ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় ইস্পাত

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সম্ভাবনাময় ইস্পাত

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি বড় নির্দেশক হলো জনপ্রতি ইস্পাতের ব্যবহার কত সেটি। দেশে পাঁচ বছরের ব্যবধানে জনপ্রতি ইস্পাতের ব্যবহার ২৫ কেজি থেকে বেড়ে ৪৫ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। এটি সত্য যে, দেশে ইস্পাতের বাজার বাড়ছে। সরকারের সুরক্ষা নীতির কারণে ব্যবসায়ীরাও এই খাতে বিনিয়োগ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। তবে এটাও বাস্তবতা যে, ইস্পাত তৈরির কোন কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হয় না। এটি অনেকটাই আমদানিনির্ভর শিল্প হিসাবে রয়ে গেছে। তারপরও এর সম্ভাবনা বিপুল। জাপানেও ইস্পাত পণ্যের মৌলিক কাঁচামাল আকরিক লোহা নেই। তারপরও দেশটি বিশ্বের প্রায় সাড়ে চার শতাংশ ইস্পাতের বাজার ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের পক্ষেও উন্নতি করা সম্ভব। সম্প্রতি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ইস্পাত সম্মেলনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি যে, বাংলাদেশে ইস্পাতশিল্পের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বলাবাহুল্য, সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ইস্পাতের রয়েছে বড় অবদান। দেশকে আরও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে হলে ইস্পাতের ব্যবহার বাড়াতেই হবে। আর সেই ইস্পাতের বড় অংশ যদি দেশেই প্রস্তুত করা সম্ভব হয় তাহলে সেটি অর্থনীতির জন্য আরও ইতিবাচক হয়ে উঠবে। চট্টগ্রামে দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক স্টিল কনফারেন্স ‘বাংলাদেশ স্টিল-২০১৮’ সফল হয়েছে বিশ্বের উনিশটি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে। সম্মেলনে দেশ ও বিদেশে ব্যবহৃত লৌহ ও ইস্পাত পণ্যের বিশ্বব্যাপী সম্ভাবনা, গুণগতমান, বর্তমান টেকসই প্রযুক্তি, আধুনিক মার্কেটিং পলিসি ইত্যাদি বিষয়ে বিদেশী ও দেশী বিশেষজ্ঞগণ বক্তব্য রাখেন। তাছাড়া এ শিল্পের ওপর বিশেষজ্ঞগণ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলি, বিএসআরএম, আরএসআরএম, আবুল খায়ের গ্রুপসহ অনেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান সরাসরি অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনের উদ্বোধক যথার্থই বলেছেন, স্টিল ইন্ডাস্ট্রির কোয়ালিটি, ভ্যালু ক্রিয়েশন, বাজার সম্প্রসারণে এ সামিট ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কেননা আমাদের দেশে জনপ্রতি স্টিল কনজাম্পশান ১০০ কেজি। উল্লেখ করা দরকার সরকারের উদ্যোগে সড়ক ও রেলসহ অবকাঠামো খাতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আবাসন খাতে গতি ফেরায় প্রভাব পড়ছে ইস্পাত শিল্পে। এবারের বাজেটেও ইস্পাত খাতকে কিছু সুবিধা দেয়া হয়েছে। রডের উৎপাদন ব্যয় কমাতে এর কাঁচামাল ফেরো এ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে এবং স্পঞ্জ আয়রন আমদানিতে সুনির্দিষ্ট আমদানি শুল্ক প্রতিটনে এক হাজার টাকা থেকে ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় এ খাতের নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করছেন। আসছে বিদেশী বিনিয়োগও। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে আরও গতিশীলতা আনা, কাঁচামাল আমদানি সহজ করা, রফতানি সুবিধা বাড়ানো এবং ব্যাংক ঋণের সুদহার এবং কর্পোরেট ট্যাক্স আরও কমানো হলে ইস্পাত শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সরকার ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবনাসমূহ উদারতার সঙ্গে বিবেচনা করবেন। ইস্পাতের চাহিদা বাড়ায় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়াচ্ছে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা। নতুন বিনিয়োগ নিয়েও আসছে অনেকে। চট্টগ্রামভিত্তিক বৃহৎ শিল্প গ্রুপ পিএইচপি দেড় হাজার কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করছে ইস্পাত খাতে। মোস্তফা হাকিম গ্রুপ বার্ষিক দুই লাখ টন টিএমটি এক্সট্রিম রড উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে ১২ একর জায়গার ওপর নতুন ইস্পাত কারখানা করেছে। অর্থাৎ এটি স্পষ্ট যে, ইস্পাতে আগ্রহ বাড়ছে। ফলে এ কথা বললে ভুল হবে না যে, বর্তমানে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে সরকারের নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকলে ইস্পাতশিল্পের সুবর্ণ অগ্রযাত্রা অদূর ভবিষ্যতে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
×