ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে ১২৫ বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবি- আলোর মিছিল

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে ১২৫ বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবি- আলোর মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৬২ থেকে ২০১৮। ৫৬ বছর। এই লম্বা সময়ে দেশে ১২৫ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সব কেন্দ্রের সেই ছবি ছোট ছোট ক্যাপশনে একটির পর একটি সাজানো হয়েছে। শিরোনাম দেয়া হয়েছে আলোর মিছিল। ছবির কবি জাহাঙ্গীর আলম জনির পাঁচ দিনের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শেষদিন ছিল রবিবার। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এই আয়োজনের শেষ বেলায়ও ছিল দর্শনার্থীর ভিড়। বিদ্যুত কেন্দ্রে সাধারণত ইস্পাতের কলকব্জাকে ঢেকে রাখা হয় কংক্রিটের দেয়ালে। টার্বাইন, জেনারেটর, সাবস্টেশন এই হচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রধান অংশ। এর মধ্যে খুব বেশি সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু রাতে নদী তীরবর্তী কোন বিদ্যুত কেন্দ্রের আলোর বিচ্ছুরণ বহুদূর থেকে অসাধারণ মনে হয়। যার ছোঁয়া ছিল এই প্রদর্শনীতেও। সিদ্ধিরগঞ্জ-২১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবিটি যেন সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। নদীর এপার-ওপারের বিদ্যুত কেন্দ্রের এই ছবিটি তোলা হয়েছে ১৪ বছর আগে। বিদ্যুত বিভাগের বহু প্রকাশনায় অনেকবার এই ছবি ছড়িয়ে গেছে মানুষের হাতে হাতে। এখনও ছবিটি দেখলে যে কেউ বলবেন ‘অসাধারণ’। দীর্ঘ ১৫ বছরের নিরন্তর চেষ্টায় জনি তুলেছেন দেশের সব বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবি। বছর দুই আগে থেকে চিন্তা করছিলেন ছবিগুলো দর্শকের জন্য উন্মুক্ত করবেন; যা সফল হলো এবার। সাধারণত কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সকলের জন্য সম্ভব হয় না। নিরাপত্তার কারণে চাইলেও অনেকে বিদ্যুত কেন্দ্রে যেতে পারেন না। জনি তাদের জন্য এক ছাদের নিচে এই আয়োজন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কেন করতে গেলেন এমন আয়োজন প্রশ্নে জনি জানালেন, আমি দেশের সব বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবি তুলেছি এবং সংগ্রহও করে রেখেছি। এভাবে প্রতিটি বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবি কারও কাছেই নেই। দর্শকের জন্য সরকারের বিপুল এই কর্মকান্ড তুলে ধরাই ছিল মূল লক্ষ্য। প্রদর্শনীর পর ১২৫ ছবি নিয়ে কি করবেন জানতে চাইলে জনি বললেন, এসব ছবি বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড পিডিবিকে দিয়ে দেবেন। পিডিবি বিভিন্ন অফিসের বিদ্যুত কেন্দ্রে এসব ছবি টানিয়ে রাখবে। ১৫ বছর থেকে পিডিবির ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করে আসা জনির কাছে প্রশ্ন ছিল এই আয়োজনে আক্ষেপ ছিল কি? একটু বিব্রতবোধ করে জনি জানালেন, পিডিবির অনেকে এসেছেন, দেখেছেন হয়ত তাদের ভালও লেগেছে। কিন্তু কেউ পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেননি ‘ওয়েলডান জনি, খুব ভাল হয়েছে।’ বড়দের ভেতর প্রশংসার কার্পণ্য দেখেছেন তিনি। এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সব থেকে ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে প্রতিটি বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবির নিচে এর পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে কত সালে স্থাপন করা হয়েছে। কোন্ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। কোন্ এলাকার মানুষ আলোকিত হয়েছে তার বর্ণনা রয়েছে। এখানে রংপুর, সৈয়দপুর, বরিশালের ছোট ছোট বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবিগুলো যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে কম্বাইন্ড সাইকেল বড় বিদ্যুত কেন্দ্রের ছবিও। শুধু যে যে বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে তার ছবিই স্থান পেয়েছে এই আয়োজনে। মনে করা হচ্ছে আয়োজনটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে ঢুকতেই বাঁ হাতের দেয়ালে দেশের প্রথম জলবিদ্যুত কেন্দ্রের ছবি। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রটি ৪০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতায় নির্মাণ করা হয়। কাপ্তাইয়ে নির্মাণ করা কেন্দ্রটিতে পরে অন্য ইউনিটগুলো নির্মাণ করা হয়। ছবিতে ছবিতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের এই গল্প শেষ হয়েছে এ্যাগ্রিকো নির্মিত আওড়াহাটি-১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র দিয়ে। যে কেন্দ্রটি গত জুনে সব শেষে উৎপাদনে এসেছে।
×