ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

সেতুর কাজ শেষ না করেই দেড় কোটি টাকার বিল উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  সেতুর কাজ শেষ না করেই দেড়  কোটি টাকার বিল উত্তোলন

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে ॥ বেইলি ব্রিজের কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত দেখিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে আগাম বিল পাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ঢাকার ‘রানা বিল্ডার্স’। ঠিকাদার ধীরগতি ও নিম্নমানের কাজ করলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। নির্ধারিত সময়েও ব্রিজের কাজ শেষ না করায় ৭ ইউনিয়নের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। কর্তৃপক্ষের দাবি অর্থবছর শেষ হওয়ায় আগাম বিল উত্তোলন করা হলেও পুরো টাকা ঠিকাদারকে দেয়া হয়নি কাজ শেষ না হওয়ায়। ফলে সরকারের কোন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। অভিযোগে জানা যায়, ২০১৭ সালের বন্যায় নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের মন্নেয়ার পাড় নামক স্থানে সড়ক ও জনপদের বিভাগের ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু ভেঙ্গে যায়। উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কালিগঞ্জ, ভিতরবন্দ, কচাকাট, নুনখাওয়া, কেদার, নারায়ণপুর এবং মাদারগঞ্জ ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ। সেতু না থাকায় মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ নৌকা ভাড়া ও কুলি খরচ। যোগাযোগের সঙ্গে দ্রব্যমূল্যেরও দাম বেড়ে গেছে বিচ্ছিন্ন এই জনপদে বসবাসরত মানুষের। স্থানীয়ভাবে ড্রাম দিয়ে ভাসমান সেতু নির্মাণ করে কোন রকমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে মানুষজন। ভাসমান সেতুতে পারাপারের সময় নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় চলাচলকারীদের। জনসাধারণের দুর্ভোগ কমানোর জন্য কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগ প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বেইলী ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। গত অর্থবছরে ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যরে বেইলী ব্রিজ নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার রানা বিল্ডার্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঢাকার রানা বিল্ডার্স কাজ পেলেও সাব ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয় কুড়িগ্রামের বেলাল কনস্ট্রাকশনকে। জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সময় পেরিয়ে গেলেও ব্রিজের এক চতুর্থাংশ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অথচ জুন মাসেই কাগজ-কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিরুদ্ধে বিল পরিশোধ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বিল পাওয়ায় বেইলী ব্রিজের কাজের মান ও ধীরগতি নিয়ে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ, ফজলু মিয়া, বেলাল হোসেন, আব্দুস সালাম, ময়না বেগম, সুমি আক্তার বলেন, বন্যার সময় ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে এই এলাকার মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ভোগ কমাতে একটি বেইলী ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করলেও তা অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। ব্রিজ নির্মাণ সংক্রান্ত কোন তথ্য সংম্বলিত সাইনবোর্ড নেই সাইড এলাকায়। এজন্য কাজের গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে কিনা আমরা সাধারণ মানুষ জানতেও পারছি না। তবে শুনেছি ৬০/৭০ ফিট পাইলিং হবার কথা অথচ সেখানে সর্বোচ্চ ৫০ ফুট পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। কিছু সিসি ব্লক তৈরি হচ্ছে সেটারও মান নিয়ে সংশয় রয়েছে। অফিসের লোকজন মাঝে মধ্যে এলেও তারাও আমাদের কিছুই জানায় না। সরেজমিন তদন্তে ঠিকাদারের প্রতিনিধি ফখরুল ইসলামের দেখা হলেও তিনি সেতুর বিষয়ে কোন তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায় তিনি সংবাদকর্মীদের ওপর চড়াও হন। এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসতে শুরু করলে অবস্থা বেগতিক দেখে সটকে পড়েন তিনি। সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-প্রকৌশলী মজনু মিয়া এ বিষয়ে বলেন, ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণাধীন রয়েছে। এখানে সেতুর সম্মুখে এক হাজার ২২০টি সিসি ব্লক দেয়া হবে। আরও বিস্তারিত জানতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন মোবাইলে জানান, বেইলী সঙ্কট থাকায় সেতুর কাজে কিছুটা ধীর গতিতে হচ্ছে। তবে বেইলী দু-একদিনের মধ্যে এ ব্রিজের কাজ সমাপ্ত হবে। আগাম বিল প্রদান সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থবছর শেষ হবার কারণেই এটা করা হয়েছে। তবে পুরো অর্থ দেয়া হয়নি এখনও ৬০ লাখ টাকা আমাদের কাছে জমা আছে। সরকারী নিয়ম-নীতি মেনে এবং প্রকল্পের কাজ যথা সময়ে শেষ করার লক্ষ্যে এসব করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই।
×