ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ পাচার

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অর্থ পাচার

সমৃদ্ধকামী একটি দেশের অর্থনীতির জন্য যে দুটি বিষফোঁড়া অত্যন্ত ক্ষতিকর তার একটি হলো বিদেশে অর্থপাচার। বলাবাহুল্য, দ্বিতীয়টি মানি লন্ডারিং বা কালো টাকা সাদা করা। সম্প্রতি কৌশলে অর্থ পাচারের সবচেয়ে বড় ঘটনা ধরা পড়েছে দেশে। ঋণপত্র খোলা হয়েছিল কাগজ আমদানির। একটি চীনা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরে চালানটি পাঠায়ও। বন্দরে আসার পর চীনের প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ডলার পরিশোধও করা হয়। তবে চালানটি খালাস করতে গিয়ে দেখা যায় তুঘলকি কা-! চীনের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানটি কাগজ পাঠানোর কথা বলে কন্টেনারে পাঠিয়ে দিয়েছে ৪১০ বস্তা বালিমাটি। সম্প্রতি বন্দর চত্বরে কন্টেনারটি খুলে এক পাতা কাগজও পাননি কাস্টমস কর্মকর্তারা। বিস্ময়ের কথা হলো শত চেষ্টা করেও পণ্য আমদানির নামে বালিমাটি পাথর ছাই আনা বন্ধ হচ্ছে না। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খোলা হলেও তা আসেনি। এ সবের বদলে কন্টেনারে এসেছে ছাই, ইট, বালি, পাথর ও সিমেন্টের ব্লক। কখনও ফেব্রিক্সের বদলে এসেছে দামী ওষুধ। আবার কখনও শূন্য কন্টেনার। পণ্য আমদানিতে বড় অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দিতে চলছে রীতিমতো নয়ছয়। হচ্ছে অর্থ পাচার। জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলসি খোলা থেকে শুরু করে শিপিং এজেন্ট, বন্দর, কাস্টমস, সিএ্যান্ডএফ এজেন্টসহ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা এসব অপকর্ম করছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচারকারীর মধ্যে আছে অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ রাজনীতিক, দুর্নীতিবাজ আমলা এবং অপরাধ জগতের কুশীলবরা। ব্যাংক ঋণ নিয়ে লোপাট করতে তা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বিদেশে। জাল কাগজপত্রে মর্টগেজ দিয়ে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা লোপাট করা দেশের ব্যাংকিং খাতের ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোপাট করা অর্থের বড় অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। আমদানি-রফতানির এলসি খুলে বাস্তবে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি বা রফতানি করার কথা তা না করে বিল পরিশোধের মাধ্যমে অর্থ পাচার ঘটছে। দেশের বিপুল টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ায় তার কুফল দেখা দিচ্ছে অর্থনীতিতে। এই অশুভ কর্মকাণ্ডে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুষ্টচক্রের জড়িত থাকার খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। দেশে বিনিয়োগ না করে কেন অর্থ পাচার করা হচ্ছে? বাংলাদেশে টাকা রাখতে কেন তাদের অস্বস্তি? সম্পদশালী ব্যক্তিদের অনেকে অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে দেন। নির্বাচনের আগে টাকা পাচারের পরিমাণ বাড়তে দেখা যায়। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ পাচারের দিক থেকে শীর্ষ ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম। অথচ আমরা অবগত যে, কয়েক বছরে পাচার রোধে নানা আইনের সংস্কার হয়েছে। আরেকটি বিষয় শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে ঘোষণাবহির্ভূত অন্য মালামাল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। আমদানি ছাড়া রফতানি চালানের ক্ষেত্রেও ডকুমেন্ট জালিয়াতি ও মিথ্যা ঘোষণার অপকৌশল ধরা পড়েছে শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হাতে। ফলে একের পর এক পণ্যের চালান আটক হলেও কমছে না শুল্ক ফাঁকির ঘটনা। রাজস্ব হলো উন্নয়নের অক্সিজেন। ব্যবসায়ী নামধারী কিছু অসৎ ব্যক্তি আর্থিক অনিয়ম করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করছে। সে অবস্থায় দুর্বৃত্তদের শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। সেই সঙ্গে অর্থ পাচার রোধে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে কালবিলম্ব না করে।
×