ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য গুদাম থেকে পাচার হওয়া চাল গম উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  খাদ্য গুদাম থেকে পাচার হওয়া চাল গম উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ চাল আটা ও গম জব্দ করেছে র‌্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার রাত ৮টা থেকে রবিবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চালানো এ অভিযানে ২১৫ টন চাল গম ও আটা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১০০টন উদ্ধার করা হয় মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে। বাকি পরিমাণ আটক করা হয় গুদাম থেকে বের করার সময় কাওরানবাজার ও কাকরাইল এলাকা থেকে। র‌্যাব ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেছেন- এগুলো গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত খোলাবাজারের পণ্য। এ ঘটনায় গুদাম ম্যানেজার হুমায়ুন কবীরকে প্রথমে আটকের কথা জানানো হলেও র‌্যাব ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেছেন, এখন দুদক তদন্ত করবে। যা করার তারাই করবে। গুদামের একটি শক্তিশালী চক্রই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই ভ্রাম্যমাণ আদালতের সবচেয়ে দীর্ঘ অভিযান। দেশের বৃহত্তম কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম হিসেবে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ও উঁচু প্রাচীরে ঘেরা। দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা এখানে থাকে সশস্ত্র প্রহরী। একটি বৈধ চালানের ট্রাক বের হতে ও প্রবেশ করতে কমপক্ষে ছয়টি পয়েন্টে তল্লাশি করা হয়। কোন ধরনের খাদ্য শস্য কোথায় কি পরিমাণ খালাস করা হয় সেটার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া। এমন নিরাপদ পরিবেশ ভেদ করে কিভাবে ২১৫ টন চাল আটা ও গম খোলাবাজারের পরিবর্তে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পাচার করা হয়েছে তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি গুদাম কর্তৃপক্ষ। র‌্যাব জানিয়েছে, দীর্ঘদিন নজরদারির পর শনিবার রাতে তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম থেকে পাচারকালে ১১৫ টন চাল, গম ও আটা জব্দ করা হয়। আটটি ট্রাকে করে এসব খাদ্যপণ্য পাচার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ওএমএসের এসব চাল, গম ও আটা ঢাকার ১৪০ স্থানে বিতরণের জন্য রাখা হয়েছিল। দীর্ঘদিন থেকে কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতায় চাল, গম পাচার করে আসছিল এই চক্র। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার অভিযানে চার ট্রাক চাল, তিন ট্রাক আটা ও এক ট্রাক গম জব্দ করা হয়। এ সময় ম্যানেজার হুমায়নকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পাচার করা আরও বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। র‌্যাব জানিয়েছে, রাজধানীতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ১৪১টি ট্রাকে করে এসব চাল ও আটা বিক্রি করার কথা। তবে তা না করে চাল ও আটা কালোবাজারে বিক্রি করে দেয় খাদ্যগুদামের অসাধু চক্র। এসবের গন্তব্য ছিল চুয়াডাঙ্গা, শ্রীমঙ্গল ও মাওনা। রাতে প্রথমে কাওরানবাজার থেকে প্রথম চালান আটকের পর রবিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে আরও ১০০ টন চাল ও আটা জব্দ করা হয়। ওএমএসের এসব চাল সরকার কেনে ৩৯ টাকা কেজিতে, বিক্রি করে ২৮ টাকা দরে। আর ৩২ টাকা কেজি দরে আটা কিনে ১৬ টাকায় বিক্রি করে। ওএমএসের এসব পণ্যে সরকার ভর্তুকি দেয়, যাতে এসব পণ্য স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এদিকে কারা এই পাচারের সঙ্গে জড়িত জানতে চাইলে সারওয়ার আলম বলেন, এর আগেও একাধিকবার এই গুদাম থেকে চাল ও গম আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। এ ধরনের পাচারের সঙ্গে গুদামের লোকজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। খোলাবাজারের চাল বিতরণের অজুহাতে বাইরে বিক্রি করে দেয়ার গোয়েন্দা তথ্য থেকেই এ অভিযান চালানো হয়। এ ঘটনায় কাউকে শনাক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে যে সব তথ্য পেয়েছি তাতে গুদাম কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।
×