ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে বক্তব্য আমার নিজস্ব ॥ মুহিত

ইউনূসের জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইউনূসের জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলগুলোর করা অভিযোগকে ‘বোগাস’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, তাদের দাবি যুক্তিযুক্ত নয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে একটি দল অংশ নেয়নি, নির্বাচন হয়েছে। তারা তো কোন মামলাও করেনি, তাহলে এ ধরনের অভিযোগ কেন? অল আর বোগাস। তিনি আরও বলেন, ইউনূস সাহেবকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণে আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকে ইউনূস সাহেবের সময় মানুষ টাকা নিয়ে মুরগির ব্যবসা, হাঁসের ব্যবসা ইত্যাদি করত। তবে ব্যাংকটির অবকাঠামো পরিবর্তনের ফলে যারা ক্ষুদ্র ব্যবসা করত, তারা এখন বড় ব্যবসা করছে। তাদের এখন এন্টারপ্রাইজ আছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারের ডিভিডেন্ড প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকটির ২০১৭ সালের লভ্যাংশ ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। ড. ইউনূস সরে যাওয়ার পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। ড. ইউনূসের বিদায় লগ্নে অনেকেই ব্যাংকটির ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে ব্যাংকের মূলধন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুনাফার হারও বেড়েছে। সম্প্রতি নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েছে ব্যাংকটির। প্রসঙ্গত, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক ঐক্য ও মোর্চা তৈরির উদ্যোগ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রধান আ স ম আবদুর রবের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে রাজনৈতিক মোর্চা যুক্তফ্রন্ট। সাংবাদিকরা যুক্তফ্রন্টের দাবি দাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুহিত বলেন, অল আর বোগাস। তাদের দাবি যুক্তিযুক্ত নয়। ২০০৮ সালে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল। তখন সবাই অংশগ্রহণ করেছিল। নির্বাচনের সিস্টেমসহ সবকিছু এখনও ভাল। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে একটি দল অংশ নেয়নি, তারপরও নির্বাচন হয়েছে। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন কি না সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আর নির্বাচন করছি না। আমার আসনে আমার ভাইয়ের জন্য মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সুপারিশ করব। আগামী ডিসেম্বর মাসে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনী সরকারে থাকব কি না, জানি না। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনকালীন সরকার কবে হবে, সেটাও প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন। এই সরকারের বিষয়ে যে ঘোষণাটি আগে দিয়েছিলাম, সেটি ছিল আমার নিজস্ব মতামত। এ সময় আলোচনায় ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ইউনূস সাহেবকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বাংলাদেশকে কোটামুক্ত জিএসপি সুবিধা দেয়নি। নিজের পদ আকড়িয়ে রাখার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে সরকারকে ক্রমাগত চাপের মুখে রেখেছিল। বিশেষ করে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী এবং বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট তার পক্ষে ক্রমাগতভাবে কথা বলেছেন। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকে তার আধিপত্য রক্ষার জন্য কোর্টে মামলাও করেছেন। আমরা তাকে একটি সম্মানজনক পদে রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলাম তিনি সেটা না মেনে নানাভাবে প্রেসার দিয়েছেন। তবে এরপরেও আমরা এগিয়ে গিয়েছি। গ্রামীণ ব্যাংকও এখন ভাল চলছে। এটা নিয়ে কোন সমস্যা নাই। তিনি বলেন, ইউনূস সাহেবের সেই সময় তার ব্যাংকের সদস্যরা কিস্তির টাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায় করলেও ড. ইউনূস সাহেব দেশে ২৩টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু ইউনূস সরে যাওয়ার পর ব্যাংকটি ভাল চলছে। ভাল মুনাফা করছে। আগামীতে ব্যাংকটি আরও ভাল করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১৭ পর্যন্ত সরকার কর্তৃক সরকার প্রদত্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সালের লভ্যাংশের ছয় কোটি ২৪ লাখ টাকার চেক অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবুল সাহাসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×