ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দর্শক জোয়ারে প্রাণ ফিরেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  দর্শক জোয়ারে প্রাণ ফিরেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাফল্য পেলে যে দর্শকরা মাঠে আসে সে প্রমাণ আরেকবার মিলেছে। দীর্ঘদিন সাফল্য খরায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশের ফুটবল সাম্প্রতিক সময়ে তাক লাগানো সাফল্য পাচ্ছে। আর এতেই লম্বা সময় পর মাঠে দর্শকও ফিরতে শুরু করেছে। চলমান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এর বড় প্রমাণ। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলা দেখতে হাজার হাজার দর্শক মাঠে আসছেন। এই দৃশ্যটা নব্বইয়ের দশকে ছিল চিরচেনা। কিন্তু গত প্রায় দেড় যুগ দেশের ফুটবলে চলছিল দর্শক খরা। কিছুতেই মাঠে আসেননি দর্শকরা। ফলে বেশিরভাগ সময়ই ফাঁকা মাঠে হয়েছে ময়দানী লড়াই। কিন্তু চলমান সাফ যেন আবারও সেই পুরনো দিন ফিরিয়ে এনেছে। এখন পর্যন্ত হওয়া বাংলাদেশের দু’টি ম্যাচেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নামে দর্শকের ঢল। ভুটানের বিরুদ্ধে প্রায় ১০-১২ হাজার দর্শক এসেছিল। আর বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তো পুরো স্টেডিয়ামই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বাংলাদেশের জয় দেখতে ১৫ হাজারেরও বেশি দর্শক মাঠে জড়ো হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর দর্শকের এই জোয়ারে প্রাণ ফিরে এসেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের। পাকিদের বিরুদ্ধে ম্যাচে স্টেডিয়ামসহ আশপাশের এলাকায় রীতিমতো উন্মাদনা সৃষ্টি হয়। গ্যালারিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ফুটবলামোদীরা গ্যালারির ফাঁক-ফোকরের মাঝে দাঁড়িয়েই অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। দর্শকের বেশি চাপ ছিল পশ্চিম গ্যালারিতে। এখানে কয়েক হাজার মানুষ বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখেন। ভিআইপি, ভিভিআইপি বক্স, হসপিটালিটি বক্স, ক্লাব হাউস থেকে শুরু করে গ্যালারির প্রত্যেক জায়গা দর্শকে ভরা ছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারির বেশিরভাগ চেয়ারই ভাঙ্গাচোরা। দর্শকরা সেগুলোর ওপর বসেই সমর্থন জুগিয়েছেন তপু, জামাল, সাদদের। দর্শকের অনেকের হাতেই দেখা যায় জাতীয় পতাকা ও ব্যানার। অসংখ্য ভুভুজেলার আওয়াজ আকাশ বাতাস কাঁপাচ্ছিল। পাকিস্তানের সীমানায় আক্রমণের সময়টায় ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়ামের আকাশ-বাতাস। শুধু স্টেডিয়ামেই নয়, এই আওয়াজ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে। আয়োজকদের তথ্যমতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার। বাস্তবে অবশ্য তারচেয়ে হাজার দুয়েক বেশি হতে পারে। স্টেডিয়ামের বাইরে আরও অনেকে টিকেট না পেয়ে ফিরে গেছেন। এই ম্যাচকে সামনে রেখে দর্শকদের জন্য ৭ হাজার টিকেট রাখা হয়েছিল। সেগুলো সবই বিক্রি হয়েছে। গ্যালারির ২০ টাকার টিকেটি ৫০ টাকায়ও কিনেছে কেউ কেউ। দক্ষিণ গ্যালারিতে খেলা দেখতে মতিঝিল মডেল কলেজের ছাত্র আরিফুর রহমান বলেন, ‘প্রথমদিন খেলা দেখতে আসতে পারিনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখতে আমরা পাঁচ বন্ধু এসেছি। আমি টিকেট আগেই নিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের আরও কয়েকজন বন্ধু এসেছে। তারা ২০ টাকার টিকেট ৫০ টাকা করে কিনেছে। ম্যাচ শুরুর পর আমাদের আরও কিছু বন্ধু এসেছিল। তারা টিকেট পায়নি।’ টিকেট বিক্রেতাদের মুখেও দেখা যায় চওড়া হাসি। দক্ষিণ গ্যালারির টিকেট বিক্রেতা মারুফ বলেন, ‘প্রথমদিন খুব বেশি বিক্রি করতে পারিনি। তবে এই ম্যাচে তা পুষিয়ে নিয়েছি। ২০০ টিকেট এনেছিলাম। ভালই লাভ হয়েছে। বাংলাদেশ সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উঠলে আমাদের জন্য আরও ভাল হবে।’ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২০১৫ সালের পর এমন দর্শক জোয়ার দেখা গেছে। তিন বছর আগে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনাল দেখতে ৩৬ হাজার দর্শক মাঠে হাজির হয়েছিল। এরপর স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ করায় বর্তমানে দর্শক ধারণক্ষমতা ২৩ হাজার।
×