ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লাকসামে ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

লাকসামে ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু দিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত

নিজস্ব সংবাদদাতা, লাকসাম কুমিল্লা, ৮ সেপ্টেম্বর ॥ সেতুর অভাবে লাকসামে রেলসেতুর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ চলাচল করছে। লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইনে উপজেলার মুদাফরগঞ্জ ইউনিয়নের কাগৈয়া গ্রামের কার্জন খালের ওপর রেলসেতু দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে প্রায় ঘটে দুর্ঘটনা। এলাকাবাসী জানান, কার্জন খালের ওপর কোন সেতু না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা, এলাকার হাজার হাজার মানুষ রেলসেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি রেলসেতুর পাশে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু এ দাবি ৩৫ বছরেও কোন কাজে আসেনি বলে জানান স্থানীয়রা। বিকল্প সেতু না থাকায় বাধ্য হয়ে প্রতিবছর চাঁদা উঠিয়ে কাঠের পাটাতন কিনে রেলসেতুর ওপর বসিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মুদাফরগঞ্জ ইউনিয়নে কার্জন খালের ওপর কোন সেতু না থাকায় বিপদজনক রেলসেতুর ওপর দিয়ে ৮-১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই রেল সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়। রেলসেতুর পাশে একটি সেতু নির্মিত হলে উপজেলার কাগৈয়া, ছালেপুর, পরানপুর, চিতোষী, শ্রীয়াং, নোয়াপাড়সহ কয়েক গ্রাম মানুষ উপকৃত হবে। এলাকার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জালাল স্মরনী উচ্চ বিদ্যালয়, তোরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয়, কাগৈয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে স্কুল কলেজে আসা যাওয়া করতে পারবে। কাগৈয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহানারা, কুলসুম, বিল্লাল, সোহাগ, সুমাইয়া, খাদিজা, আলআমিন বলেন, রেলসেতু দিয়ে স্কুলে যাওয়া আসার সময় ভয়ের মধ্যে থাকি। সেতুর মাঝখানে আসলে নিচের দিকে তাকালে পা থরথর করে কেঁপে উঠে। ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুলতানা জানান, ৪ মাস আগে রেলসেতু দিয়ে পারাপারের সময় ট্রেন আসতে দেখে পানিতে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হই এবং আত্মরক্ষা করি। ফুলহরা গ্রামের সিএনজি চালক আবুল কাসেম জানান, আমার বাচ্চারা কাগৈয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তোরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে প্রতিদিন এ রেলসেতু দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। বাচ্চারা ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকি। এক দিকে রেল গাড়ির ভয় অন্যদিকে রেলসেতু পারাপারে দুর্ঘটনার ভয়। স্থানীয় মেম্বার ফয়জুল মিয়াজী দুঃখ করে বলেন, একটি সেতুর অভাবে এলাকার গর্ভবর্তী মায়েদের জরুরী চিকিৎসায় হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া আমাদের যাতায়াতের কোন ব্যবস্থা নেই। গত ৩ মাস আগে ৫-৬ জন শিক্ষার্থী রেলসেতু পারাপারের সময় ট্রেন চলে আসে, এ সময় তাদের সর্তক করলে তারা পানিতে লাফিয়ে আত্মরক্ষা করে। এমন দুর্ঘটনা প্রায় শুনা যায়। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি রেলসেতুর পাশে বিকল্প একটি রাস্তা নির্মিত হলে এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ ও স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে। মুদাফরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ সওদাগর বলেন, বিপদজনক রেলসেতুর ওপর দিয়ে এলাকার মানুষ যাতায়াত করে আসছে। বিকল্প সেতু না থাকায় এ এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়। বহু পূর্ব থেকে শুনে আসছি রেলসেতু পারাপারের সময় প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ তাজুল ইসলাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে রেলসেতুর পাশে জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে একটি রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন। ওই স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে এলাকার শিক্ষার্থী ও জনগণ নিবিঘেœ চলাচল করতে পারবে।
×