ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-১৭ আসনে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু

লাঙ্গলে ভোট দিন, আমরা নিরাপত্তা দেব ॥ এরশাদ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

লাঙ্গলে ভোট দিন, আমরা নিরাপত্তা দেব ॥ এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজ আসনে জনসংযোগ শুরু করলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৭ আসনে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত। সর্বশেষ ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচন বর্জন করায় আসনটি হাতছাড়া হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭সহ তিনটি আসনে প্রার্থী হতে চান এরশাদ। প্রচার অভিযানে এরশাদ বলেন, খুন-গুম আর রক্তে দেশ আজ ভাল নেই। মানুষ এসব বাস্তবতার কারণে এখন ভীতসন্ত্রস্ত। আগামীর রাজনীতি ও রাজনীতির ভবিষ্যত সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে সবাই অনুমান করতে পারছে ভাল কিছু হয়ত অপেক্ষা করছে না। এরশাদ বলেন, স্পষ্ট প্রমাণ হয়েছে জাতীয় পার্টি ছাড়া এদেশে কেউ সুশাসন দিতে পারে না। আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত, আমরা ৩শ’ আসনেই নির্বাচন করব। কোন দল নির্বাচনে অংশ নিল কি নিল না তা দেখার সুযোগ আমাদের নেই। আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে আগেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম, এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। শাহজাদপুর, কড়াইল বস্তি ও মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগকালে এরশাদ আরও বলেন, শান্তির বাংলাদেশ এভাবে চলতে পারে না। মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে, মানুষ বাঁচতে চায়। আমরা মানুষকে বাঁচাতে পথে নেমেছি। দেশের মানুষকে শান্তি দেব-মুক্তি দেব। আমি যখন ক্ষমতা ছেড়েছি তখন চালের দাম ১০ টাকা ছিল একথা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, নিত্যপণ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল। মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণায় যারা উল্লাসিত, তারা গ্রামের খবর জানে না। মানুষের কষ্টের খোঁজ রাখে না। সবাই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত, মানুষের কষ্টের খোঁজ রাখার সময় নেই কারও। ‘খবরের কাগজ খুললেই শুধু মানুষ খুন আর রক্তের খবর এমন মন্তব্য করে সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ বলেন, ইচ্ছে করলেই এই খুন বন্ধ করা যায়। কিন্তু কারও খেয়াল নেই, কারও ইচ্ছে নেই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে। সবাই নিজের প্রয়োজনে ছুটে চলেছেন। দেশের কথা ভাববার সময় কারও হাতে নেই। যদি থাকত তাহলে এই অবস্থা চলতে পারত না। এরশাদ বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের এমপি থাকাকালে এই এলাকায় পানির কষ্ট দূর করতে চৌদ্দটি পাম্প বসিয়েছিলাম। আমরা রাস্তা-ঘাট করেছি, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করেছি। আবারও সুযোগ দিন, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে এখনও বেঁচে আছি। মানুষের দোয়ায় আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। লাঙ্গলে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা লাঙ্গলে ভোট দেবেন, আমরা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেব। আমাদের চেয়ে কেউ বেশি উন্নয়ন করতে পারেনি, কেউ পারবেও না। আমাদের উন্নয়নের কথা দেশের মানুষ এখনও মনে রেখেছে। কেউ ভোলেনি। এখনও গ্রামে গেলে মানুষ বলে এরশাদ সরকারের উন্নয়ন এখনও মনে আছে। আপনি দেশের চিত্র পাল্টে দিয়েছিলেন। সবাই জাতীয় পার্টিকে আবারও ক্ষমতায় আসার সুযোগ দেয় তাহলে দেশ ফের বদলে দেব। কোন হাহাকার থাকবে না, যন্ত্রণা থাকবে না। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পার্টি মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী, সুনীল শুভরায়, মেজর (অব) খালেদ আখতার, সফিকুল ইসলাম সেন্টু ও আমির হোসেন ভূঁইয়া এমপি। বেলা এগারোটায় বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে গাড়ি বহর নিয়ে বের হয়ে এরশাদ গুলশানের শাহজাদপুর ঝিলপাড়ে এক জনসভায় বক্তৃতা করেন। এরপর কড়াইল বস্তি সংলগ্ন আনসার ক্যাম্প মাঠ এবং মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। বুধবার দলের প্রেসিডিয়াম ও সাংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণ ও তিন শ’ আসনে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফের যদি মহাজোটে যায় তাহলে জাপার কমপক্ষে ৭০ আসন ও ১০ জন মন্ত্রী চাওয়ারও প্রস্তাব করেন অনেকে। যদিও বৈঠকে বিরোধী দলের নেতা রওশন বলেছেন, জাতীয় পার্টির কদর আছে। আমরা কারও কাছে জোট গঠনে জন্য যাব না। অন্যেরা আমাদের কাছে আসবে। আমরা যদি ভাল মনে করে তাহলে জোট গঠনের ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। তবে জোট গঠন করার বিষয়ে ন্যায্য হিস্যা আদায়ের প্রস্তাবকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এরশাদ। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভা থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিতে পারেন দলীয় প্রধান এরশাদ।
×