ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে দুই দারোগার কান্ড

চার পিস ইয়াবা হয়ে গেল ১৪ পিস !

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 চার পিস ইয়াবা হয়ে  গেল ১৪ পিস !

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানার দুই এএসআই ৩৩ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে এখন তা অস্বীকার করছেন। সেই সঙ্গে ভাঙ্গলেন গোপন চুক্তি। কথা ছিল-মাদকসহ আটক দুই যুবককে নরমাল ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হবে। কিন্তু টাকা নেয়ার পর ভোলপাল্টে চার পিস ইয়াবাসহ আটক দুই সেবনকারীকে ১৪ পিস ইয়াবা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি শুক্রবার দুপুরে মিডিয়া পাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ প্রসাশনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সূত্রমতে, নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মুখ থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার এএসআই বিধান ও সুজন সন্দেহজনকভাবে রাব্বি ও আশিক নামের দুইজনকে আটক করে। পরে তাদের দেহ তল্লাশি করে চার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আটক দুই যুবক স্বীকার করেছেন তারা সেবনকারী। আশপাশের একটি এলাকা থেকে তারা ইয়াবা ক্রয় করে বাড়িতে ফিরছিল। দুই পুলিশ অফিসার তাৎক্ষণিক আটক যুবকদের সেলফোন দিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অভিযোগ রয়েছে, তারা একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। শর্ত ছিল, সব মিলিয়ে ৩৩ হাজার টাকা দেয়া হলে তাদের সেবনকারী হিসেবে আদালতে সোপর্দ করা হবে। নতুবা মাদক বিক্রেতা হিসেবে আটক দেখানো ছাড়া উপায় নেই। ওই দুই যুবকের পরিবারের দাবি, দুই পুলিশ অফিসার যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওই রাতেই এএসআই বিধানের হাতে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় এএসআই সুজনও পাশে ছিলেন। সকালে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, কথা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। পরে আদালতে নথি উত্তোলন করে দেখা যায় আটকের সময় জব্দকৃত চার পিসের পরিবর্তে ১৪ পিস ইয়াবা দিয়ে উভয়কে মাদক বিক্রেতা হিসেবে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আটক রাব্বির এক ঘনিষ্ঠ স্বজন জানান, আটক দুইজনকে থানা অভ্যন্তরে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেখানো হয় যে, তারা মাদক বিক্রেতা এবং ১৪ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে। বিষয়টি মিডিয়া কর্মীদের কাছে পৌঁছানোর পর ওই দুই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই তথ্য বানোয়াট বলে দাবি করা হয়েছে। একপর্যায়ে অর্থ নেয়ার প্রসঙ্গ তুললে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে আটককৃতদের পারিবারিকভাবে ওই দুই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি প্রদর্শন করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আটককৃতরা মাদক বিক্রেতা নয়; সেবনকারী। চুক্তি অনুযায়ী তাদের দুইজনকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল ওই দুই পুলিশ অফিসার। কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএম আপোস না করায় ওই দুই এএসআই তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারেননি। আবার অর্থ ফেরত দিতেও রাজি হয়নি। একপর্যায়ে আটককৃতদের কাছ থেকে চার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হলেও তাদের ১৪ পিস ইয়াবাসহ আটক দেখিয়ে এসআই শামীম এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী হন।
×