ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের গবেষকদের সাফল্য

ইলিশের জীবনরহস্য আবিষ্কার- খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার দ্বার

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইলিশের জীবনরহস্য আবিষ্কার- খুলে যাচ্ছে সম্ভাবনার দ্বার

বাকৃবি সংবাদদাতা ॥ ইলিশের ভৌগোলিক স্বীকৃতি বা জিআই পাওয়ার পর দেশীয় ইলিশের রেফারেন্স জিনোম প্রস্তুতকরণ, জিনোমিক ডাটাবেজ স্থাপন এবং মোট জিনের সংখ্যা নির্ণয় করার জন্য গবেষণা শুরু করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। তারই ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি এ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ সামছুল আলমের নেতৃত্বে বিশ্বে প্রথমবারের মতো উন্মোচিত হয়েছে ইলিশ মাছের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য। শনিবার সকাল ৯টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান, পূর্ণাঙ্গ ইলিশ জিনোম সিকোয়েন্সিং ও এ্যাসেম্বলি টিমের সমন্বয়ক ফিশারিজ বায়োলজি এ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ সামছুল আলম। অধ্যাপক ড. মোঃ সামছুল আলম বলেন, জিনোম হচ্ছে কোন জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াসহ সকল জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় জিনোম দ্বারা। ইলিশের জিনোমে ৭৬ লাখ ৮০ হাজার নিউক্লিওটাইড রয়েছে যা মানুষের জিনোমের প্রায় এক চতুর্থাংশ। ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জানার মাধ্যমে অসংখ্য অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে সহজেই। বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে ইলিশের স্টকের সংখ্যা (একটি এলাকায় মাছের বিস্তৃতির পরিসীমা) কতটি এবং দেশের পদ্মা, মেঘনা নদীর মোহনায় প্রজননকারী ইলিশগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্টক কি না তা জানা যাবে এই জিনোম সিকোয়েন্সর মাধ্যমে। বছরে দুইবার ইলিশ প্রজনন করে থাকে। জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এই দুই সময়ের ইলিশ জীনগতভাবে পৃথক কি না তা জানা যাবে। এমনকি কোন নির্দিষ্ট নদীতে জন্ম নেয়া পোনা সাগরে যাওয়ার পর বড় হয়ে প্রজননের জন্য আবার একই নদীতেই ফিরে আসে কি না সেসব তথ্যও জানা যাবে এই জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, এ রকম নতুন নতুন তথ্য উন্মোচনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে ইলিশের টেকসই আহরণ। ইলিশের জন্য দেশের কোথায় কোথায় ও কতটি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা সহজ হবে। দেশীয় ইলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের (ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য) ইলিশ থেকে জীনতাত্ত্বিকভাবে স্বতন্ত্র কি না তাও নিশ্চত হওয়া যাবে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করেন তারা। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডি-নোভো জিনোম এ্যাসেম্বলি প্রস্তুত হয়। ওই বছরের ২৫ আগস্ট ইলিশের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স আন্তর্জাতিক জিনোম ডেটাবেজ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে’ (এনসিবিআই) জমা করা হয়। এছাড়াও ইলিশের জিনোম বিষয়ে গবেষণালব্ধ ফলাফল দুইটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেও উপস্থাপন করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ইলিশ জিনোম সিকোয়েন্সিং ও এ্যাসেম্বলি টিমের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মোঃ সামছুল আলম এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ বজলুর রহমান মোল্যা, বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম ও ফিশারিজ বায়োলজি এ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান। জাতীয় মাছ ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর গবেষণা কাজটি গবেষকবৃন্দের নিজস্ব উদ্যোগ, শ্রম এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলদেশের মৎস্য সেক্টর পূর্ণাঙ্গ জিনোম গবেষণার যুগে প্রবেশ করেছে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন গবেষকরা।
×