ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পতন নিশ্চিত বুঝতে পেরে সরকার পালাবার পথ খুঁজছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পতন নিশ্চিত বুঝতে পেরে সরকার পালাবার পথ খুঁজছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পতন নিশ্চিত বুঝতে পেরে সরকার পালাবার পথ খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই সরকারকে হটাতে অতিদ্রুত জাতীয় ঐক্য হবে। ঐক্য গঠন করে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই মন্তব্য করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনাদের একটা ভুল ধারণা আছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি চান না জাতীয় ঐক্যের নেতারা। আসলে খালদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সকলে একমত। আর খালেদা জিয়ার মুক্তি বাদ দিয়ে কোন আলোচনা নয়। ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী তো আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেই বলেছেন তার মুক্তি দেয়া হোক। তবে তাদের কিছু দাবি থাকতে পারে। কোন ভাল কিছুর জন্য তো কিছু না কিছু ছাড় দিতে হবে। ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সঙ্কটময় মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। দেশের মানুষের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না, মানুষের বাঁচার অধিকার থাকবে কি থাকবে না তা নির্ভর করছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর। আমরা সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি। আজকেও আমরা সেই লড়াই করছি। এ লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ পরাজিত হবে। ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার আগে বলেছিলেন আমি হয়ত কারাগারে চলে যাব। কিন্তু আপনারা সকল গণতন্ত্রকামী দলকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন। এই সরকারকে হটাবেন। এখন একটা জাতীয় ঐক্য দরকার। সমস্ত জাতির ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে হবে। খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য কারাগারে আদালত স্থানান্তরের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, কারাগারে আদালত স্থানান্তর করা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। যেখানে ক্যামেরা ট্রায়াল করা হচ্ছে। এটা কোন আদালত নয়। এটাকে বাংলায় বলা যায় গুহা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অপরাধ কি? তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। একমাত্র এই কারণেই তার সঙ্গে এটা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দলের লোকেরা বলতেন শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা। কিন্তু আজ আমরা দেখছি তিনি গণতন্ত্রকে স্তব্ধ করে দিচ্ছেন। ফখরুল বলেন, এ সরকার জনগণের ওপর চেপে বসেছে। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দেশের জনগণের ওপর নির্যাতন করছে। তবে সরকারের পতন আসন্ন বুঝতে পেরে পাগল হয়ে গেছে। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে যেনতেন নির্বাচনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের জনগণ বিরোধী দল ছাড়া কোন নির্বাচন করবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারণ, জনগণের কাছে তাদের কোন অবস্থান নেই। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে জনগণ দূরে সরে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব) জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ। মতবিনিময় সভা শেষে খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। খালেদার মুক্তি দাবিতে মিছিল ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর তোপখানা রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সকাল পৌনে ৮টার দিকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক আরিফুর রহমান নাসিমসহ যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিলের এক পর্যায়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে খুব অসুস্থ। সরকার প্রতিহিংসা করে তাকে অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটক রেখেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার বলার পরও তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না, এটা অমানবিক। আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা দাবি করছি। অন্যথায় শীঘ্রই বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে খালেদাকে মুক্তি দিতে হবে Ñমঈন খান ॥ আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে যুব জাগপা’র কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সরকারকে উদ্দেশ করে মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু বিএনপির জন্য নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য। কিন্তু সরকার আজ নার্ভাস হয়ে গেছে। তাই তারা আবোলতাবোল বলছে। এই সরকার যদি তাদের ভেতরের এই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তাহলে একমাত্র উপায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করে জনগণ যাকে চায় সেই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো। আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক আরিফুল হক তুহিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাগপার সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান প্রমুখ। আজ ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ॥ আজ রবিবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠক। রাত ৯টায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গঠন প্রক্রিয়া, নির্বাচনকালীন সরকার, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আন্দোলন কর্মসূচী, খালেদা জিয়ার মামলাসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
×