ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নদীর জেগে ওঠা চরে নির্মাণ

দাবদাহে অতিষ্ঠ ঠাকুরগাঁও গুচ্ছগ্রামবাসী

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দাবদাহে অতিষ্ঠ ঠাকুরগাঁও গুচ্ছগ্রামবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৯ সেপ্টেম্বর ॥ সদর উপজেলার ধর্মপুর সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামে টাঙ্গন নদীর জেগে ওঠা চরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি গুচ্ছগ্রাম। দু’মাস আগে ৫০টি পরিবার ওই ঘরে উঠে দাবদাহে নাকাল হয়েছে আর বর্ষায় বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পরিবারগুলো। চরে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে দ্বিমত ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত গ্রহণ না করায় প্রকল্পের উদ্দেশ্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিশিষ্টজনদের মাঝে। একটি ঘর নির্মাণে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে কাজ শেষ না করেই পরিবারগুলোর মাঝে তড়িঘড়ি করে ঘর হস্তান্তর করায় ক্ষোভ বসবাসকারীদের। প্রকল্পের ৫০টি ঘর নির্মাণে সঠিকভাবে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সদর উপজেলার ধর্মপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা রাহেনা বেগম। স্বামী ইসমাইল দিনমজুর। স্বামীর বাস্তুভিটা না থাকায় বিয়ের পর থেকে ছিলেন বাবার বাড়িতেই। রাহেনার দুই ছেলে মেয়ে ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে ৬ জনের সংসার। শ্বশুর রহিজল আলী তিন বছর ধরে প্যারালাইজড হয়ে একহাত ও পা অচল হয়ে গেছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা বন্ধ শ্বশুরের আর ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও দিতে না পেরে তাও বন্ধ আছে। এই গুচ্ছগ্রামে একটি ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও এখানকার নানা অব্যবস্থাপনায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শুধু রাহেনা নয়, তাদের মতো মমতা রানী, আঞ্জুয়ারা বেগমসহ ৫০টি পরিবারের অবস্থা একই। এই গুচ্ছগ্রামে ঘরের ভিটায় মাটি ভরাট না করে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয় ওই নদীর দু’পাশ থেকে। আর সেই বালুর উপরেই নির্মাণ করা হয় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে একটি করে টিনের ঘর। সঙ্গে দেয়া হয় একটি বন্ধু চুলা, টয়লেট আর ছয়টি নলকূপ। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ওই চুলা দিয়ে রান্নার কাজ করতে পারছে না বলে জানান তারা। আর ঘরের টিনের নিচে ৯০টি করে ইট দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ঘরের ভেতরে পার্টিশন না দেয়ায় ৫-৭ জনের সদস্য নিয়ে এক রুমেই গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাদের। টয়লেট স্থাপন করা হলেও তা এখনও অসম্পূর্ণ। বেশির ভাগ টয়লেটে এখনও পরিপূর্ণভাবে দেয়া হয়নি রিং ও স্লাব। অসহায় পরিবারগুলো ঘরে উঠেই পড়েছিল দাবদাহের কবলে। প্রখর রোদ, টিনের গরম আর তপ্ত বালুর উত্তাপে ঘর ছাড়া হয়েছিল তারা। বেশির ভাগ সময় পার করেছে নদীর তীরে গাছের নিচে। আর বর্ষার পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে ভিটার বালু। রাতে ঝড়বৃষ্টি হলে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় দুচোখে ঘুম আসে না তাদের। বিদ্যুত না থাকায় ভুতুড়ে অন্ধকারে কুপির বাতি জ্বালিয়ে সময় কাটছে তাদের। ওই পরিবারগুলোর অভিযোগ, গুচ্ছগ্রামের ভিটার দলিল হস্তান্তরের নামে সংশ্লিষ্টরা আদায় করছে ঘরপ্রতি ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত। ওই গুচ্ছগ্রামে ঘর পাওয়া সুরুজ আলী, কুলসুম বেগম, সখিনা বেগম বলেন, চুলার ভেতর পানি ঢুকে। তাই এই চুলা ব্যবহার করা যায় না। বানেছা বেগম জানায়, বৃষ্টিতে ঘরের ও উঠনের বালু ধুয়ে নদীতে চলে যাচ্ছে। পুনরায় বালু তুলে দিতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে বলে জানায়। কাবেদ আলী, ফজর আলী ও সহিমত বেগম অভিযোগ করে বলেন, এখনও টয়লেটের রিং ও স্লাব দেয়া বাকি আছে। কোন মতে বসিয়ে দায়সারা কাজ করেছে বলে অভিযোগ তাদের। নদীতে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের স্থান নির্বাচনে ভুল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তৈমুর রহমান। তিনি আরও বলেন, গেলবারের মতো কখনও বন্যা হলে তলিয়ে যাবে ঘরবাড়ি, প্রাণহানিরও আশঙ্কা রয়েছে। আর এই গ্রামটি নির্মাণের সার্বিক দায়িত্বে থাকা সদ্য বিদায়ী সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসলাম মোল্লা বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এসিল্যান্ড অফিসের মতামত নিয়ে তার আগের ইউএনও স্থান নির্বাচন করেছেন। প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর তিনি শুধু ঘর নির্মাণসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই নদীর চরে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে পানি উন্নয়নের বোর্ডের কাছে কোন মতামত চাওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আখতারুজ্জামান অভিযোগ শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
×