ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাবাসনে রাজি না হতে নানা উস্কানি, হুমকি

মুখোশপরা কালো পোশাক হাতে অস্ত্র- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরা কারা?

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মুখোশপরা কালো পোশাক হাতে অস্ত্র- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরা কারা?

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বেআইনী অস্ত্র ও মুখোশধারীদের তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে এরা কারা? প্রায় প্রতিরাতেই বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে এরা বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কোন অবস্থাতেই মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত না হওয়ার জন্য রীতিমতো হুমকি ধমকি প্রদান করছে। কোন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসিত হতে চাইলে তাদেরকে হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এমনিতেই কিছু আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিরোধিতার অপতৎপরতা লক্ষণীয়ভাবে দৃশ্যমান। গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলীর পক্ষে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসন শীঘ্রই শুরু হবে। তবে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কোন দিনক্ষণ প্রকাশ করেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারীদের প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতা ইতিপূর্বেকার চেয়ে আরও একধাপ বেড়েছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। অনুসন্ধান চালানো হলে নিবন্ধিতদের মধ্যে দেড় লাখেরও বেশি ক্যাম্পে পাওয়া যাবে না। এরা প্রতিদিন বিভিন্নভাবে ক্যাম্প ছেড়ে নানা স্থানে যাওয়া আসা করছে। কেউ কেউ স্থায়ীভাবে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উখিয়া টেকনাফের ৩০ রোহিঙ্গা শিবিরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যে তৎপরতা তা সকাল থেকে প্রতিদিন বিকেল পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর ক্যাম্প অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন অবস্থান থাকে না। ঠিক এই সময়ের পর রাত অবধি কালো প্যান্ট ও টি-শার্ট পরিহিত এবং অস্ত্রসজ্জিত বিভিন্ন ব্যক্তির তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্যাম্প অভ্যন্তরে পৃথক পৃথকভাবে থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছে গিয়ে এরা হুমকি ধমকি দিচ্ছে এই বলে যে, রোহিঙ্গাদের কেউ মিয়ানমারে ফিরে যাবে না। যাওয়ার চেষ্টা করলে মেরে ফেলা হবে। এ ঘটনার পর থেকে যেসব রোহিঙ্গার মনে প্রত্যাবাসনের অভিপ্রায় ছিল তাও যেন উবে যাচ্ছে। এমনিতেই রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত হতে অনিচ্ছুক। এর প্রধান কারণ জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তা। এছাড়া ফেলে আসা বাড়ি ঘরের অস্তিত্ব যেমন নেই, তেমনি জায়গা জমিও বেদখল হয়ে গড়ে উঠেছে নানা স্থাপনা। সুতরাং সে দেশে গেলেও তাদেরকে ক্যাম্পেই থাকতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে সেনা সদস্যদের কঠোর প্রহরায়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের পক্ষে না গিয়ে নেতিবাচক মনোভাবে এগোচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেসব রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে এরা নিয়মিত একদিকে ত্রাণসামগ্রী যেমন পাচ্ছে, তেমনি এদের অনেকে কক্সবাজার শহরসহ সন্নিহিত এলাকাগুলোতে আয় রোজগারের বিভিন্ন খাতে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। কক্সবাজারের হোটেল, চা দোকান, বাসা বাড়ি, যানবাহনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমের কাজেও এদের সংখ্যা বহু। প্রশ্ন উঠেছে, নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা কিভাবে ক্যাম্পের বাইরে আসছে। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন-পুরনো মিলিয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার গতিবিধি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ এখনও একটি অসম্ভব ব্যাপারে পরিণত হয়ে আছে। ফলে বিভিন্ন ফাঁকফোঁকরে ক্যাম্পের বাইরে চলে আসার সুযোগ নিচ্ছে। আবার অনেকে চিকিৎসক ও এনজিও সংস্থার কাছ থেকে চিকিৎসার একটি কাগজ সংগ্রহ করে প্রকাশ্যে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখিয়ে কক্সবাজার শহরমুখী হচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে কেউ কেউ পুনরায় ফিরে যাচ্ছে। আবার অনেকে অন্যত্র স্থায়ী অবস্থান গেড়ে নিচ্ছে। নিবন্ধিত হিসেবে ক্যাম্পে না থাকলেও লিস্টেড পরিবারগুলোর জন্য যে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয় তা ঠিকই তারা নিয়ে নিচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। এর পাশাপাশি গণহত্যা ও বর্বরতার বিচারসহ অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে কি হবে বা হতে পারে তা একমাত্র ভবিষ্যতই বলে দেবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে প্রত্যাবাসন শুরু নিয়ে। সে লক্ষ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে একটি ঘোষণাও এসেছে।
×