ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আদালতকেও কারাগারে বন্দী করেছে সরকার ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আদালতকেও কারাগারে বন্দী করেছে সরকার ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকার আইন-কানুনের কোন ধার ধারে না বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার আদালতকেও কারাগারে বন্দী করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সংগঠনের সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন অভিযোগ করেন সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার পরিবর্তে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রিজভী বলেন, বুধবার হুইল চেয়ারে করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে স্থাপিত আদালতে নিয়ে আসা হয়। তার হাত-পা নাড়াতে অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে রীতিমতো কাঁপছিলেন, চেয়ার থেকে দাঁড়াতে পারছিলেন না। বারবার দাবি করা সত্ত্বেও তার সুচিকিৎসায় সরকার অবহেলা করেছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তার যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়নি। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তার সুচিকিৎসার দাবি বারবার উপেক্ষা করা হয়েছে। বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকলেও জোর করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এতে সরকারের আক্রোশের মনোবৃত্তি ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, পরিত্যক্ত কারাগারে খালেদা জিয়াকে যে কক্ষটিতে রাখা হয়েছে, তা বসবাসের অনুপযোগী। খালেদা জিয়া যাতে সারাক্ষণ কষ্ট পান সে জন্যই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার ওপর যে অবিচার চলছে, তা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। জনগণের কাছে একদিন এর জবাব ক্ষমতাসীনদের দিতে হবে। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, তাকে ছাড়া আমরা কোন নির্বাচনে যাব না। রিজভী বলেন, বিপুল জনসমর্থিত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখে মূলত গণতন্ত্রকেই বন্দী করে রেখেছে। যে মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছিল, সেই মামলায় তিনি জামিনে আছেন। তাকে এখন বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে কারাগারে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকারের উদ্দেশ্য দুটি। একটি হলো একের পর এক মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজার স্তূপ বৃদ্ধি করা। আরেকটি উদ্দেশ্য, দিনের পর দিন খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে শারীরিক অসুস্থতার আরও অবনতি ঘটিয়ে তাকে বিপর্যস্ত করা। তাই বারবার দাবি করা সত্ত্বেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। রিজভী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় হবে। এ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের নীরব ক্ষোভ প্রতিদিনই বাড়ছে। কারণ এ সরকার বিভিন্নভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কাজেই জনগণের সঙ্গে প্রতারণার মাসুল সরকারকে দিতেই হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো জালিয়াতির নির্বাচন হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চায় না। সরকার বিরোধীদল দমনে নতুন করে গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ঈদ-উল আজহার কয়েকদিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির ১ হাজার ৫শ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং ১ হাজার ২শ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১১ হাজার নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। তিনি বলেন, একতরফা ভোটারশূন্য নির্বাচন করার জন্য শেখ হাসিনা সারাদেশে বিরোধীদল শূন্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। যার ফলে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া, পরিবার ছাড়া ও পলাতক জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ। সরকার খালেদাকে সুচিকিৎসার পরিবর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে-জয়নুল ॥ সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার পরিবর্তে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। জয়নুল আবেদীন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হলে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের চরম ভরাডুবি হবে। এ আশঙ্কা থেকেই বর্তমান সরকার খালেদা জিয়া ও তার দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ অবস্থায় কারা অভ্যন্তরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে তিনি কারাগারের ভেতর যে কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। জয়নুল আবেদীন বলেন, বুধবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য ছিল। আমরা খালেদা জিয়াসহ অন্য দুই আসামির আইনজীবীরা যথানিয়মে যথাসময় বকশীবাজার আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালতে উপস্থিত হই। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি বকশীবাজার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের পরিবর্তে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির জন্য অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা হয়েছে। আমরা গেজেট প্রজ্ঞাপনে দেখলাম আদালত স্থানান্তরের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালত কারাগারের ভেতরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
×