ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নজরুলকে নিবেদিত সঙ্গীতাসর ‘আমারে দেব না ভুলিতে’

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নজরুলকে নিবেদিত সঙ্গীতাসর ‘আমারে দেব না ভুলিতে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শরতের সন্ধ্যা পেরিয়ে নেমে আসে রাত। সুরে সুরে কেটে যায় শ্রোতার সুমধুর সময়। কণ্ঠের আশ্রয়ে কবির প্রতি ঝরে পড়ে শিল্পীর ভালবাসা। ভেসে বেড়ায় কবির রচিত গানের বাণীÑ আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে/ আমি বাতাস হইয়া জড়াইব কেশে বেণী যাবে যবে খুলিতে...। দরদভরা কণ্ঠে গান গেয়ে শোনান কল্পনা আনাম। এমন একগুচ্ছ নজরুলসঙ্গীতের আশ্রয়ে সাজানো ছিল সঙ্গীতাসরটি। শনিবার জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত সঙ্গীতানুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল ‘আমারে দেব না ভুলিতে’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ নজরুলসঙ্গীত সংস্থা। পরিবেশনা শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। বাঙালীর যাপিত জীবনে কবির গুরুত্ব তুলে ধরে এই শিল্পী বলেন, শুধু তার গান গেয়ে নয়, জীবন ও দর্শনের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে হবে কাজী নজরুলকে। একজন মানবিক মানুষ হিসেবে তিনি জীবনভর ভালবাসার কথা বলেছেন। আর সুন্দর সমাজ গড়তে হলে মানুষকে ভালবাসার বিকল্প নেই। এ কারণেই যে কোন সংকটে প্রেরণার উৎস নজরুল। তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন শেকড়ের সন্ধান। তাই আমরা যতটাই ডিজিটাল হই না কেন, আপন অস্তিত্বকে খুঁজে পেতে হলে যেতে হবে শেকড়ের পানে। সম্মেলক সুরের আশ্রয়ে সূচনা হয় এই সঙ্গীতাসরের। পেছনে নজরুলের প্রতিকৃতিকে রেখে দলবেঁধে মঞ্চে আসেন শিল্পীরা। অনেক কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। গীত হয় ‘মৃত্যু নাই নাই দুঃখ, আছে শুধু প্রাণ’ শিরোনামের নজরুলসঙ্গীত। এরপর একক কণ্ঠের পরিবেশনায় এগিয়ে যায় অনুষ্ঠান। প্রমিতা দে গেয়ে শোনান ‘কেন কাঁদে পরাণ’। করিম হাসান খান কণ্ঠে তুলে নেন ‘কেন ফোটে কেন কুসুম ঝরে যায়’ শীর্ষক সঙ্গীত। জোসেফ কমল রড্রিক্সের কণ্ঠে গীত হয় ‘আমি আছি বলে দুখ পাও তুমি’। খায়রুল আনাম শাকিল পরিবেশন করেন ‘তুমি যতই দহনা দুখের অনলে’। এছাড়া একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইয়াকুব আলী খান, সেলিনা হোসেন, মঈদুল ইসলাম, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী, রেজাউল করিম, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, মুশতারী হোসেন পান্না প্রমুখ। সম্মেলক সুরের আশ্রয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। পরিবেশিত হয় ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল’ শিরোনামের গান। আবুল মনসুর আহমদের ১২০তম জন্মদিন উদ্যাপন ॥ আবুল মনসুর আহমদ। একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। গত ৩ সেপ্টেম্বর ছিল এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বের ১২০তম জন্মদিন। সেই জন্মদিনটি উদ্্যাপিত হলো শনিবার। এদিন বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আবুল মনসুর আহমদ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার পুরস্কার ও জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ, প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ ও অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এছাড়াও এ আয়োজনে বিচারকদের মধ্যে থেকে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. মোঃ চেঙ্গীশ খান, প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ আজম ও সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন। সমাপনী বক্তব্য রাখেন লেখকপুত্র দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আবুল মনসুর আহমেদ তার সময়ের রাজনীতিতে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক লেখক। বড় বিষয় হলো তিনি যা ভাবতেন তাই বলতেন এবং করতেন। তিনি বলেন, তাকে অনেকে সাম্প্রদায়িক বলেন। কিন্তু তিনি অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। ‘আবুল মনসুর আহমদের প্রাসঙ্গিকতাÑসাহিত্যে, সাংবাদিকতায় ও রাজনীতিতে’ বিষয়ে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন বিভাগে একজন ছেলে ও একজন মেয়েÑ সব মিলিয়ে ছয়জনকে সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি প্রদান করা হয় দশ হাজার টাকা। একইভাবে দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ছয়জনকে পাঁচ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। আবুল মনসুর আহমদের সাহিত্যে বিষয়ক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন-সুহৃদ সাদিক ও সোহানা আক্তার। আইডিএলসি নাট্যোৎসবে চার নাট্য-দম্পতিকে সম্মাননা ॥ নাটকের প্রতি নিবেদিত প্রাণ চার। যাদের হাত ধরে বাংলা মঞ্চ নাটক এগিয়েছে বহুদূর। তারা হলেনÑ আলী যাকের ও সারা যাকের, রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার, ড. ইনামুল হক ও লাকী ইনাম এবং নাসিরউদ্দীন ইউসুফ ও শিমুল ইউসুফ। এ চার নাট্য-দম্পতিকে সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে শনিবার শেষ হলো পাঁচ দিনের আইডিএলসি নাট্যোৎসব। ‘নাট্যমঞ্চ হোক আনন্দের উৎস’ প্রতিপাদ্যে মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় শুরু হয় এ উৎসব। বিনা দর্শনীতে অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে বিনামূল্যে এই পাঁচদিনের দশটি নাটক উপভোগ করেন দর্শকরা। সমাপনী দিনে ছিলো দুই নাটক। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাট্যদল প্রাচ্যনাট আজাদ আবুল কালামের রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ করে ‘সার্কাস সার্কস’। নাটকটিতে দেখা যায়, দ্য গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস নামে একটি সার্কাস দল এক সময় প্রচুর খ্যাতি অর্জন করে। দলটি এখন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে প্রতিষ্ঠাতার ভাই। তিনিই সার্কাস দলটিকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ধ্বংসাবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন। ঘটনাক্রমে, দলটি একটি গ্রামে আসে শো করতে। অন্তর্কলেহে জর্জরিত দলটি এখানে এসে মৌলবাদীদের বাধার শিকার হয়। এক সময় মৌলবাদীরা দ্য গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসে আগুন দেয়। লাশ পড়ে তিন খেলোয়াড়ের, ভস্মীভূত হয় সার্কাসের সব পশু। ‘সার্কাস সার্কাস’ এর মঞ্চ, আলো ও মুখোশ পরিকল্পনা করেছেন মোঃ সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালনা ও পোশাক তৌফিকুল ইসলাম ইমন এবং ধ্বনিতে আছেন রাহুল আনন্দ। এর পর জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় মঞ্চ করে নাটক ‘ওপেন কাপল’। দারিও ফো ও ফ্রাঙ্কা রামের রচনায় নাটকটির রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন সারা যাকের। এক বহুগামী স্বামী ও স্ত্রী- এই সম্পর্কের ভিত্তিতে দুই চরিত্রে সাজানো নাটক ওপেন কাপল। ওই স্বামী এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের রীতিতে তার স্ত্রীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন না। সেই সুবাদে তিনি নিজেকে যেমন তৈরি করেছিলেন তেমনি স্ত্রীকেও অনেকটা বাধ্য করতেন বিভিন্ন সঙ্গীর সান্নিধ্যে যাওয়ার। তবে এ ধরনের সম্পর্কে অস্বস্তির পাশাপাশি ভীষণ বিব্রত হতেন স্ত্রী। কিন্তু স্বামী অবলীলায় অন্য নারীর সঙ্গ উপভোগ করতেন। একপর্যায়ে স্বামী উপলব্ধি করে যে তার স্ত্রী বহু পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে চাইছে না। তবে রাইট নামের একজনের প্রতি তৈরি হয়েছে তার আসক্তি। এ ঘটনায় চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন স্বামী। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটি। যাতে স্ত্রীর চরিত্রে সারা যাকের ও স্বামীর চরিত্রে জিয়াউল হাসান কিসলু অভিনয় করেছেন।
×