগুলোর মূল্যটা বোঝেন।’ উল্লেখ্য, চলমান লীগে ডোরাডোস ক্লাবটি ১৫ দলের মধ্যে ১৩ নম্বর স্থানে আছে। এই ক্লাবটি আগেই পরিচিতি পেয়েছিল মূলত বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্ডিওলা সেখানেই তার ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছিলেন বলে। ম্যারাডোনার এই ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়াতে অনেক কানাঘুষা চলছে ফুটবল বিশ্বে। কারণ সিনালোয়া রাজ্যটি মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানকার মাদক সম্রাট জোয়াকিন ‘এল চ্যাপো’ গুজম্যান বর্তমানে কারাভ্যন্তরে আছেন। ম্যারাডোনা খেলোয়াড়ী ক্যারিয়ারে এবং জীবনের বিভিন্ন সময়ে মাদকাসক্তির জন্য দারুণ সমালোচিত হয়েছেন। এ জন্য অনেকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন তিনি হয়তো মাদক গ্রহণের সুবিধার জন্যই ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। কারণ ক্লাবের মালিকপক্ষ হ্যাঙ্ক পরিবার মেক্সিকোয় সবচেয়ে লাভজনক এবং ভয়ানক মাদক পাচারকারী কারখানার মালিকানা রয়েছে এমন জোরালো অভিযোগ আছে। পরিবারের প্রধান ৬২ বছর বয়সী জর্জ হ্যাঙ্ক রোন একজন রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী। তিনি তিজুয়ানার মেয়র ছিলেন ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত। তার প্রতিষ্ঠান গ্রুপো ক্যালিয়েন্তের মালিকানা আছে একটি বিশাল ক্যাসিনো, বড় হোটেল এবং তিজুয়ানায় কুকুর দৌড়ের ট্র্যাক। এই প্রতিষ্ঠানটির আছে দুটি ক্লাব- ডোরাডোস এবং তিজুয়ানায় প্রথম বিভাগের জোলোস। তার ছেলে জর্জিয়েলবার্তো হ্যাঙ্ক ইনজুঞ্জা উভয় ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। ২০১১ সালে হ্যাঙ্ক রোনের বাসায় অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৮০টিরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও কয়েক হাজার রাউন্ড গোলাগুলি উদ্ধার করে। ২০০৯ সালেও তাকে এক নারী হত্যা মামলায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। এমন একটি ক্লাবে এবার কেমন করেন ম্যারাডোনা সেটিই দেখার বিষয়। ২০০৮ সালে তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১০ বিশ্বকাপে দলকে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। সেটিই কোচিং ক্যারিয়ারে সেরা সাফল্য ম্যারাডোনার। এছাড়া প্রায় সবখানেই ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
×