ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষকের বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ভিক্ষুক পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 ধর্ষকের বিচার চেয়ে  দ্বারে দ্বারে ঘুরছে  ভিক্ষুক পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া, ৯ সেপ্টেম্বর ॥ দৌলতপুরে ভিক্ষুকের মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণকারী যুবক আরিফ হোসেনের (২৪) বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে একটি ভিক্ষুক পরিবার। প্রভাবশালী ধর্ষণকারী যুবকের সঠিক বিচার না করে উল্টো অর্থের বিনিময়ে ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে ধর্ষিতার পরিবারকে প্রভাবশালী মানিক মেম্বর নামে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য নানাভাবে ভয়ভীতি ও হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের ওই মেয়ের (১৯) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জোয়ার্দ্দারপাড়া গ্রামের বক্কর মন্ডলের ছেলে আরিফ হোসেনের প্রায় ২ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই একপর্যায়ে একবছর আগে পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীখোলা গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে বাখের আলীর সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ের দিনই প্রেমিক আরিফ নববিবাহিত স্বামী বাখেরের বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দরজায় হামলা চালিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় স্বামী বাখের আলী পরের দিন স্ত্রী তালাক দিয়ে তার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনার বিচার চেয়ে চান্দু ফকির আরিফের পিতা বক্কর মন্ডলকে জানালে তার ছেলে আরিফকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এর পর আরিফ হোসেন তার নিজ নামে একটি সিমসহ মোবাইল ফোন কিনে দেয় ওই মেয়েকে। এরপর থেকে নিয়মিত তাদের মোবাইলে কথা হয়। এরই সূত্র ধরে গত ২৯ আগস্ট রাত ১১টার দিকে আরিফ হোসেন ভিক্ষুক চান্দুর ফকিরের বাড়িতে গোপনে প্রবেশ করে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হলে তাকে নিয়ে আরিফ হোসেন বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে যায় এবং তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষিতা চিৎকার ও কান্নাকাটি শুরু করলে ধর্ষক আরিফ হোসেন পালিয়ে যায়। পরে ধর্ষিতা বাড়ি ফিরে বিষয়টি তার পরিবারের লোকজনকে জানালে পরিবার ধর্ষণের ঘটনা স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানায়। তবে তারা প্রভাবশালী আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের বিচার না করে বিষয়টি ধামা চাপা দিতে গড়িমসি করে ও আরিফের আত্মীয়-স্বজন তার সঙ্গে বিয়ে দিবে বলে আশ্বাস দেয়। গত ১ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে এলাকার জর্দ্দারপাড়া মোড়ে এ ঘটনায় সালিশ হয়। সালিশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ উপস্থিত সকলে উভয়ের বক্তব্য শুনে ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম ও ধর্ষণের ঘটনাটি প্রমাণিত হলেও তারা বিচার না করে উল্টো ইজ্জতের মূল্য হিসাবে ধর্ষক আরিফকে ধর্ষিতার মেয়ের বাবার পা ধরে মাফ চাওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় সঠিক বিচার না পেয়ে ধর্ষিতা আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ও তার পিতা বিচার না পেয়ে সালিশ বয়কট করে বাড়িতে ফিরে যান। কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে ধর্ষিতা বিচার চেয়ে ধর্ষক আরিফ হোসেন ও তার পিতা বক্কর মন্ডলের নামে গত ২ সেপ্টেম্বর রবিবার দৌলতপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক মেম্বার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে লেনদেনের কথা বলা হয়েছে, তার কোন ভিত্তি নেই। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি সালিশে উপস্থিত ছিলাম, তবে মেয়েটার সঙ্গে ছেলেটার নাকি বিয়ে হবে এমন কথা শুনেছি। এ বিষয়ে রিফায়েতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন ও ঘটনার একশত ভাগ সত্যতা পেয়েছেন। ছেলে-মেয়ে উভয়ের মধ্যে দীর্ঘ দিনের প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কও রয়েছে।
×