ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুজন মাহাবুবের লাইভ পারফর্মেন্স আর্ট ‘মানুষ সময়ের কৃতদাস’

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 সুজন মাহাবুবের লাইভ পারফর্মেন্স আর্ট ‘মানুষ সময়ের কৃতদাস’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পী সুজন মাহাবুব ভালবাসেন প্রকৃতিকে, প্রকৃতির সৌন্দর্যকে। তিনি একই সঙ্গে অভিনয়-নৃত্য-সঙ্গীত ও ভিজুয়াল আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে নিজেকে ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাছন্দ্যবোধ করেন। ভিজুয়্যাল আর্টিস্ট হিসেবে পথচলায় শিল্পী সুজন মাহাবুব পারফর্মেন্স আর্ট নিয়ে চর্চা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের ১৮তম আসরে অংশ নিয়েছেন। ‘লাইভ স্ট্রিম’ শিরোনামে পারফর্মেন্স আর্টের প্যাভিলিয়নে গত ৩ সেপ্টেম্বর তার ‘মানুষ সময়ের কৃতদাস’ শিরোনামের পারফর্মেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়। আজকের দিনের এই মানুষগুলোর মাঝে অনুভূতি কতটুকু কাজ করে? সময়গুলোর গুরুত্বটুকু তাদের মাঝে নাড়া দেয়? অর্থময় বোধ তৈরি করে আদৌ? শিল্পী সুজন মাহাবুব সেই অনুভূতির খোঁজ করেছেন। তার কাজের অংশ হয়ে থাকে রোজকার মানুষ, নিত্যবহতা সময়। নিয়মিত ও প্রাসঙ্গিক পরিবেশনা তার পারফর্মেন্সে স্বতন্ত্র নিয়ে আসে। ‘মানুষ সময়ের কৃতদাস’ পারফর্মেন্সটিতে শিল্পী সুজন মাহাবুব সেই সময়কে নিয়েই আবারও হাজির হয়েছিলেন শিল্পপিপাসু দর্শকদের সামনে। যেখানে তিনি নিজেকে লোহার শিকলে আবদ্ধ করেছিলেন এক বৃত্তের মাঝে। যেই বৃত্ত হয়ে উঠেছিল ঘড়ির প্রতীক। শিল্পী সুজন আটকা পড়েছিলেন সেই ঘড়িতে। সময়ের কৃতদাস হয়ে। যেই সময় আমাদের রোজকার জীবনকে চালিত করে। যেই সময়কে আমরা প্রতিনিয়ত মেনে চলি যমের মতো, হারিয়ে ফেলি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ। হারিয়ে ফেলি নিজস্বতা। সময়ই যেন সবটুকু আলো কেড়ে নেয় জীবন থেকে। সব নজর সেই ঘড়ির কাটার দিকে, ঘণ্টার কাটায়, মিনিটের কাটায়, সেকেন্ডের কাটায়। সেই প্রতীকী ঘড়ির কাটার উপস্থাপনা হিসেবে শিল্পী সুজনের সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে পারফর্মেন্স করেন শিল্পী জিনিয়া জাফরিন। লাল পোশাকে যিনি ভায়োলিন বাজিয়ে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার ভবনে সকলের কাছে জানিয়ে গেছেন সময়ের উপস্থিতির কথা। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এই পারফর্মেন্সটির সমাপ্তি ঘটে রাত ৮ ঘটিকায়। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টাব্যাপী বিস্তৃত এই পারফর্মেন্সে শিল্পী সুজন পরিধান করেছিলেন কালো পোশাক। সময়ের কাছে শিল্পী নিজের সীমাবদ্ধতা প্রকাশে নিজেকে মুক্ত করার বৃথা চেষ্টা করেন। বাস্তবতার নিষ্ঠুরতার মতই তিনি যে বেঁধে ফেলেছিলেন নিজেকে!! কিসে আর মুক্তি? ‘মানুষ সময়ের কৃতদাস’ এ শিল্পী সুজন মাহাবুব আরও বলতে চেয়েছেন, মানব জীবনের শৈশব, যৌবন, বার্ধক্যের ঘূর্ণীয়মান পরিক্রমার গল্প। ঠিক একই ভাবে মানুষ যে সময়ের কাঁটা ব্যতিরেকে চলতে পারে না সেই গল্পটুকুও বলেছেন। শিল্পী সুজন মাহাবুবের জন্ম বাংলাদেশের এক অপূর্ব দ্বীপ মনপুরায়। প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠার জীবনের এই আত্মিকতা শিল্পী সুজনের মনে সুদৃঢ় প্রভাব ফেলেছিল যার অনুপ্রেরণাতেই তার মনে ঠাঁই পেয়েছে বাংলার সংস্কৃতি। ২০০৯ সালে কাজ করেছেন লাল শিল্পী দলের সঙ্গে। সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৮ সালে কলকাতা আর্ট ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছেন। নিয়মিত সদস্য হিসেবে কাজ করেন লোকনাট্য থিয়েটারে। পেশাগত জীবনে কাজ করছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। বাংলার সংস্কৃতির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন প্রতিনিয়ত। সুন্দর সোনার বাংলা গড়বেন এই প্রত্যাশায়।
×