ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্যমান

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্যমান

মাছ ও পোল্ট্রি খাদ্যের মান বহাল রাখার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যা সুসংবাদ বৈকি। দীর্ঘদিন ধরে নির্ধারিত কোন মান ছাড়াই উৎপাদন হচ্ছে এই খাদ্য। যা দেশের বিভিন্ন মাছের খামার ও পোল্ট্রিতে ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে পোল্ট্রি মাংস, ডিম ও মাছের মান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে জনমনে। দীর্ঘদিন পর হলেও এ উদ্বেগ কাটাতে নির্ধারিত মান অনুযায়ী এই খাদ্য উৎপাদন বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন তথা বিএসটিআই। এবার একই সঙ্গে মান নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এর অংশ হিসেবে খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতে অভিযান চালানো হবে। অভিযানের আগে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে মান অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছে বিএসটিআই। সংস্থাটির মতে, নির্ধারিত মান নিশ্চিত করে মাছ ও পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন করলে হাঁস-মুরগি ও মাছে দূষণ রোধ হবে। ব্যবসায়ীরাও এই উদ্যোগে সাড়া দিতে প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে, যা সুখবর বলা যায়। বিএসটিআই পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্যসহ ২৮টি পণ্যের বিক্রি, বিতরণ ও বাণিজ্যিক প্রচারণার আগে মান নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করে গত জুলাই মাসের গোড়াতে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রস্তুতি নিতে কারখানাগুলোকে দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। তিন সেপ্টেম্বর থেকে বিএসটিআই’র মান সনদ ছাড়া এসব পণ্য বিক্রি করা যাবে না। বর্তমানে দেশের মাত্র একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় মান সনদ নিয়ে খাদ্য উৎপাদন করে আসছে। এছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই’র নির্ধারিত মানে উৎপাদনের জন্য সনদ পেতে আবেদন করেছে। এর বাইরে দেশের ৭৬টি কোম্পানির মাছ ও মুরগির খাদ্য উৎপাদনের ২০০ কারখানার কোন সনদ নেই। এছাড়া যত্রতত্র গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ও মাঝারি দেড় শতাধিক কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে মানহীন খাদ্য। তবে দেশী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের নির্ধারিত মান অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করছে। এসব কারখানায় আলাদা পরীক্ষাগার ও পরীক্ষক রয়েছেন। তাদের দাবি এসব উৎপাদিত খাদ্য বিএসটিআই’র মানের কাছাকাছি রয়েছে। এতদিন দেশের মাছ ও পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত মান ছিল না। এতে রাসায়নিক মিশ্রিত ট্যানারির বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ও এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ রয়েছে। এ বিভ্রান্তির কারণে পোল্ট্রি মুরগি, ডিম ও চাষের মাছ খাওয়া নিয়ে ক্রেতাদের অনীহা তৈরি হয়। বাচ্চা মুরগি ও ছোট মাছের পোনার ক্ষেত্রে এক মানের খাদ্য এবং মার্কারি ও বড় হলে ভিন্ন মানের খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। কারখানাগুলোর মান যাচাইয়ের কাজ চলতি সেপ্টেম্বর মাসে শুরু করতে যাচ্ছে বিএসটিআই। বর্তমানে পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্যে উপকারী ও ক্ষতিকর দুটি উপাদানই রয়েছে। বেশকিছু কারখানায় ক্ষতিকর খাদ্য উৎপাদন হয়। এসব নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সারাদেশে অভিযান চালিয়ে মান তদারকি জোরদার করবে বিএসটিআই। এছাড়া অবৈধ ও অনিবন্ধিত খাদ্যের মিলগুলো এবং ছোট খাদ্য উৎপাদনকারীদের কার্যক্রম বন্ধ করবে। এতে নিম্নমানের খাদ্যের উৎপাদন ও বিপণন কঠোরভাবে দমন করবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত প্রায় তিন শ’টি খাদ্য কারখানায় যথাযথ মূল্যায়নের পর এত সময়ে সনদ দেয়া সম্ভব হবে কি না। তাছাড়া বিএসটিআই’র মান এবং মানদ- প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য খাদ্য বিধিমালায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার তারতম্য রয়েছে। উৎপাদকরা কোন্ বিধি অনুসরণ করবে তাও স্পষ্ট হওয়া উচিত। মানুষের খাদ্য ব্যবস্থা নিরাপদ ও নিরাময়যোগ্য করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব কোনভাবেই গ্রাহ্য করার নয়। দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণই কাম্য।
×