ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসক সঙ্কটে ধুঁকছে চারঘাট স্বাস্থ্যকেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চিকিৎসক সঙ্কটে ধুঁকছে চারঘাট স্বাস্থ্যকেন্দ্র

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ চিকিৎসক সঙ্কটের মুখে পড়েছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর চিকিৎসা সেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। চিকিৎসা সেবায় তিনবার পুরুস্কার প্রাপ্ত হাসপাতালটি এখন ধুঁকছে নানা সমস্যায়। সবচেয়ে বড় সঙ্কট চিকিৎসক সঙ্কট। ফলে এ হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা অনেকটায় ভেঙ্গে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক সঙ্কটের আবেদন করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না। ৫০ শয্যা হাসপাতালে এমবিবিএস ডাক্তারের ২৭টি পদ থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৯ জন। বাকি ১৮টি পদই রয়েছে শূন্য। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন দূর দূরান্তের হাসপাতালে। দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছেন উদাসীন। সরকার যখন মানুষের দৌড় গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে তখন চারঘাট হাসপাতালে ডাক্তার সঙ্কটে চিকিৎসা সেবা হুমকির মুখে পড়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য ১৪ জন এমবিবিএস ডাক্তারের পদ রয়েছে। তবে হাসপাতালটিতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন। অন্য ১১টি পদ রয়েছে শূন্য। জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১০ জন থাকার কথা থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৬ জন। গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) পদটিও রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ডেন্টাল সার্জনের পদটিও রয়েছে শূন্য। নার্স হিসেবে ১৯টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯ জন। এদিকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ পদের কনসালটেন্ট বেতন ভাতা চারঘাটে নিলেও তিনি গত এক বছর ধরে ডেপুটিশেনে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। ফলে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে চারঘাটের কয়েক লাখ মানুষ। শনিবার সকাল ১১টা দিকে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ’ রোগীর ভিড় জমে আছে বহির্বিভাগের সামনে। কয়েকটি রুমে কয়েকজন ডাক্তার থাকলেও রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় তাদের পক্ষে চিকিৎসা দেয়ায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার বেলতলি গ্রামের রোজিনা বেগম জানান, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি পেটের ব্যাথা নিয়ে। কিন্তু ডাক্তারই পাচ্ছি না। মতিউর রহমান নামের একজন ডাক্তার আছেন তিনি আবার হাড়ের ডাক্তার। তার কাছেও ভিড় অনেক। তারপরেও তাকে কোনভাবে দেখিয়ে ওষুধ নিব। হাড়ের ডাক্তারের নিকট পেট ব্যাথার অসুখ ভাল হবে কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কি করব। নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভাল। হলিদাগাছী এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান এসেছেন তার মেয়ের জ্বর দেখাতে। তিনিও এসে ডাক্তার সঙ্কটে পড়ে ফেরত গেছেন রাজশাহীর একটি ক্লিনিকে। তার দাবি ডাক্তারই নেই চিকিৎসা নেব কার কাছে। যে ডাক্তারগুলো আছেন তাদের পক্ষে এত রোগীর চিকিৎসা দেয়া কঠিন। তারপরেও অসুখ ভাল হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে টাকা খরচ করে রাজশাহীর একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ডাক্তার সঙ্কট অনেক দিনের। তারপরেও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আর যারা এখন দায়িত্বে আছেন তারাও চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডাঃ সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সঙ্কটের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
×