ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিহীনতা ও স্থূলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, আয় বৈষম্য ॥ এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পুষ্টিহীনতা ও স্থূলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, আয় বৈষম্য ॥ এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যা এসডিজির টার্গেটগুলোর মধ্যে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এগুলো হলোÑ পুষ্টিহীনতা ও স্থূলতা, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং আয় বৈষম্য। এগুলোর প্রশমন না করতে পারলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। শনিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বার্ষিক লেকচারে কথাগুলো বলেন মালয়েশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব অধ্যাপক জোমো কেওমি সুনদারাম। অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক জোমো বলেন, এসডিজিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পুষ্টিহীনতা। এমডিজি কিংবা এসডিজিতে দরিদ্রতা হ্রাসের কথা বলা হলেও পুষ্টিহীনতা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। তিনভাবে পুষ্টিহীনতার প্রকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি, খাবারের অভাব, গুণগত খাবারের অভাব এবং অসচেতন খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্থূলতা। খাবারের অভাব অনেকটা কমে এসেছে। তবে গুণগত খাবারের অভাবে ওজনহীনতা রয়েই যাচ্ছে। আবার অসচেতন খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্থূলতা বাড়ছে ব্যাপক আকারে। এর ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করছে। জোমো সুনদারাম বলেন, বিশ্বে ৮০০ মিলিয়ন মানুষ খাবারের অভাবে থাকলেও দুই বিলিয়নের বেশি মানুষ অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশেও দারিদ্র্য হ্রাস হলেও পুষ্টিহীনতা কমেনি সেই হারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিশ্বে পুষ্টিহীনতার কারণে খরচ হচ্ছে প্রতিবছর একেকজন মানুষের জন্য গড়ে ৫০০ ডলার। যা মোট অংকে বিশ্বের জিডিপির ৫ শতাংশ। ২০১৪ সালের ম্যাককিনজি রিপোর্ট অনুযায়ী এর মধ্যে স্থূলতার কারণে খরচ হচ্ছে ১.৯ থেকে ২.১ বিলিয়ন ডলার। অধ্যাপক জোমো বলেন, এসডিজির জন্য আরেক বড় চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন। প্যারিস ইউএনএফসিসিসি কপ-এ বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস না বাড়ানোর জন্য একমত হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। যদিও বিজ্ঞানীরা তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রীর মধ্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বে কার্বন ডাই-অক্সাইড ঘনীভূত হয়েছে ৩৯০ পিপিএম। এটি ৪৫০ হলেই তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ না কমাতে পারলে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী বৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব হবে না বলেও তিনি জানান। এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও সোলার প্যানেলের দাম অনেক বেশি, তবে প্রযুক্তির উন্নতির ধারাবাহিকতায় এটির দাম কমে আসছে। উন্নয়নশীল কিংবা স্বল্পোন্নত দেশ বলে কয়লাভিত্তিক কিংবা অন্য কোনো জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা ঠিক হবে না। মধ্যবর্তী কোন জায়গা নেই। সরাসরি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলে যেতে হবে আমাদের। জোমো সুনদারাম বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ সরাসরি জড়িত। এতে উন্নত দেশগুলো দায়ী হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে দক্ষিণের দরিদ্র দেশগুলোর। তিনি বলেন, জীবনমানের উন্নয়ন হবে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ কমাতেই হবে। এজন্য আরও বেশি হারে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। উন্নয়নের নতুন মেকানিজম খুঁজে বের করতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এসডিজির জন্য তৃতীয় বড় সমস্যা আয় বৈষম্য বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক জোমো বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে যত উন্নত হচ্ছে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ততো বাড়ছে। ধনী দেশগুলেতে এই বৈষম্য প্রকট। তিনি জানান, ১৯৬০-৬২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ২০টি দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ২১২ ডলার, ২০০০-২০০২ সালে তা বেড়ে হয় ২৬৭ ডলার। অন্যদিকে ১৯৬০-৬২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২০টি দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ১১ হাজার ৪১৭ ডলার। ২০০০-০২ সালে তা প্রায় তিনগুণ বেড়ে হয় ৩২ হাজার ৩৩৯ ডলার। অধ্যাপক জোমো বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো যেসব পণ্য উৎপাদন করছে তার মূল্য হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে ধনী দেশগুলো যেসব পণ্য তৈরি করছে তার মূল্য সেই অনুপাতে কমছে না। এটা আয় বৈষম্য বাড়াতে সহায়তা করছে। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বিশ্ব একটা কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীন এখন বিনিয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের মতো দেশে হলে জলবায়ু প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ অঞ্চলের মানুষ লাভবান হতো।
×