ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এখনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ॥ আসছে মংডুর নাইক্ষংদিয়া চর থেকে

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 এখনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ॥ আসছে মংডুর নাইক্ষংদিয়া চর থেকে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ এখনও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। ইতোপূর্বে নেমেছিল ঢল। এখন আসছে ফাঁক ফোকরে, গোপনে রাতের আঁধারে। আগে মানবিক কারণে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত খুলে দেয়া হয়েছিল। এখন সীমান্ত সীল করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও নিয়মিত না হলেও ছোট ছোট দলে এরা সাগর পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। শনিবার রাতে টেকনাফের শামলাপুর দিয়ে আশ্রয় শিবিরে ঢুকেছে একদল রোহিঙ্গা। অভিযোগ রয়েছে, পুরনো রোহিঙ্গা মাঝি ও এক শ্রেণীর অসৎ পুলিশের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এরা অনুপ্রবেশ করছে। এখন যেসব রোহিঙ্গা আসছে ওরা সীমান্তের ওপারে মংডুর নাইক্ষ্যংদিয়া চরে জড়ো হওয়া যে দেড় সহস্রাধিক রয়েছে তাদেরই অংশ। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্ত এলাকাজুড়ে বিজিবি ইতোপূর্বেকার চেয়ে বহুগুণ বেশি নজরদারি বলবত রেখেছে। ফলে নাফ নদী বা তুমব্রুর স্থলসীমান্ত এড়িয়ে সাগর পথেই কিছু কিছু রোহিঙ্গা মাঝে মধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, মংডুর নাইক্ষ্যংদিয়ার চরে জড়ো হওয়া দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও বাস্তবতার আলোকে এখনও রাখাইন অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের চলে আসার তৎপরতা লক্ষণীয়। তবে গত শনিবার যেসব রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে এ বিষয়ে সরকারী পক্ষে অর্থাৎ পুলিশ বা বিজিবি কোন সূত্র তা স্বীকার করেনি। সীমান্ত এলাকার সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা কিছু অসৎ পুলিশ সদস্যের সঙ্গে যোগসাজশ করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে। সঙ্গত কারণে স্থানীয়দের পক্ষে জোরালো দাবি উঠেছে, এখনও কিভাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। এমনিতেই উখিয়া-টেকনাফের সার্বিক পরিবেশ স্থানীয়দের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সেখানে সংখ্যায় কম হলেও কিভাবে ভিনদেশী নাগরিকরা এদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ নিচ্ছে তা একটি বড় ধরনের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসার তৎপরতায় লিপ্ত। এর পাশাপাশি এপার থেকে তুমব্রুর ওপারে জিরো লাইনে আশ্রিত ছয় সহস্রাধিক রোহিঙ্গার জন্য নিয়মিত ত্রাণ সহায়তা প্রেরিত হচ্ছে। এ খবর প্রকাশের পর এখনও বন্ধ হয়নি। নানা অভিযোগ ৪৭ এনজিও সরকার পক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম চালাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। সেটিও কঠোরভাবে বলবত না হওয়ায় নিষিদ্ধ হওয়া কিছু এনজিও এখনও তৎপর রয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে তা নিয়ে এখনও সে দেশের চালিকাশক্তি ইতিবাচক ভূমিকায় আসেনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের দ্রুত পুশব্যাকের দাবিতে স্থানীয়দের আন্দোলনে নামার খবরও মিলেছে। উখিয়া টেকনাফের সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে বিজিবির টহল জোরদার থাকায় ওপার থেকে যারাই অনুপ্রবেশ করতে চাইছে তাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে। ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে রাখাইনে কোন সহিংসতার কোন ঘটনা নেই। এরপরও সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের চলে আসার আগ্রহই বেশি লক্ষণীয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজার বিজিবি-৩৪ ব্যাটেলিয়নের উপ অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমানে সীমান্ত সীল অবস্থায় রয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। সাগর পথে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের যে অভিযোগ তা নিয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে কোন সূত্রই মন্তব্য করেনি। তবে এলাকার লোকজন জানিয়েছে, অনিয়মিত হলেও বিভিন্ন সময়ে ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে।
×