ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ পাকিস্তানের বোধোদয়, জয় বাংলার জয়

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ পাকিস্তানের বোধোদয়, জয় বাংলার জয়

সাতচল্লিশে একটা বড় ভুলের মাশুলে ভাগ হয়েছিল উপমহাদেশ। শুধু জিন্নাহ না নেহরু, গান্ধীও দায়ী এই ভাগে। সে ইতিহাস এখনও দগদগে। তার ওপর ছিল জিন্নাহ সাহেবের চতুরতা। যে লাহোর প্রস্তাবে একাধিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের বা রাজ্যের কথা ছিল সেটি তিনি কৌশলে একটা বলে চালিয়ে দিয়েছিলেন। ঝঃধঃবং কে ংঃধঃব বানিয়ে এক পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রকে জিন্নাহ বলেছিলেন বানান ভুল। ২৩ বছর সেই পাকিস্তান আমাদের শাসন-শোষণ করার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন দেশ মুক্ত মাটি পতাকা সঙ্গীত ভাষা ফেরত পাবার পরও আমাদের ভেতর থেকে পাকপ্রীতি যায়নি। এক ধরনের মানুষ আর এক কিসিমের রাজনীতি এখনও পাকিস্তান বলতে অন্ধ। তাদের ধারণা পেয়ারা পাকিস্তান-ই দুনিয়ার সেরা দেশ। আমি হলফ করে বলতে পারি এরা কেউ মূর্খ বা কম লেখাপড়া জানা মানুষ না। এরা সার্টিফিকেটধারী লোক। এরাই বাংলাদেশের ক্রিম ক্লাস। মানে এরাই ক্রিমভোগী। এদের সবার আখের বা ভবিষ্যত দিয়েছে এই দেশ। যা হওয়ার কথা না তাই হয়েছে তারা। হওয়ার কথা কেরানি হওয়ার কথা পাকিদের গোলাম সেখানে তারা হয়েছে বিরাট বিরাট কেউকেটা। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে এদের দিলে পাকিপ্রেম হরহামেশা বিরাজমান। আপনি এখন মধ্যবিত্ত বা বুদ্ধিজীবী নামের কারও সঙ্গে কথা বললেই দেখবেন তাদের আফসোসের অন্ত নেই। আর এই আফসোসের মূল কারণ একটা। সেটা হলো দেশ যেভাবেই আগাক না কেন এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে তাদের আর্থিক লাভ আর ভাল থাকা জড়িত হলেও তাদের মনমতো চলছে না। আর তাদের সবার পথের কাটা এক, যিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন তাদের এই রাগ? কারণ, তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ চায় না। কথা বলে আমি নিশ্চিত এদের ধারণা শেখ হাসিনা দেশকে ভারত আমেরিকা বলয়ে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ সবাই জানেন ভারত তার স্বার্থ আর বাণিজ্যে শেখ হাসিনার বন্ধু। আর আমেরিকা বঙ্গবন্ধু আমল থেকে কখনও আওয়ামী লীগকে চায়নি। কারণ ভিয়েতনামের পর এদেশেই তার বড় পরাজয় হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কত বড় আর বিরাট মাপের মানুষ ছিলেন তা এখন আসলে বোঝা যায় না। কারণ চামচামি তাঁকে বড় করার নামে দিনকে দিন ছোট করছে। যখন এই ধারা মিলিয়ে যাবে তখনই বোঝা যাবে তিনি কেমন ছিলেন। সেদিন একটা ভিডিওতে দেখলাম দেশ স্বাধীনের যে অনুষ্ঠানে অস্ত্রসমর্পণের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন সেখানে স্পষ্ট করে ভুট্টোকে বলেছেন, ‘আপনি আপনার মানুষ ও দেশ নিয়ে শান্তিতে থাকেন। আমাদের কিছু বলার নেই।’ এও বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের সাধারণ মানুষদের নিয়েও তাঁর কিছু বলার নেই।’ তিনি জানিয়ে দিতে কসুর করেননি যা বলার আছে তা ওইসব দানবদের বিরুদ্ধে যারা আমাদের বুকে গুলি চালিয়েছিল যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করেছিল। এই হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। আমরা হিংসামুক্ত থাকার চেষ্টার পরও আমাদের দেশের দালালরা আর পাকিরা আমাদের ভাল থাকতে দেয়নি। তারা একের পর এক ষড়যন্ত্র তাদের আইএস তাদের নেতারা ভূ-খ- হারানোর যন্ত্রণায় আমাদের সবসময় চক্রান্তের জালে বন্দী রাখতে চেয়েছে। এখন যিনি প্রধানমন্ত্রী সেই ক্রিকেটার ইমরান খান সম্পর্কে নিয়াজীর ভাতিজা। নিয়াজীর পরাজয়কে নিজের পরাজয় ভাবা এই লোক সেদিনও আমাদের বিরুদ্ধে মুখর হয়ে যা তা বলেছেন। আমাদের দেশে কার বিচার হবে কার শাস্তি হবে দেশ কিভাবে চলবে সেটা আমাদের নিজেদের বিষয়। সমস্ত ধরনের সভ্যতা ভব্যতা বাদ দিয়ে ইমরান খান যেসব কথা বলেছেন তার জন্য তার বিচার হওয়া উচিত। তারপরও আমরা তাদের নির্লজ্জভাবে সমর্থন করি। যে কথা বলছিলাম এই ইমরান খান এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সে দেশকে সুইডেন বানাবেন এই ঘোষণা দেয়ার পর সে দেশের বুদ্ধিজীবী ও নেতার কি বলছেন? তারা এটিকে কৌতুক হিসেবে নিয়ে বলেছেনÑ সুইডেন তো দূরের কথা, আগে বাংলাদেশ করে দেখাও। কথাগুলো কিন্তু সিরিয়াসলি ভাবার মতো। তারা পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছেন বাংলাদেশ রিজার্ভ ফান্ডে রফতানি বাণিজ্যে পাকিস্তানকে ফেলে এগিয়ে চলেছে তরতর করে। তাদের ভাষ্যমতে আগামী দশ বছরেও পাকিস্তান সে জায়গায় পৌঁছতে পারবে না। তাই তারা ঠাট্টা করে বলেছেন, আবে পহেলা হামলোগকো বাংলাদেশ বনকে দেখাও। আমাদের এই অগ্রযাত্রার কা-ারি কে? আমরা যাঁকে প্রতিনিয়ত অপমান করতে ভালবাসি সেই শেখ হাসিনা। এ দেশের ইতিহাস দেখুন আইয়ুব খান ডা-া দিয়ে পারেনি। ইয়াহিয়া বন্দুক দিয়ে পারেনি। এরশাদ জুলুম দিয়ে পারেনি। বঙ্গবন্ধু উদারতা দিয়ে ভুল করেছিলেন। বিএনপি তো জানতই না আসলে কি করতে হয়। ব্যারিস্টারের দল বিএনপি আইনের শাসন বুঝতে পারে জনগণের শাসন বোঝে না। সে জায়গায় দৃঢ়তা আর বলিষ্ঠতা ছাড়া কি করার ছিল শেখ হাসিনার। আমার ধারণা যখন থেকে তিনি বুঝে নিয়েছেন জনগণের কল্যাণ আর মঙ্গল বা অর্থনৈতিক সফলতাই মূল কথা তখন থেকেই তিনি এমন কঠিন অবস্থানে চলে গেছেন। যার সুফলভোগকারীরাই আজ তাঁর সমালোচক। যেভাবেই হোক আজকের বাংলাদেশ পাকিস্তানের চোখে রোল মডেল। যখন এই লেখা লিখছি তপু বর্মণের গোলে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারিয়ে সাফ গেমসে সেমির পথে। এটাও সাফল্য। কোন দেশ তার নিজের জায়গায় ভাল না থাকলে খেলাতেও ভাল করে না। আমরা আর্থিক ও সমাজগতভাবে নানা সমস্যার পরও ভাল আছি বলেই ক্রিকেট ফুটবলে নারীদের খেলায় বিশেষত পাকিস্তান তো পাকিস্তান ভারতও পারে না। এটাই বাংলাদেশ। দেশ মুক্ত হওয়ার পর এত বছর কেটে গেল একশ্রেণীর মানুষ এখনও মন থেকে দিল থেকে পাকিস্তানকে মুছতে পারল না। তাদের ভোটের বাক্সে পাকপ্রীতি অন্ধ রাজনীতির লোভ গলে গলে পড়ে। তারা একবারও ভাবে না দেশ চালাতে বা দেশকে এগিয়ে নিতে দরকার সঠিক দেশশ্রেম। সে গল্পটা নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের। এক শিশুর জন্য দুই মায়ের অধিকার যখন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল তখন বিজ্ঞ কাজী বিবেচনাবোধ থেকে একটা পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি বললেন ঠিক আছে এই শিশুকে দুভাগে ভাগ করে তোমাদের দুজনকে দেয়া হবে। খুশি তোমরা? তখন ছদ্মবেশী মা রাজি হলেও আসল মা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, না হুজুর এ ছেলে আমার না। আমি চাই না। কাজী সাহেবের বুঝতে এক মিনিটও সময় লাগেনি যে কে আসল মা। আমরা যত মন্দ বলি না কেন শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ এদেশের জন্মলগ্ন থেকে এর সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে তাঁরা আর যাই হোক দেশের খ-ন বা অমঙ্গল চাইতে পারে না। নানা জটিলতা নেতৃত্বের দোষ লোভ সন্ত্রাস বা অপরাধ প্রবণতায় দেশ ও সমাজ ভুগছে। সেটা ভয়ের। কিন্তু এ কথা বলতেই হবে পাকিস্তান প্রীতি বা পাকিদের আদলে রাজনীতি সমাধান না। সেটা হলে আমাদের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। আমাদের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে না। তাই পাকিস্তান নিজেই যখন বলছে তারা বাংলাদেশের মতো হতে চায় সেখানে দালালদের আত্মশুদ্ধি আজ বড় দরকার। জয় বাংলার পরাজয় নেই এ কথা তারা না মানলে এখন তারাই ঠকবে। দেশ ও দেশের মানুষের কিছু আসবে যাবে না। [email protected]
×