ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় গ্রামীণ জীবনে উন্নত স্যানিটেশন ও সুপেয় পানি

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 বগুড়ায় গ্রামীণ জীবনে উন্নত স্যানিটেশন ও  সুপেয় পানি

সমুদ্র হক, বগুড়া ॥ টেকসই উন্নয়নের (এসডি) ১৭টি অভীষ্টের ৬ষ্ঠ অভীষ্ট ‘ক্লিন ওয়াটার এ্যান্ড স্যানিটেশন’ অর্জনে বগুড়ায় দশটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ২১ হাজার পরিবার স্যানমার্কস নামের এক কর্মসূচীর আওতায় এসেছে। তারা এখন নগরবাসীর মতো সাওয়ারের (ঝর্ণা) বাথরুম ও বিশেষ ধরনের ফ্লাসের স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে। সুপেয় পানির জন্য হস্তচালিত বিশেষ ধরনের ভার্টিক্যাল টিউবওয়েলের পাশাপাশি অনেকে গৃহস্থ পরিবার সাবমার্জিবেল পাম্পে পরিষ্কার পানি পান করছে। জেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই) সূত্র জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে জেলার সকল গ্রামের মানুষ এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা এসডিজির ক্লিন ওয়াটার এ্যান্ড স্যানিটেশন অর্জনে সক্ষম হবে। অনেক আগেই দেশের শতভাগ পরিবার স্যানিটেশনের আওতায় এসেছে। তবে নগরীর মতো স্যানিটিারি ল্যাট্রিন ব্যবহারের পর ফ্লাসের পরিবর্তে পানি ঢেলে দেয়া প্রথা এখনও গ্রামের অনেক পরিবারে আছে। এই ব্যবস্থারই উন্নতকরণ করা হচ্ছে। যাতে বিশেষ ব্যবস্থায় অল্প পানিতে ফ্লাসের কাজ করে। নগরীর মতো স্যানিটেশনের একই কক্ষে থাকছে গোসলখানা (বাথরুম)। যা গ্রামের অনেক পরিবারে এখনও নেই। গ্রামের সচ্ছল পরিবারগুলো নিজ উদ্যোগেই জীবন মান উন্নয়নের ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। পাশাপাশি সরকারও গ্রামের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে। এর একটি হলো- স্যানিটেশন মার্কেট সিস্টেম (স্যানমার্কস)। ডিপিএইচই সূত্র জানায়, তারা মাঠ পর্যায়ে উন্নত, টেকসই স্যানিটেশন সেবা পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৬টি জেলায় স্যানমার্কস প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যার মধ্যে বগুড়া জেলা অন্যতম। এই প্রকল্পের সফলতার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে নতুন একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির ৬ষ্ঠ অভীষ্ট অর্জন সম্ভব হবে। বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুজ্জামান জানান, বর্তমানে দশটি উপজেলার ৯৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ২০ হাজার ৯শ’ ৭৮ পরিবারের প্রায় এক লাখ মানুষ টেকসই উন্নত স্যানিটেশনের আওতায় এসেছে। এ ছাড়াও স্যানমার্কস প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল ৫শ’ ৬২ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার মানুষের নিকট উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে এই প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুপেয় পানির জন্য বিশেষ ধরনের ভার্টিক্যাল টিউবওয়েল বসিয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন বিশেষ ফ্লাস সুবিধাসহ স্বাস্থ্যসম্মত প্যান ব্যবহার করছে। যা ‘ছাতুপ্যান’ নামে অধিক পরিচিত। এদিকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্যানিটেশন বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নে ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগিতায় ডিপিএইচইর অধীনে একটি বেসরকারী সংস্থা কাজ করছে। তারা স্বল্প ব্যয়ের ছাতুপ্যান তৈরি ও বিপণন করছে। বগুড়া সদর উপজেলার নামুজার টেংড়া আদর্শ গ্রাম, নন্দীগ্রামের বুড়ইল ইউনিয়নের কদমকুড়ি গ্রাম ও ভাটরা ইউনিয়নের চাকলমা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বগুড়ার সুধীজন বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুপেয় পানি ও উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এসডিজি অর্জনের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি। সারাদেশে এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা দরকার, এমনটি মনে করেন তারা।
×