ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশের জীবনরহস্য

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 ইলিশের জীবনরহস্য

পাটের পর এবার জাতীয় মাছ সুস্বাদু ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন বিজ্ঞানী পৃথকভাবে গবেষণা করে প্রায় একই সময়ে এই সাফল্য লাভে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে ইলিশের ডিএনএ বা কৌলিক বৈশিষ্ট্যের সব তথ্য হাতে এসেছে বিজ্ঞানীদের। ইলিশ মাছের জীবনচক্র ও জীবনরহস্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার ফলে এই মাছের সংরক্ষণ ও উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সফল হবে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, জিন সিকোয়েন্স বা জিনোম হচ্ছে কোন জীবের, তা সে উদ্ভিদ বা প্রাণী যাই হোক না কেন, পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবের অঙ্গ সংস্থান, জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোসহ সব জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় জিনোমে সংরক্ষিত নির্দেশনা থেকে। উল্লেখ্য, বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ হয় বাংলাদেশে এবং দেশের মোট উৎপাদনের ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চিরদিনের জন্য স্থান পেয়েছে বাংলার ইলিশ। এর আগে ঠাঁই হয়েছে ঐতিহ্যসম্মত জামদানি শাড়ির। ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই দুটো পণ্য, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এক সুদূরপ্রসারী সাংস্কৃতিক অর্জন। প্যাটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদফতর সূত্রের খবর, জিওগ্রাফিক্যাল ইনডেক্স বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে ইলিশ মাছের নাম নিবন্ধনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও বিশ্ব মেধাস্বত্ব কর্তৃপক্ষের (ডব্লিউআইপিআরও) যৌথ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় সব দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করে। তদনুসারে ইলিশ এখন বাংলাদেশের পণ্য। দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে, এটি একটি সুসংবাদ বটে। ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে যেখানে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টন, সেখানে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টনে। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ টনের বেশি। সরকার তথা মৎস্য অধিদফতরের নেয়া নানামুখী পদক্ষেপের ফলেই ইলিশের এই উৎপাদন বৃদ্ধি। তবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি এখনও কাক্সিক্ষত উৎপাদন নয়। তা না হওয়ার প্রধান কারণ কারেন্ট ও বেহুন্দি জাল দিয়ে জাটকা আহরণ বন্ধ করতে না পারা। এ অবস্থায় ‘জাটকা ইলিশ ধরব না, দেশের ক্ষতি করব না’ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতি বছর পালিত হয় ইলিশ রক্ষা পক্ষ ও সপ্তাহ। মনে রাখতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইলিশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসে ইলিশ থেকে। আরও একটি শ্লাঘার বিষয় এই যে, ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যতিরেকে অন্য ১০টি দেশেই কমেছে ইলিশের উৎপাদন। একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে ৯-১০ শতাংশ হারে। বিশ্বের ৬০ শতাংশ ইলিশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত। এ ছাড়া ২০ থেকে ৯৫ লাখ লোক জড়িত পরিবহন, বিক্রি, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রফতানি ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজে। বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম একটি অপরিহার্য উপাদান হলো ইলিশ। এর প্রযতœ ও সুরক্ষার দায়িত্ব সকলের। ইলিশের জন্মরহস্য উন্মোচিত তথা করায়ত্ত হওয়ার ফলে এর প্রজনন, সংরক্ষণ, উৎপাদন ও মান সুরক্ষার পথ আরও প্রশস্ত হলো বৈকি।
×